জাবিতে ব্যবহারিক পরীক্ষার দাবিতে অবরোধ
ব্যবহারিক পরীক্ষার দাবিতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগ অবরোধ করেছে ৪৬তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা।
আজ মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে এ অবরোধ কর্মসূচি শুরু হয়। বিভাগের সভাপতি ও চারজন শিক্ষকসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অবরোধ অবস্থায় আছে।
বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত অবরোধ কর্মসূচি চলমান রয়েছে। পরীক্ষার সুনির্দিষ্ট তারিখ না দেওয়া পর্যন্ত অবরোধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
অবরোধকারী শিক্ষার্থীরা বলেন, গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে তাঁদের তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষা শুরু হয়। তত্ত্বীয় অংশের পরীক্ষা শেষ হয় গত বছরের ১৭ মার্চ। এরপর করোনা মহামারির কারণে বাকি পরীক্ষাগুলো স্থগিত হয়। ফলে তিনটি ব্যবহারিক পরীক্ষা এবং চ‚ড়ান্ত মৌখিক পরীক্ষা ছাড়াই চতুর্থ বর্ষের অনলাইন ক্লাস শুরু হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইন পরীক্ষার নীতিমালা হওয়ায় গত ২৭ জুন অনলাইনে তাঁদের চ‚ড়ান্ত মৌখিক পরীক্ষা নেয় বিভাগ। কিন্তু দেড় বছরেও তিনটি ব্যবহারিক পরীক্ষা নেওয়া হয়নি।
পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি এ এইচ এম সাদাৎ এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘বিভাগের সবগুলো ব্যাচের তত্ত্বীয় পরীক্ষা আমরা নিচ্ছি। কিন্তু ৪৬ ব্যাচের বন্ধের পূর্বেই সব তত্ত্বীয় পরীক্ষা শেষ হয়েছে। তাঁদের যে তিনটি ব্যবহারিক পরীক্ষা বাকি আছে তার মধ্যে একটি অনলাইনে নেওয়া সম্ভব। বাকি দুইটি পরীক্ষা ল্যাব ছাড়া সম্ভব নয়। এ নিয়ে সকালে বিভাগে একাডেমিক সভা আহ্বান করা হয়েছিল। সভায় সব শিক্ষক ব্যবহারিক পরীক্ষা বিশ্ববিদ্যালয় খোলার পর নেওয়ার ব্যাপারে মতামত দেন।’
এ এইচ এম সাদাৎ আরও বলেন, ‘অনলাইনে তাঁদের চতুর্থ বর্ষেরও ক্লাস প্রায় শেষ। ক্যাম্পাস খোলার সঙ্গে সঙ্গেই ব্যবহারিক পরীক্ষা নেওয়া হবে এবং তার কয়েক সপ্তাহ পর চতুর্থ বর্ষের পরীক্ষা নেওয়া হবে। কিন্তু শিক্ষার্থীরা কোনোভাবেই এ বিষয়টি বুঝতে চাচ্ছে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মের বাহিরে কোনো পরীক্ষা নেওয়া বিভাগের পক্ষে সম্ভব নয়। আমরা বিষয়টি প্রসাশনকে অবহিত করেছি। সমস্যা সমাধানে চেষ্টা করছি।’
অবরোধ চলাকালে বেলা আড়াইটায় ঘটনাস্থলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর আ স ম ফিরোজ উল হাসানসহ প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা উপস্থিত হন। তাঁরা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় শিক্ষার্থীরা জানান, গত এক বছরে ৪৬তম ব্যাচের চতুর্থ বর্ষের সবগুলো ক্লাস শেষ হয়েছে। তাঁরা চতুর্থ বর্ষের চ‚ড়ান্ত পরীক্ষা দেওয়ার জন্য প্রস্তুত আছে। বিভাগ থেকে চতুর্থ বর্ষের পরীক্ষা নেওয়ার জন্য তিন সদস্যের কমিটিও গঠন করা হয়েছে। তবে তৃতীয় বর্ষের ব্যবহারিক পরীক্ষা না হওয়ায় চতুর্থ বর্ষের পরীক্ষা নিতে পারছে না বিভাগ।
পরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও বিভাগের শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে এ সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দেন ফিরোজ উল হাসান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, আমরা এক সপ্তাহ আগে বিভাগের সভাপতি বরাবর লিখিতভাবে আবেদন করেছিলাম। আমাদের দাবি ছিল ৬ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ব্যবহারিক পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করতে হবে। কিন্তু তা করা হয়নি। যেখানে অন্যান্য বিভাগে আমাদের বন্ধু একটি পূর্ণাঙ্গ বছরের পরীক্ষা অনলাইনে দিয়েছে সেখানে আমাদের তিনটি ব্যবহারিক পরীক্ষা নিচ্ছে না বিভাগ। আমরা পিছিয়ে যাচ্ছি। তাই বাধ্য হয়ে অবরোধ করেছি।
বিভাগ সূত্রে জানা যায়, পরীক্ষা কমিটির সভাপতি অধ্যাপক এ.এন.এম ফখরউদ্দিন আজ বিভাগে আসেনি। তিনি শারীরিকভাবে অসুস্থ। এছাড়া বিভাগে প্রায় পাঁচজন শিক্ষক করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। এর মধ্যে দুইজন দুবার করে আক্রান্ত হয়েছেন। বিভাগের শিক্ষকদের সংখ্যাও কম। ব্যবহারিক পরীক্ষার জন্য ল্যাবরেটরিগুলো হলো বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে পুরাতন ভবনে। যেগুলোর অবস্থা ব্যবহারযোগ্য নয়। সেখানে থাকা মূল্যবান সব কেমিক্যাল নষ্ট হয়ে গেছে। ল্যাবের রুমের অবস্থাও খুবই নাজুক। একজন শিক্ষক ল্যাবে কাজ করতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।
এমতাবস্থায় শিক্ষকদের পক্ষে ওই ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব নয়। সাড়ে তিন বছর আগে ল্যাবরেটরি স্থানান্তর করে বিভাগে আনার ব্যাপারে সিন্ডিকেটে সিদ্ধান্ত হলেও এ বিষয়ে কোন অগ্রগতি হয়নি।