বিশ্ববিদ্যালয় খোলার দাবিতে জাবিতে প্রতীকী ক্লাস
বিশ্ববিদ্যালয় খোলার দাবিতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) আগামীকাল থেকে শুরু হচ্ছে প্রতীকী প্রতিবাদী ক্লাস। ক্যাম্পাসে উন্মুক্ত স্থানে নেওয়া হবে ক্লাস। স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিশ্ববিদ্যালয়ের যেকোনো শিক্ষার্থী এই ক্লাসে অংশ নিতে পারবে।
আগামীকাল বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পাদদেশে প্রথম ক্লাস নিবেন দর্শন বিভাগের অধ্যাপক রায়হান রাইন। ক্যাম্পাস খোলা পর্যন্ত এই কর্মসূচি চলতে থাকবে বলে জানান আয়োজক শিক্ষকরা।
কর্মসূচি সম্পর্কে অধ্যাপক রায়হান রাইন এনটিভি অনলাইনকে জানান, বিশ্ববিদ্যালয় খোলার দাবিতে আমরা এই কর্মসূচি পালন করব। এখানে ধারাবাহিকভাবে অন্য শিক্ষকরা ক্লাস নিবেন।
প্রতীকী এই ক্লাসে যেকোনো শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করতে পারবে। তবে সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে অংশগ্রহণ করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বিনোদন কেন্দ্র, অন্যান্য প্রশাসনিক ও অর্থনৈতিক কার্যক্রম চালু থাকলে বিশ্ববিদ্যালয় কেন খোলা যাবে না? বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে আবাসিক শিক্ষক আছেন, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরাও করোনা বিষয়ে সচেতন। তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় স্বাস্থ্যবিধি মেনে খুলে দেওয়া সবচেয়ে সহজ। ক্লাস নেওয়ার মাধ্যমে এটাই প্রমাণ করতে চাই যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিশ্ববিদ্যালয় খোলা সম্ভব।
আর কোনো শিক্ষক ক্লাস নিতে পারেন এমন প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক রায়হান জানান, অনেক শিক্ষক ক্লাস নিতে ইচ্ছুক। তাঁরা হলেন অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, অধ্যাপক সাঈদ ফেরদৌস, অধ্যাপক এ এস এম আনোয়ারুল্লাহ ভূঁইয়া, অধ্যাপক মো. জামাল উদ্দীন, অধ্যাপক মানস চৌধুরী, অধ্যাপক শামীমা সুলতানা প্রমুখ।
এ বিষয়ে অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে থাকলে যতটা নিরাপদ থাকবে তার চেয়ে আশেপাশে আরও বেশি অনিরাপদ অবস্থায় আছে। সেপ্টেম্বরের শুরু থেকে যাতে বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দিয়ে শিক্ষার্থীদের দ্রুত হলে উঠার ব্যবস্থা করা হয় সেজন্য আমরা সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছি। ধাপে ধাপে বিশ্ববিদ্যালয় খোলার পাশাপাশি চিকিৎসাকেন্দ্রের সক্ষমতা বাড়াতে হবে। বিভিন্ন টেস্টসহ করোনা সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় সেবার ব্যবস্থা থাকতে হবে।’
আনু মুহাম্মদ আরও বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক’ নামে সারাদেশে আমাদের একটি সংগঠন আছে। সেখান থেকেই গতকাল সংবাদ সম্মেলনে এই কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। প্রতীকী এই ক্লাস সারা দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে চলবে। এই কর্মসূচি বিশ্ববিদ্যালয় খোলার বিষয়ে জনমত তৈরি করবে।’
সংবাদ সম্মেলনে বিশ্ববিদ্যালয় খোলার ক্ষেত্রে কিছু করণীয় প্রস্তাব দেয় বিশ্ববিদ্যালয়ভিত্তিক শিক্ষকদের এই সংগঠন। প্রস্তাবগুলো হলো ১. বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো যাতে শুধু শিক্ষকদের তত্ত্বাবধানে পরীক্ষার্থীরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে হলে অবস্থান করতে পারেন, তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। এ ছাড়া হলগুলোতে প্রাথমিক চিকিৎসা এবং শিক্ষার্থীদের আবাসন সংকট নিরসনের সিদ্ধান্তগুলো নিয়ে কাজ করে পুরোদমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার প্রক্রিয়ায় যেতে হবে। ২. বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলোয় শিক্ষার্থীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করোনা পরীক্ষা ও টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। ক্যাম্পাসে ব্যবস্থা করা গেলে সবচেয়ে ভালো হয়, তাতে শিক্ষার্থীরা ভিড় এড়িয়ে টিকা নিতে পারবে। ৩. ক্যাম্পাসগুলোয় অবস্থিত চিকিৎসাকেন্দ্রগুলোর সক্ষমতা বাড়ানো, আইসোলেশনের ব্যবস্থা, অসুস্থ হলে শিক্ষার্থীদের দেখাশোনার ব্যবস্থা উন্নত করার কোনো বিকল্প নেই। এ বিষয়ে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিতে হবে। ৪. অনলাইনে সুষ্ঠুভাবে পড়াশোনা চালিয়ে নেওয়ার জন্য শিক্ষার্থীদের জন্য স্বল্পমূল্যে দ্রুতগতির ইন্টারনেট সার্ভিসের বিশেষ প্যাকেজের ব্যবস্থা চালু করতে হবে। ৫. ঝরেপড়া শিক্ষার্থীদের খুঁজে বের করে তাঁদের শিক্ষায় ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করা ইত্যাদি।