জাবিতে শিক্ষক নিয়োগের ভাইভা অনলাইনে, বন্ধের দাবি
শিক্ষক নিয়োগে অনলাইনে মৌখিক পরীক্ষা (ভাইভা) নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) প্রশাসন। আবেদনকারীরা মুঠোফোনের মেসেজে মাত্র চারদিন আগে জেনেছেন মৌখিক পরীক্ষার সময়। আবেদনকারীদের দেওয়া হয়নি কোনো প্রবেশপত্র। জাবির দর্শন বিভাগের ছয়জন নতুন শিক্ষক নিয়োগে এই প্রক্রিয়া অবলম্বন করা হয়েছে। জাবির রেজিস্ট্রার কার্যালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এ বছরের ১১ ফেব্রুয়ারি জাবির রেজিস্ট্রার কার্যালয় থেকে দর্শন বিভাগে ছয়জন নতুন শিক্ষক নিয়োগের যে নোটিশ দেওয়া হয়েছে, সেখানে কী প্রক্রিয়ায় ভাইভা নেওয়া হবে—তা উল্লেখ করা হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে সাধারণত সরাসরি ভাইভা নেওয়া হয়ে থাকে। কিন্তু নোটিশে উল্লেখ না থাকলেও এই প্রথমবারের মতো কোনো বিভাগের শিক্ষক নিয়োগে অনলাইনে ভাইভা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিল জাবি প্রশাসন। আগামীকাল শনিবার অনলাইনে এই ভাইভা অনুষ্ঠিত হবে। অনলাইন এ ভাইভায় অংশ নেবেন ৫৭ জন আবেদনকারী।
আজ শুক্রবার দুপুর ১২টায় জাবি প্রেসক্লাব কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই নিয়োগ বন্ধের দাবি জানান শিক্ষকদের একটি অংশ। শিক্ষকরা অনলাইনে শিক্ষক নিয়োগের এ প্রক্রিয়াকে নজিরবিহীন ও বিভাগীয় কনভেনশনের লঙ্ঘন বলেও দাবি করেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক রায়হান রাইন বলেন, ‘আগামী ১২ জুন দর্শন বিভাগে ছয়জন শিক্ষক নিয়োগের সাক্ষাৎকার অনলাইনে নেওয়া হবে বলে আবেদনকারীদের জানানো হয়েছে। যেখানে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা নেওয়ার জন্য জাবিতে নতুন অধ্যাদেশ পাস করানো হয়েছে এবং চূড়ান্ত পরীক্ষা অনলাইনে নেওয়াকে আমরা যথাযথ মনে করছি না, সেখানে শিক্ষক নিয়োগের মতো গুরুত্বপূর্ণ যাচাই পরীক্ষা অনলাইনে নেওয়া কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং বিভাগীয় সভাপতি তাদের মেয়াদের শেষ সময়ে এসে পছন্দের প্রার্থীদের নিয়োগ দিতে অনলাইনে গণনিয়োগ কার্যক্রম শুরু করেছেন।’
এ সময় অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান বলেন, ‘নতুন শিক্ষক নিয়োগের বিষয়ে দর্শন বিভাগের শিক্ষাপর্ষদের সভায় কোনো আলোচনা হয়নি। একসঙ্গে এতজন শিক্ষক নিয়োগ বিভাগে অপ্রয়োজনীয় এবং এটি দুরভিসন্ধিমূলক। যেহেতু এ বিষয়ে একটি রিট করা হয়েছে, সেক্ষেত্রে আদালতের সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা করা উচিত। অনলাইনে শিক্ষক নিয়োগ অস্বচ্ছ ও এ প্রক্রিয়ায় চাইলে যে কেউ অনৈতিকতার আশ্রয় নিতে পারে। জুমের মাধ্যমে কোনো যোগ্যতা ও স্বচ্ছতা যাছাই করা সম্ভব নয়। এ প্রক্রিয়া বন্ধ করা উচিত, এই প্রক্রিয়া বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নিয়োগে কালো অধ্যায় হয়ে থাকবে।’
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন দর্শন বিভাগের অধ্যাপক আনোয়ারুল্লাহ ভুঁইয়া, অধ্যাপক ফরিদ আহমেদ, অধ্যাপক মো. জাকির হোসেন, সহকারী অধ্যাপক আবদুছ ছাত্তার ও মোহাম্মদ উল্লাহ।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির গত ৪ জুন এক কার্যনির্বাহী পরিষদের সভায় কোনো বিভাগের শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রমের জন্য একেবারেই অপরিহার্য না হলে অনলাইনে মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে নতুন শিক্ষক নিয়োগ না করার জন্য উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামকে অনুরোধ জানানোর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়। শিক্ষক সমিতির নির্বাহী পরিষদের সভার কার্যবিবরণী থেকে এ তথ্য জানা যায়।
এদিকে আজ এক যুক্ত বিবৃতিতে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, জাবি সংসদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি তুষার ধর ও সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল রনি অনলাইনে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধের দাবি করে বলেন, অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে গিয়ে শিক্ষার্থীরা এই প্রক্রিয়ার জটিলতাগুলো চিহ্নিত করতে পেরেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগের অনলাইন প্রক্রিয়ায় এই জটিলতাগুলোর প্রভাব সর্বাংশে বেশি পড়বে নিশ্চিতভাবেই। অনলাইন মৌখিক পরীক্ষার মধ্য দিয়ে একজন ব্যক্তির পাঠদানের দক্ষতা, নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা ও শিক্ষক হওয়ার জন্য অন্যান্য প্রয়োজনীয় গুণাবলী আছে কি না, সে ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া অসম্ভব।
গতকাল বৃহস্পতিবার দর্শন বিভাগের এই নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ করতে হাইকোর্টে রিট করেন অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান, আনোয়ারুল্লাহ ভুঁইয়া, জাকির হোসেন ও সহকারী অধ্যাপক আবদুছ ছাত্তার।
এ ছাড়া দর্শন বিভাগের আটজন শিক্ষকের পক্ষে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, রেজিস্ট্রার, কলা ও মানবিকী অনুষদের ডিন এবং দর্শন বিভাগের সভাপতিকে লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়। লিগ্যাল নোটিশ পাঠান অ্যাডভোকেট ড. সৈয়দা নাসরিন।
এর আগে গত বুধবার এই নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধে ইউজিসির চেয়ারম্যান বরাবর লিখিত আবেদন করেন ওই আট শিক্ষক।