জাবি ক্যাম্পাসে মাহাথির-মারিয়ামের ব্যতিক্রমী গায়ে হলুদ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) পুরাতন কলা ভবনের লেকপাড়ে চারুছায়ায় একদল তরুণ-তরুণীর হলদে শাড়ি ও পাঞ্জাবিতে চোখ আটকে যায় পথচারীদের। বাঁশের ডালা, কুলা, চালুন, মাটির ঘড়া ও মটকা দিয়ে সাজানো হয়েছে বর-কনের আসন। নিজ ক্যাম্পাসে বর-কনের সাঁজে মাহাথির ও মারিয়াম।
গত শুক্রবার ব্যতিক্রমী এই গায়ে হলুদের আয়োজন করে বন্ধু-বান্ধব ও প্রিয়জনরা। চিরায়ত হলুদের মতোই হলুদ, মেহেদি, মিষ্টান্ন, ফলমূলসহ কোনো কিছুরই কমতি ছিল না সেখানে।
বর ও কনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৪তম ব্যাচের শিক্ষার্থী। মাহাথির মোহাম্মদ ভূগোল ও পরিবেশ এবং মারিয়াম ছন্দা সরকার ও রাজনীতি বিভাগের মাস্টার্সে অধ্যয়নরত।
বাঙালি বিয়ের সবচেয়ে বর্ণিল ও বর্ণাঢ্য পর্ব হলো গায়ে হলুদ। সাধারণত এই অনুষ্ঠান পারিবারিকভাবে হয়ে থাকে। নিজ ক্যাম্পাসে ব্যতিক্রমী এই আয়োজন সম্পর্কে মারিয়াম ছন্দা বলেন, ‘আমি প্রীতিলতা হলের আবাসিক ছাত্রী। আমার খুব ইচ্ছে ছিল ক্যাম্পাসে এমন একটি আয়োজন হোক। বন্ধুরা সেই আশা পূরণ করল। সবাই এতো দূর থেকে আমার এই আয়োজন উপলক্ষে এসেছে, আমি সবার প্রতি কৃতজ্ঞ। ক্যাম্পাস খোলা থাকলে সবাইকে একসঙ্গে পাওয়া যেত। কাছের মানুষগুলোর সঙ্গে গায়ে হলুদ আয়োজন, এটা সত্যিই আমার জন্য অনেক বড় পাওয়া।’
চারুছায়ায় হিজল গাছের নিচে গায়ে হলুদ সম্পর্কে মারিয়াম ছন্দা বলেন, ‘এই জায়গাটা আমার খুব প্রিয়। গায়ে হলুদের জন্য স্থানটি আমিই নির্বাচন করেছি। ক্যাম্পাসে গায়ে হলুদের পর ১১ তারিখ মিরপুরের বাসায় পরিবারের সঙ্গে গায়ে হলুদ হবে। ১২ তারিখ বিয়ের অনুষ্ঠান। আর বৌ ভাত হবে মাহাথিরের বাড়ি লক্ষ্মীপুর।’
মাহাথির মোহাম্মদ, ক্যাম্পাসের রাজপথ ছিল যার স্লোগানে মুখর। আজ তিনি বর। সেই ক্যাম্পাসেই নিজের জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় পার করছেন। অনুভূতি জানতে চাইলে বলেন, ‘ভর্তির পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব আন্দোলন-সংগ্রামে আমি ছিলাম সরব। তাই এই ক্যাম্পাসের সঙ্গে আমার সম্পর্ক গভীর। আজ সেখানেই জীবনের একটা বড় কাজ সম্পন্ন হলো। খুবই চমৎকার অনুভূতি আমার।’
অভিভাবকদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বরের মা। তিনি বলেন, ‘এখানে আমার ছেলে ও মেয়ে পড়াশুনা করে। হবু বৌ মা নিজেও এখানের শিক্ষার্থী। মেয়ের ও ছেলের বন্ধু-বান্ধবীরা সব এখানে। তিনজনের ঠিকানা যেহেতু জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, তাই এখানে আয়োজন করা হয়েছে। এটা আমার কাছেও ভালো লেগেছে। এই আয়োজন বাড়ি থেকে ভিন্ন হলেও এর হৃদ্যতা আমাকে মুগ্ধ করছে। তারা দুইজন সুখী হোক ও পড়াশুনা করে নিজেদের যোগ্যতা বৃদ্ধি করে ভবিষ্যতে আরো বড় হোক।’
ছোট থেকে ঘরোয়া পরিবেশে গায়ে হলুদ দেখে এসেছে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ুয়া রাফিন। সে কনের ভাতিজা। ফুপির ভিন্নরকম গায়ে হলুদে বিমোহিত সে। আগেও এই ক্যাম্পাসে এসেছে। কিন্তু আজকের আয়োজন তার কাছে সম্পূর্ণ নতুন। মুক্ত প্রকৃতিতে গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান মন ছুয়েছে তার।
আয়োজকদের একজন আসাদুল্লাহ আল গালিব। তিনি বলেন, ‘ক্যাম্পাসে গায়ে হলুদ আগেও দেখেছি। কিন্তু বন্ধ ক্যাম্পাসে এই আয়োজন আনন্দের মাত্রাকে কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। জাবি নিজেই একটা পরিবার। তাই এটা পরিবারের সদস্যদেরই উৎসব। স্মৃতিবিজড়িত এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান আমাদের মধ্যকার সৌহার্দ্যের ও ভালোবাসার প্রতিচ্ছবি।’