মন্দিরে মোদির উপহারের মুকুট চুরি, জিজ্ঞাসাবাদে পুরোহিতের সহকারীসহ চারজন
সাতক্ষীরার শ্যামনগরে যশোরেশ্বরী কালীমন্দিরের দেবী কালীর মাথার মুকুট চুরির ঘটনার প্রায় ৩৫ ঘণ্টা পর মামলা হয়েছে। মন্দির পরিচালনা কমিটির পক্ষে জ্যোতি প্রকাশ চট্টোপাধ্যায় বাদী হয়ে গতকাল শনিবার (১১ অক্টোবর) দিনগত রাত ২টায় শ্যামনগর থানায় মামলাটি করেন। মামলায় অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করা হয়। এ মামলার তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ডিবিকে।
এদিকে চুরির রহস্য উদঘাটনসহ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ইতোমধ্যে চারজনের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। তারা হলেন—মন্দিরের পুরোহিতের সহকারী অপূর্ব সাহা (৩৭), সঞ্জয় বিশ্বাস সাজু (৪০), পরিচ্ছন্নতাকর্মী রেখা রানী (৪২) ও পারুল বিশ্বাস (৪১)।
জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে মন্দিরে তালা লাগিয়ে বাড়িতে চলে যায় পুরোহিত দিলীপ ব্যানার্জী। একপর্যায়ে দুপুর আড়াইটার মন্দিরের সেবায়েতের দায়িত্বে থাকা রেখা রানী পূজার কাজে ব্যবহৃত প্লেট ও গ্লাস পরিষ্কারের জন্য মন্দিরের প্রবেশদ্বারের চাবি খোলেন। এ সময় তিনি কিছু সরঞ্জামাদী পাশের ভবনে রেখে বাকি জিনিসপত্র নিতে পুনরায় মন্দিরে ঢুকে দেবীমূর্তির মাথার মুকুট দেখতে না পেয়ে বিষয়টি সবাইকে জানান।
মন্দিরে থাকা সিসি ক্যামেরায় ধারণকৃত ফুটেজে দেখা গেছে ২৪/২৫ বছরের এক যুবক দুপুর দুইটা ৪৯ মিনিটে মন্দিরে প্রবেশ করে। এ সময় স্বাভাবিকভাবে সে মন্দিরে ঢুকে দেবীমূর্তির পিছনে দাঁড়িয়ে মুহূর্তের মধ্যে মুকুট খুলে নিয়ে টি-শার্টের মধ্যে ঢুকিয়ে নেয়। জিন্সের প্যান্ট ও সাদা টি-শার্ট পরা ওই যুবক মুকুট খুলে নেওয়ার আগে পাশে কেউ রয়েছে কি না পর্যবেক্ষণ করলেও তাকে বিচলিত মনে হয়নি। সমগ্র ঘটনা মাত্র ১০/১২ সেকেন্ডের মধ্যে ঘটেছে বলে ভিডিও ফুটেজে স্পষ্ট প্রমাণ মিলেছে। মন্দিরে প্রবেশ করে মুকুট নেওয়া যুবককে বেশ প্রশিক্ষিত ও পরিকল্পনামাফিক সে কাজটি করেছে বলে ধারনার কথা জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
মামলার এজাহারে বাদী জ্যোতি প্রকাশ চট্টোপাধ্যায় উল্লেখ করেন, যশোরেশ্বরী মন্দির একটি তীর্থস্থান। ১৮০৯ সাল থেকে তাদের পূর্বপুরুষরা মন্দিরটি পরিচালনা করছেন। গত ২০২১ সালে নরেন্দ্র মোদি মন্দির পরিদর্শনকালে দেবীর মাথায় রুপার ওপর সোনার জলের রং করা মুকুটটি পরিয়ে দেন। প্রায় ৩০ ভরি ওজনের ওই মুকুটের মূল্য প্রায় অর্ধ কোটি টাকা।
মামলার এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, পুরোহিত দিলীপ ব্যানার্জীর কাছে মন্দিরের চাবি থাকে। তবে, পরিচ্ছন্নতার জন্য মাঝেমধ্যে রেখা রানীকে পুরোহিত চাবি হস্তান্তর করেন। এমন এক অবস্থায় গত ১০ অক্টোবর আগত ভক্তদের সেবা দেওয়ার সময় মন্দিরের চাবি খুলে কাজের সময় পরিচ্ছন্নতা কর্মী রেখা অসাবধানতাবশত বাইরে চলে যায়। পরে অজ্ঞাত ব্যক্তিরা দেবীর মাথা থেকে মুকুট খুলে নিয়ে পালিয়ে যায়।
শ্যামনগর থানার ওসি (তদন্ত) ফকির তাইজুর রহমান বলেন, শনিবার রাতে মামলার পর বিষয়টি ডিবি তদন্ত করছে। ইতোমধ্যে তারা চারজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়েছে। এ ছাড়া সিসি ক্যামেরায় ধারণকৃত ফুটেজের যুবককে শনাক্ত করার সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে।