ছাত্রজনতার রক্তঋণ শোধে আমরা বদ্ধপরিকর, রাজনৈতিক এজেন্ডা নেই : ড. বদিউল আলম
নির্বাচন সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, আমাদের যে সব বিশেষ বাহিনী অপকর্ম করেছেন, এগুলো বেআইনি। এগুলো গুরুতর নির্বাচনি অপরাধ। এগুলোর বিচার হওয়া দরকার, উচিত। তিনি আরও বলেন, জুলাই-আগস্টে দেওয়া ছাত্রজনতার রক্তের ঋণ শোধ করতে আমরা বদ্ধ পরিকর, আমাদের কোনো রাজনৈতিক এজেন্ডা নেই।
আজ শনিবার (১৬ নভেম্বর) নির্বাচন কমিশন (ইসি) ভবনে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সঙ্গে রিপোর্টার্স ফোরাম ফর ইলেকশন অ্যান্ড ডেমোক্রেসির (আরএফইডি) মতবিনিময় সভায় বদিউল আলম এসব কথা বলেন। সভায় সাংবাদিকরা জানিয়েছিলেন, নির্বাচন কমিশনে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে সরকারের বিশেষ বাহিনীর সদস্যরা তাদের ব্যাপারে খোঁজ-খবর নিত। এমনকি ফোন করেও নানা ধরনের কথা বলতেন। আগামীতেও এমন ঘটনা ঘটবে কিনা?
এমন প্রশ্নের জবাবে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, এ ধরনের কার্যক্রম যেন বন্ধ হয়, যে ব্যাপারে আমরা সুপারিশ করব। আর নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি হিসেবে আমাদের কিন্তু সাহসী ভূমিকা রেখে দায়িত্ব পালন করতে হবে। তাহলে এটা থেকে উত্তরণ ঘটবে। তা না হলে কিন্তু উত্তরণ ঘটবে না।
ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, ভোটের সময় কোটি কোটি টাকার মনোনয়ন বাণিজ্য হয়। রাজনীতি ব্যবসায় পরিণত হয়েছে। রাজনীতি এখন জনকল্যাণ নয়, রাজনীতি এখন ব্যবসা। আমাদের নির্বাচন ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। অতীতে অনেক রকম অন্যায়-অপকর্ম হয়েছে। এগুলো যাতে বন্ধ হয় এবং একটি সুন্দর নির্বাচন ব্যবস্থা যেন প্রতিষ্ঠিত হয়, একইসঙ্গে আমাদের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাটা যেন শক্ত একটা ভিতের ওপর দাঁড় করানো যায়, সেই চেষ্টা করব আমরা। নারী আসনে সরাসরি ভোট হতে পারে। প্রত্যেক আসনে যোগ্য নারীরা ভোটে নির্বাচিত হবেন।
বদিউল আলম মজুমদার বলেন, আমরা এই পর্যন্ত ২১টি সভা করেছি। এ সভাগুলোতে আমরা খোলামেলা আলোচনা করেছি৷ প্রত্যেকটি আইন-কানুন, বিধি-বিধান আলোচনা পর্যালেচনা করেছি। যার ভিত্তিতে সুপারিশ করতে পারব৷ সাবেক সিইসি মোহাম্মদ আবু হেনার সঙ্গে আলোচনা করেছি। ইমেইল পেয়েছি তিন শতাধিক, ফেসবুকে ৭০টি, ব্যক্তিগতভাবে হার্ডকপি পেয়েছি৷ মানুষের সাড়ায় উৎসাহিত হচ্ছি৷ যাদের সুস্পষ্ট আছে তাদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলব। সবার মতামত নিয়ে আমরা সুচিন্তিত একটা সুপারিশ করব৷ যার ভিত্তিতে সরকার দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করে সিদ্ধান্ত নেবে।
কমিশনপ্রধান বলেন, নিজের পরিবর্তন করতে হবে, রাজনৈতিক পরিবর্তন হবে। সংরক্ষিত নারী আসনে ভোট কেমন হবে, ভোটার তালিকা নারী ভোটার কমার কারণ, নির্বাচনি অপরাধ রোধ, সংসদীয় আসনের সীমানা নিয়ে অভিযোগ দুরীকরণ, নির্বাচনি ব্যয় ও পর্যবেক্ষণ, গণমাধ্যমের অবাধ তথ্য সংগ্রহের সুযোগ সৃষ্টি, স্থানীয় নির্বাচন কী করে সুষ্ঠু করা হয়, গত তিন নির্বাচন কী ঘটেছিল এবং তা থেকে উত্তরণের উপায়, মাঠ প্রশাসনে ভূমিকা ইত্যাদি নিয়ে মতামত নেওয়া হবে।
বদিউল আলম মজুমদার বলেন, সংরক্ষিত নারী আসন ১০০টা যদি ধরি। ওখানে সরাসরি নির্বাচন হবে। তাহলে সংসদে চারশ আসন হবে৷ এখন সারাদেশে ওই চারশ আসনের ১০০টা আসনে কেবল নারীরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবে, এক দলের সঙ্গে অন্য দল। অন্য তিনশ আসনে নারী পুরুষ সকলে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে। এভাবে চারটা নির্বাচনে একশ-একশ করে পরবর্তীতে সব আসনে নারীরা পুরুষদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে।
বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ইভিএম ত্রুটিপূর্ণ, দুর্বল যন্ত্র ছিল। এগুলো এখন অকেজো হয়ে গেছে বোধহয়। সবচেয়ে বড় কথা এটার জন্য রাজনৈতিক ঐক্য এবং আস্থাশীলতা দরকার। রাজনীতিবিদকেই এ বিষয়ে ভবিষ্যতে সিদ্ধান্ত হবে।
শুধু ২২টি দলের কাছে প্রস্তাব চাচ্ছেন কেন, দল তো ৪৭টি, এটা কি বৈষম্য হলো না—প্রশ্ন করা হলে বদিউল আলম বলেন, এটা নিয়ে আমরা আরেকদিন সংবাদ সম্মেলন করব৷ আপনারা সরকারকে জিজ্ঞেস করেন৷ আমরা অনেকের কাছে মতামত নিচ্ছি। আমরা সরকারের অভিপ্রায়, সরকারকে জিজ্ঞেস করেন। আমরা চেষ্টা করছি সব দলমতের ঊর্ধ্বে থেকে একটা সুপারিশ যেন করতে পারি।
সরকারের সিদ্ধান্ত যদি আপনার কমিশনের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়, তাহলে আমরা কেমন সংস্কার পাব—প্রশ্নে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, সরকার এই কমিশনগুলো গঠন করেছে। সরকার একটা কার্যপরিধি নির্ধারণ করে দিয়েছে। আমাদের করণীয় নির্ধারণ করে দিয়েছে। প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। অবশ্যই সরকারের অভিপ্রায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা সব মতপথের ব্যক্তির মতামত নেওয়ার চেষ্টা করছি। প্রত্যেকের মতামত দেওয়ার সুযোগ থাকবে। কারণ, আমাদের কোনো নিজস্ব এজেন্ডা নেই। কারো পক্ষে বা বিপক্ষে কোনো বিশেষ দলের বা বিশেষ গোষ্ঠীর আমরা স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য একত্রিত হয়নি। এই যে টিম আমাদের। আমরা বলিষ্ঠভাবে কাজ করছি। অনেকের মতামত, সুপারিশ নেওয়ার আমাদের সুযোগ হবে। ওয়েবসাইট ও ই-মেইলে মতামত দেওয়া যাবে। আমরা কোন প্রেক্ষাপটে এখানে এসেছি, প্রেক্ষাপট হলো-দেড় হাজারের মতো প্রাণহানি হয়েছে। বিশ ত্রিশ হাজার ব্যক্তি আহত হয়েছে। তাদের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে আমরা এই সব কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছি। আমরা যেন তাদের রক্তের প্রতি বিশ্বাস ঘাতকতা না করি৷ আমরা তাদের রক্তের ঋণ শোধ করার জন্য বদ্ধ পরিকর। আমাদের কোনো রাজনৈতিক এজেন্ডা নেই।
সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন সম্পাদক বলেন, অনেকের মতামত, সুপারিশ নেওয়ার আমাদের সুযোগ হবে। ওয়েবসাইট ও ইমেইলে মতামত দেওয়া যাবে। আমরা কোন প্রেক্ষাপটে এখানে এসেছি, প্রেক্ষাপট হলো—দেড় হাজারের মতো প্রাণহানি হয়েছে। বিশ, ত্রিশ হাজার ব্যক্তি আহত হয়েছে। তাদের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে আমরা এই সব কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছি। আমরা যেন তাদের রক্তের প্রতি বিশ্বাস ঘাতকতা না করি৷ আমরা তাদের রক্তের ঋণ শোধ করার জন্য বদ্ধপরিকর। আমাদের কোনো রাজনৈতিক এজেন্ডা নেই।