জাবিতে দিনব্যাপী প্রজাপতি মেলা উদযাপিত
‘উড়লে আকাশে প্রজাপতি, প্রকৃতি পায় নতুন গতি’ এ স্লোগানকে ধারণ করে প্রজাপতি সংরক্ষণ ও গণসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে উদযাপিত হয়েছে প্রজাপতি মেলা-২০২১। আজ শুক্রবার সকাল ১০টায় জহির রায়হান মিলনায়তনের সামনে দিনব্যাপী এ মেলার উদ্বোধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার অধ্যাপক রাশেদা আখতার।
উদ্বোধনী বক্তব্যে অধ্যাপক ড. রাশেদা আখতার বলেন, ‘কীট-পতঙ্গ এবং জীববৈচিত্র্য রক্ষার জন্য প্রকৃতি, মানুষ এবং সামাজিক পরিবেশকে রক্ষা করতে হবে। এ জন্য সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। পরিবেশের সুরক্ষা নিশ্চিত করে উন্নয়ন চিন্তা করতে হবে।’
প্রজাপতি সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য এবারের মেলায় সিরাজগঞ্জের আলহাজ্ব ফরহাদ আলী মেমোরিয়াল ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক মো. হাসমত আলীকে ‘বাটারফ্লাই অ্যাওয়ার্ড-২০২১’ প্রদান করা হয়। নিজ বাড়ির ৫ একর জায়গায় প্রজাপতি সংরক্ষণ ও প্রজননে ভূমিকা রাখার জন্য তাকে এই পুরস্কারে ভূষিত করা হয়।
এছাড়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী আশিকুর রহমান সমীকে ‘বাটারফ্লাই ইয়াং ইনথুসিয়াস্ট অ্যাওয়ার্ড-২০২১’ প্রদান করা হয়।
মেলার আয়োজক প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মো. মনোয়ার হোসেন বলেন, ‘প্রজাপতিকে রক্ষা করার জন্য প্রাকৃতিক পরিবেশকে বাঁচাতে হবে। আগে বাংলাদেশে প্রায় ৪০০ প্রজাতির প্রজাপতি দেখা গেলেও এখন সে সংখ্যা কমে এসেছে। মানুষ প্রকৃতিমনস্ক হলে পরিবেশ সুরক্ষিত থাকবে, প্রজাপতিও রক্ষিত হবে।’
প্রজাপতি মেলার দিনব্যাপী আয়োজনের মধ্যে ছিল শিশুকিশোরদের জন্য প্রজাপ্রতি বিষয়ক ছবি আঁকা প্রতিযোগিতা। শিশু-কিশোরদের জন্য প্রজাপতি ও প্রকৃতি বিষয়ক কুইজ প্রতিযোগিতা। ছবি দেখে বলতে হবে প্রজাপতির নাম। প্রজাপতি চেনা প্রতিযোগিতায় প্রতিটি প্রতিষ্ঠান থেকে দুটি দল অংশগ্রহণ করছে। প্রতি দলে দুজন ছাত্র-ছাত্রী। সব ছাত্র-ছাত্রীর অংশগ্রহণে প্রজাপতি ও প্রকৃতি নিয়ে হয়েছে বারোয়ারি বিতর্ক প্রতিযোগিতা। বিতর্কের বিষয় ‘প্রজাপতির ভাবনায় বাংলাদেশ’।
এছাড়া রয়েছে প্রজাপতি আলোকচিত্র প্রদর্শনী, প্রজাপতি বিষয়ক আলোকচিত্র প্রতিযোগিতা, প্রজাপতির হাট দর্শন, প্রজাপতির আদলে ঘুড়ি উড্ডয়ন ও প্রজাপতি বিষয়ক ডকুমেন্টারি প্রদর্শন।
প্রকৃতিতে প্রজাপতির গুরুত্ব সম্পর্কে অধ্যাপক মনোয়ার বলেন, ‘পরাগায়নের মাধ্যমে বনায়ন বিস্তারে প্রজাপতির ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’ প্রজাপতির সংখ্যা সম্পর্কে তিনি জানান, প্রতিটি প্রজাপতির আয়ুষ্কাল সাত থেকে আট দিন। ২০১৬ সালে প্রজাপতি শুমারি করে ৩০৫টি প্রজাতি নির্ধারণ করা হয়। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে গণনা করে ১২০টি প্রজাতি পাওয়া গেছে। বর্তমানে ৫০ থেকে ৬০ প্রজাতির প্রজাপতি পাওয়া যায়। এছাড়াও মেলা উপলক্ষে প্রজাপতি পার্ক ও গবেষণা কেন্দ্র জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। যেখানে রয়েছে জীবন্ত প্রজাপতি, প্রজাপতি বান্ধব বৃক্ষাদি ও প্রজাপতির প্রজনন ক্ষেত্রসহ উন্মুক্ত বাগান। সেখানে প্রায় ৮০ প্রজাতির প্রজাপতি আছে।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন জীববিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আবদুল জব্বার হাওলাদার, চ্যানেল আইয়ের পরিচালক এবং প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মুকিত মজুমদার বাবু, বার্ড ক্লাবের সভাপতি ইনাম আল হক, মৌসুমী টয়লেট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাতলুব আখতার প্রমুখ।
এবারের মেলার টাইটেল স্পন্সর হয়েছে ‘কিউট’। সহযোগী সংগঠন হিসেবে ছিলেন প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশন ও আই ইউ সিএন (ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অফ নেচার)। মিডিয়া পার্টনার হিসেবে ছিল চ্যানেল আই ও রেডিও ভূমি।