গভর্নর ব্যস্ত বিদেশ সফরেই!
বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ অর্থ চুরি হওয়ার ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংকে ভর করেছে অস্থিরতা। কিন্তু এ অস্থিরতায় গভর্নরকে পাশে পাচ্ছেন না কর্মকর্তারা। গভর্নর বিদেশে থাকায় বিভিন্ন দিক নিজেদেরকেই সামলাতে হচ্ছে কর্মকর্তাদের।
তিনদিনের ভারত সফর শেষে আজ সোমবার দেশে ফিরেছেন তিনি।
চলতি সপ্তাহে রিজার্ভের ১০ কোটি ১০ লাখ ডলোর চুরি হওয়ার ঘটনা প্রকাশিত হওয়ার পর সাংবাদিকসহ বিভিন্নক্ষেত্রে কথা বলছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অন্য কর্মকর্তারা। গতকাল রোববার বিষয়টি নিয়ে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। গভর্নরের অনুপস্থিতিতেই ওই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
ওই বৈঠকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব এস আসলাম বাংলাদেশ ব্যাংকের তীব্র সমালোচনা করেন। ঘটনার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের অদক্ষতাকেও দায়ী করেন তিনি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এ মুহূর্তে গভর্নরের দেশে থাকা প্রয়োজন ছিল। বিষয়টি সামলানোর ক্ষেত্রেও গভর্নরের থাকাটা প্রয়োজনীয় মনে করেন কর্মকর্তারা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর সচিবালয়ের মহাব্যবস্থাপক এ এফ এম আসাদুজ্জামান এনটিভি অনলাইনকে জানিয়েছেন, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের একটি সেমিনারে অংশ নিতে গত ১১ মার্চ থেকে ১৩ মার্চ পর্যন্ত ভারতের দিল্লিতে যান গভর্নর। ফেরার ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘আজ মঙ্গলবার বিকাল ৪টায় দেশে ফিরবেন গভর্নর।’
এদিকে গভর্নর আতিউর রহমানের ঘন ঘন বিদেশ সফর নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, গত ১৪ মাসে ১৪ বার বিভিন্ন দেশে সফরে গেছেন আতিউর রহমান।
সূত্রমতে, বিভিন্ন কনফারেন্সে ও সেমিনারে যোগ দিতে গত ১৪ মাসে এসব সফর করেছেন আতিউর রহমান।
তবে এ ব্যাপারে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানা যায়নি কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে জানানো হয়, গভর্নর গত বছর একাধিক সফরে গেছেন তবে ঠিক কতবার তা আসলে এখন বলা যাচ্ছে না।
সূত্রমতে গভর্নর ওই ১৪ মাসে সবচেয়ে বেশি সফর করেছেন ভারত। এ ছাড়া গেছেন যুক্তরাষ্ট্র, সুইজারল্যান্ড, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত, পেরু, যুক্তরাজ্য, নেদারল্যান্ডস, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া ও জাপান।
গভর্নরের যত সফর
চলতি সফরের আগের মাসেই অর্থাৎ গত মাসেই ভারত সফর করে এসেছেন আতিউর রহমান। ১৮ থেকে ১৯ ফেব্রুয়ারি দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনৈতিক উন্নয়ন সংক্রান্ত দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক সম্মেলনে অংশ নেন তিনি।
গত বছরের ডিসেম্বরে ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংকের ইসলামিক ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস বোর্ডের (আইএফএসবি) সভায় অংশ নিতে সৌদি আরবের জেদ্দায় যান।
এ আগে নভেম্বরে বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভের কনফারেন্সে অংশ নিতে যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রান্সিসকো যান। একইসময়ে জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদের অনুষ্ঠানে অংশ নিতে নিউইয়র্কও সফর করেন আতিউর রহমান।
যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসার পথে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে যাত্রাবিরতি করেন গভর্নর। ১০ নভেম্বর কুয়েত সেন্ট্রাল ব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের আয়োজিত এক সেমিনারে অংশ নেন তিনি।
এর আগের মাসে ৮ অক্টোবর পেরুতে আয়োজিত কমনওয়েলথ সেন্ট্রাল ব্যাংকের সেমিনারে অংশ নেন তিনি। পেরু থেকে আসার পথে সিঙ্গাপুরে এক সেমিনারে অংশ নেন তিনি।
সেপ্টেম্বরে যুক্তরাজ্য ও নেদারল্যান্ডসে বিভিন্ন সেমিনারে অংশ নিতে সফর করেন আতিউর রহমান। আগস্ট মাসে কনফারেন্সে অংশ নিতে ভারত ও মালয়েশিয়া যান।
জুনে এএফআইয়ের স্টিয়ারিং কমিটির বৈঠকে অংশ নিতে সুইজারল্যান্ডে যান গভর্নর।
এ ছাড়া গত বছরের বিভিন্ন সময়ে আইএমএফের বৈঠকের জন্য যুক্তরাষ্ট্র, জাইকার এক কনফারেন্সে টোকিও সফর করেন তিনি। গত ফেব্রুয়ারি মাসে যুক্তরাজ্যে গিয়ে সেরা গভর্নরের পুরস্কার গ্রহণ করেন তিনি।
২০০৯ সালে ১০ম গভর্নর হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকে যোগ দেন ড. আতিউর রহমান।