জাবিতে নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে ইউজিসিতে আট শিক্ষকের চিঠি
শিক্ষার্থীশূন্য ক্যাম্পাসে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) দর্শন বিভাগে ছয়জন শিক্ষক নিয়োগ প্রদানকে দুরভিসন্ধিমূলক উল্লেখ করে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) বরাবর চিঠি দিয়েছেন একই বিভাগের আট শিক্ষক।
আজ বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন চেয়ারম্যান বরাবর এ চিঠি দেন দর্শন বিভাগের শিক্ষকদের একাংশ।
আবেদনে উল্লেখ করা হয়, বিভাগে বর্তমানে কর্মরত শিক্ষকসংখ্যা ও বিভাগের একাডেমিক দায়িত্বের পরিমাণ পূর্ণাঙ্গরূপে ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। বিভাগে শিক্ষক নিয়োগের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিলে বিভাগীয় শিক্ষাপর্ষদের সভায় তা নিয়ে আলোচনা ও মতামত নেওয়া হয়ে থাকে। কিন্তু বিভাগীয় শিক্ষাপর্ষদের সভা আহ্বানের রীতি লঙ্ঘন করে ছয়টি পদে শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে। বিভাগীয় সভাপতি তাঁর পছন্দের প্রার্থী নিয়োগ দেওয়ার জন্য বিভাগের দীর্ঘদিনের কনভেনশন লঙ্ঘন করেছেন। সংখ্যার বিবেচনায় এমন নিয়োগ পদক্ষেপ নজিরবিহীন।
চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়, প্রায় এক বছর ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ থাকার এমন পরিস্থিতিতে ছয়জন শিক্ষক নিয়োগ কেবল অপ্রয়োজনীয় নয়, দুরভিসন্ধিমূলক। বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়েই অনলাইনে এ পর্যন্ত কোনো শিক্ষক নিয়োগ দেয়নি, এর মাধ্যমে একটি খারাপ দৃষ্টান্ত স্থাপিত হবে। এছাড়া অনলাইন কানেকশন সমস্যার কারণে কোনো যোগ্য প্রার্থী অবমূল্যায়নের শিকার হতে পারে।
শিক্ষকরা আরও বলেন, শিক্ষার্থীদের অনলাইন পরীক্ষা নেওয়ার জন্য নতুন (মহামারি কালীন) অধ্যাদেশ তৈরি করতে হয়েছে। যেটা একাডেমিক কাউন্সিল সিন্ডিকেট হয়ে বিভাগ এসেছে। একইভাবে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে ফিজিক্যালি উপস্থিত হয়ে ভাইভা দেওয়ার নিয়ম। এটি অনলাইনে নিতে হলে অধ্যাদেশ পরিবর্তনের প্রয়োজন রয়েছে। শিক্ষক নিয়োগের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ যাচাই পরীক্ষা অনলাইনে নেওয়া কোনো অবস্থাতেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। পাশাপাশি ইউজিসিরও নির্দেশ রয়েছে শুধু প্রমোশন ও আপগ্রেডিং ব্যতিরেকে নতুন নিয়োগ অনলাইনে না নেওয়ার জন্য।
দর্শন বিভাগে করোনার সময়ে নতুন শিক্ষকের আদৌ কোনো প্রয়োজন আছে কি না জানতে চাইলে বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোস্তফা নাজমুল মানছুর বলেন, ‘বিভাগে গত ১০ বছরে কোনো শিক্ষক নিয়োগ হয়নি। বর্তমানে নয়জন শিক্ষক বিভাগে নেই, পাঁচজন অবসরে, বাকি চারজন শিক্ষা ছুটিতে রয়েছেন। শিক্ষক সংকটের কারণে মাস্টার্সে নতুন কোর্সও চালু করা যাচ্ছে না। তাই শিক্ষক নিয়োগের অবশ্যই প্রয়োজন আছে বলে মনে করি।’
কিন্তু ইউজিসিতে আবেদনকারী শিক্ষকদের একজন অধ্যাপক কামরুল আহসান বলেন, ‘আমরা শিক্ষক নিয়োগের বিরুদ্ধে না। কিন্তু একসঙ্গে ছয়জন শিক্ষক নিয়োগ কোনোভাবেই যুক্তিসঙ্গত না। এক বছর ধরে বিভাগে সরাসরি কোনো ক্লাস-পরীক্ষা হয়নি। কোর্স লোড অনুযায়ী প্রয়োজনীয় শিক্ষকও রয়েছেন। এ ছাড়া শিক্ষা ছুটিতে থাকা শিক্ষকদের আগামী বছরই চলে আসার কথা রয়েছে। এমতাবস্থায় একসঙ্গে ছয়জন শিক্ষক নিয়োগ সরকারের অর্থ অপচয় বলে মনে করছি।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের সদস্য ড. দিল আফরোজা বেগম বলেন, ‘চেয়াম্যানের কাছে হয়তো এ বিষয়ক কোনো চিঠি যেতে পারে। আমি এ ব্যাপারে জানি না। তবে বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি যে, জাবিতে একাধিক বিভাগে শিক্ষকস্বল্পতা রয়েছে। তবে নিয়ম অনুযায়ী, কোনো বিভাগের শিক্ষকেরা ছুটিতে থাকলে তাদের পরিবর্তে অস্থায়ী ২০ শতাংশ নিয়োগ দেওয়া যেতে পারে। কিন্তু সরাসরি স্থায়ী নিয়োগ ইউজিসি নিয়ম বহির্ভূত।’
দিল আফরোজা বেগম আরও বলেন, ‘শুধু জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়েই নয়, সব বিশ্ববিদ্যালয়েই আমরা একটি বিষয় লক্ষ্য করছি। প্রত্যেক উপাচার্যই মেয়াদের শেষ সময়ে এসে নিয়োগ নিয়ে তোড়জোড় শুরু করেছেন।’