প্রতিষ্ঠার ১০ বছরেও একাডেমিক ভবন নেই জাবি আইন বিভাগের
প্রতিষ্ঠার ১০ বছর পার করলেও আলাদা একাডেমিক ভবন পায়নি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) আইন অনুষদ। সমাজবিজ্ঞান অনুষদের একটি কক্ষে চলছে পাঁচটি ব্যাচের প্রায় সাড়ে তিনশ শিক্ষার্থীর পাঠদান কার্যক্রম। নেই সেমিনার বা লাইব্রেরির সুবিধা কিংবা আলাদা ডিন অফিস। তাই পূর্ণাঙ্গ একাডেমিক ভবনের দাবিতে মানববন্ধন করেছেন জাবির আইন অনুষদের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
গতকাল মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৩টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
মানববন্ধনে আইন অনুষদের ভারপ্রাপ্ত ডিন ও বিভাগীয় প্রধান তাপস কুমার দাস বলেন, ‘যে আকাঙ্ক্ষা নিয়ে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদে ভর্তি হয়েছে, আমরা সেটি পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয় মানে একটা ক্লাসরুমের নিশ্চয়তা থাকা, একাডেমিক কার্যক্রমের সব সুযোগ-সুবিধা থাকা। সব অন্যায়-অবিচারের মধ্য দিয়ে জাবির আইন বিভাগ আজ ১০ বছর পূর্ণ করেছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিভিন্ন সময়ে আমাদের আশ্বাস দিয়ে এসেছে। আমি ২০১৪ সালে যোগদানের পর থেকে শুনে আসছি আমাদের সমস্যা খুব দ্রুত সমাধান হতে চলেছে। কখনও শুনেছি—সমাজবিজ্ঞান ভবনে একটা উইং করে আমাদের জায়গা দেওয়া হবে; নতুন কলাভবন ফাঁকা হলে সেখানে দেওয়া হবে; পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের স্থানান্তর হলে সেখানে দেওয়া হবে। কিন্তু, সেগুলোর কোনোটিই করা হয়নি। সর্বশেষ বলা হয়েছে—পুরাতন রেজিস্ট্রার ভবন ফাঁকা হলে সেখানে আমাদের জায়গা দেওয়া হবে। কালও আমরা শুনেছি ভবিষ্যতে হবে। তবে, সেটি আমার জীবদ্দশায় দেখে যেতে পারব কি না, জানি না।’
তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী হাসান সজীব বলেন, ‘আমার বিভাগের শিক্ষকেরা আমাদের সঙ্গে কোনো প্রতারণা করেননি। সবকিছু ঠিক থাকলে জুনে ৪৭তম ব্যাচ ফাইনাল ইয়ার এক্সামে বসবে, বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য সব ডিপার্টমেন্টের আগে। তারা যদি প্রতারণা করতেন—তাহলে এত দ্রুত ও সফলভবে একাডেমিক কাজ চলতো না। প্রতারণার কথা যদি বলতেই হয়, তাহলে একবাক্যে বলা যায়—প্রতারক এ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন। বারবার নানা কথা বলে সমাজবিজ্ঞানে একটা উইং দিয়ে দেওয়া হবে, নতুন কলায়, পুরান রেজিস্ট্রার ভবন খালি হলে, সেখানে আইন অনুষদ হবে, ইত্যাদি বলে সময়ক্ষেপণ করেছে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন।’
ডিন তাপস কুমার দাস ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘উন্নয়ন প্রকল্পের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এক থেকে ১৪ পর্যন্ত যে প্রকল্পগুলো, সেটি দেখে আমি সম্পূর্ণরূপে হতাশ হয়েছি। একাডেমিক কার্যক্রমের কোনো সদিচ্ছা আমি এ উন্নয়ন প্রকল্পের মধ্যে দেখতে পাইনি। গত ১০ বছর কি যথেষ্ট নয় একটি বিভাগের উন্নতির জন্য? জাবিতে একক বিভাগ হিসেবে সর্বাধিক শিক্ষার্থী এ বিভাগে ভর্তি পরীক্ষা দেয়। গত ১০ বছরে আমি অন্তত পাঁচ কোটি টাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজস্ব দিয়েছি। কিন্তু, বিভাগের জন্য একটি ইটও কেনা হয়নি। হরিলুটের মত অর্থ প্রতিবছর ভর্তি পরীক্ষার পর বরাদ্দ হয়ে যায়। ফলে এ একাডেমিক চাহিদাগুলো কীভাবে পূরণ হবে?’
চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী জান্নাতুন নাইম আনিকা বলেন, ‘যদি প্রশাসন মনে করে এভাবেই বঞ্চিত করবে, তা হলে সেটি কখনোই হতে দেওয়া হবে না। শিক্ষার্থীদের আজ দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা আমাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাব।’
অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের অধীনে প্রথম ধাপে ছয়টি আবাসিক হলের পর দ্বিতীয় ধাপে ১৪টি স্থাপনার কাজ শুরু হবে শিগগির। দ্বিতীয় ধাপের ১৪টি স্থাপনার মধ্যে নতুন প্রশাসনিক ভবন, লাইব্রেরি, খেলার মাঠ, শিক্ষকদের আবাসিক কমপ্লেক্স, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের জন্য আবাসিক টাওয়ারের উল্লেখ থাকলেও নেই শিক্ষার্থীদের জন্য একাডেমিক ভবন।