মামুনুল হকের ধর্ষণ মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে তৃতীয় দফায় জেরা
হেফাজতে ইসলামের বিলুপ্ত কমিটির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হকের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তাকে তৃতীয় দফা জেরা করেছেন আসামিপক্ষের আইনজীবীরা। আজ মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) দুপুরে জেলা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে এই জেরা করা হয়।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সোনারগাঁ থানার তৎকালীন পরিদর্শক শফিকুল ইসলাম। তাঁকে এ জেরা করেন আসামিপক্ষের আইনজীবীরা। আদালত আগামী ২৪ এপ্রিল জেরার জন্য পরবর্তী তারিখ ধার্য করেছেন।
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ থানায় মামুনুল হকের কথিত স্ত্রী জান্নাত আরা ঝর্ণা এ মামলা করেন।
এর আগে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে মামুনুল হককে কাশিমপুর কারাগার থেকে নারায়ণগঞ্জে আদালতে আনা হয়।
মামুনুল হকের আইনজীবী ওমর ফারুক নয়ন সাংবাদিকদের বলেন, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা শফিকুল ইসলামকে আমরা তৃতীয় দিনের মতো জেরা করেছি। জেরার সময় তদন্তকারী কর্মকর্তা আমাদের অনেক প্রশ্নের সদুত্তর দিতে পারেননি। তিনি আরও বলেন, এটা যে সাজানো মিথ্যা বানোয়াট মামলা, তদন্তকারী কর্মকর্তার দায়সারা গোছের তদন্ত ও জেরায় তা প্রমাণিত হয়েছে। তদন্তকারী কর্মকর্তাকে পুনরায় জেরার জন্য আমরা আদালতে আবেদন জানালে আদালত তা মঞ্জুর করেছেন।
আইনজীবী ওমর ফারুক নয়ন বলেন, আমরা মানবিক কারণে আসামীর জামিন শুনানি করেছি, আদালত তা পরে আদেশের জন্য রেখেছেন।
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট রকিব উদ্দিন জানান, হেফাজত নেতা মামুনুল হকের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাকে তৃতীয় দফা জেরা করা হয়েছে। তিনি বলেন, মামলাটি বিলম্বিত করার জন্য আসামীপক্ষের আইনজীবীরা তদন্তকারী কর্মকর্তাকে বার বার জেরা করেছেন। আবার আজ তারা তদন্তকারী কর্মকর্তাকে জেরা করার জন্য আদালতের কাছে সময় চেয়েছেন। সচরাচর একটি মামলায় তদন্তকারী কর্মকর্তাকে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা একদিন জেরা করলেই যথেষ্ট। অথচ তারা বার বার সময় চেয়ে বিচার কাজ বিলম্বিত করার চেষ্টা করছেন। ৪০ জন সাক্ষীর মধ্যে বাদী, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা, প্রত্যক্ষদর্শীসহ ২৬ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। বাদীরপক্ষের সবাই আদালতে সাক্ষ্য দিয়ে গেছেন।
কোর্ট পুলিশের পরিদর্শক আসাদুজ্জামান বলেন, সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে মামুনুল হককে কাশিমপুর কারাগারে পাঠানো হয়েছে। ২০২১ সালের ২৪ নভেম্বর প্রথম দফায় মামুনুল হকের উপস্থিতিতে কথিত দ্বিতীয় স্ত্রী জান্নাত আরা ঝর্ণার সাক্ষ্য নেন আদালত। একইসঙ্গে ওই বছরের ৩ নভেম্বর মামুনুল হকের বিরুদ্ধে করা ধর্ষণ মামলায় বিচারকাজ শুরুর আদেশ দেওয়া হয়।
২০২১ সালের ৩ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে রয়েল রিসোর্টে একটি রুমে কথিত স্ত্রী জান্নাত আরা ঝর্ণাসহ মামুনুল হককে অবরুদ্ধ করে ছাত্রলীগ ও যুবলীগ। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার সময় হেফাজতের নেতাকর্মীরা রিসোর্টে হামলা চালিয়ে তাদের ছিনিয়ে নেয়। ওই ঘটনার ১৫ দিন পর ওই বছরের ১৮ এপ্রিল মামুনুল হককে মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসা থেকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। ঘটনার ২৭ দিন পর ৩০ এপ্রিল সোনারগাঁ থানায় হাজির হয়ে জান্নাত আরা ঝর্ণা বাদী হয়ে তাঁর বিরুদ্ধে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা করেন। পরে ১০ সেপ্টেম্বর অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পেয়ে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। ৩ নভেম্বর মামুনুল হকের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল সেই ধর্ষণ মামলায় অভিযোগ গঠন করেন।