লাল শাপলার লেকগুলো অতিথি মুখর
লাল-শাপলায় সুশোভিত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের লেকগুলো। শীতের আগমনী বার্তা নিয়ে এখানে বেড়াতে এসেছে পরিযায়ী পাখি। অতিথিদের কলকাকলি, ঝাঁকে ঝাঁকে বিচরণ, জলকেলি আর খুনসুটিতে মুখর হয়ে উঠেছে ক্যাম্পাস। জলাশয়জুড়ে লাল-শাপলার শোভা নিসর্গমণ্ডিত বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌন্দর্য আরও বাড়িয়ে দিয়েছে বহুগুণ। বিভিন্ন প্রজাতির অতিথি পাখির বাহারি খেলায় মেতে ওঠার দৃশ্যে লেকগুলো এখন জানান দিচ্ছে গ্রাম বাংলার চিরচেনা সেই মনোরম পরিবেশ।
প্রতি বছর হিমালয়ের উত্তরের দেশ সাইবেরিয়া, চীন, মঙ্গোলিয়া ও নেপালে প্রচুর তুষারপাতের কারণে পাখিরা বাংলাদেশের মতো নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে চলে আসে। তাই দূর-দূরান্ত থেকে আসা অতিথিদের স্বাগত জানায় জাবি ক্যাম্পাস। শীত চলে গেলে তারাও চলে যায় তাদের আপন ঠিকানায়। পাখি সুরক্ষায় নতুনরূপে সেজেছে এখানকার লেকগুলো। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছোট-বড় ১০ থেকে ১২টি লেক থাকলেও পাখি আসে মূলত চার থেকে পাঁচটিতে।
ক্যাম্পাসে আসা পাখির মধ্যে বেশিরভাগই হাঁস জাতীয়। এর মধ্যে সরালি, পচার্ড, ফ্লাইফেচার, গার্গেনি, ছোট জিরিয়া, মুরগ্যাধি, কোম্বডাক ও পাতারি অন্যতম। এছাড়া অন্য প্রজাতির পাখির মধ্যে উল্লেখযোগ্য মানিকজোড়, কলাই, ছোট নগ, জলপিপি, নাকতা, খঞ্জনা, চিতাটুপি, লাল গুড়গুটি প্রভৃতি।
অতিথি পাখির পাশাপাশি বিভিন্ন প্রজাতিসহ বিলুপ্ত প্রজাতির পাখিরও দেখা মেলে এখানে। জলময়ুর, ডুবুরি, খোঁপা ডুবুরি, ছোট পানকৌরি, বড় পানকৌরি প্রভৃতি প্রজাতির পাখি বেশি দেখা যায়।
শহরের যান্ত্রিকতা আর ধুলাবালিমুক্ত প্রকৃতি ও পাখির ছোঁয়া পেতে এই ক্যাম্পাসের লেকগুলোর পাড়ে ভিড় জমান শত-শত পাখিপ্রেমীরা। এখানের ছোট-বড় আধভাঙা উঁচু ঢিবি আর জলাশয়ের পাড়ে সরালিরা ঝাঁক বেঁধে উড়ছে সাঁই সাঁই করে। পরক্ষণেই ঝপাৎ করে বসে যাচ্ছে জলাধারে। কোনটি আবার সাঁতার কাটছে আপন মনে। পাখিদের কলকাকলি, জলকেলী, খুনসুটি, পুরো ক্যাম্পাসের আকাশে মনের সুখে দলবেঁধে উড়ে বেড়ানো। এই সৌন্দর্য নিজ চোখে না দেখলে বোঝা যাবে না।
অতিথি পাখিদের যেন কেউ বিরক্ত না করে সেজন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন লেকের চারপাশে কাঁটাতারের বেড়া দিয়েছে। তাছাড়া কিছু নিদের্শনা সম্বলিত বিল বোর্ডও লেকের পাশে টাঙ্গানো হয়েছে। যেখানে লেখা আছে ঢিল ছুড়বেন না, দূরত্ব বজায় রেখে পাখি দেখুন, আমাকে বিরক্ত করবেন না, হর্ন বাজানো নিষেধ ইত্যাদি।
পাখিদের অভয়ারণ্য নিশ্চিত করনে প্রশাসনের পদক্ষেপ সম্পর্কে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার (এস্টেট) মো. আ. রহমান জানান, অতিথি পাখিদের যেন কেউ ঢিল ছুড়তে না পারে সেজন্য লেকগুলোর আশেপাশে পর্যাপ্ত পরিমাণে নিরাপত্তা বেষ্টনী দেওয়া হয়েছে। লেকগুলো সংস্করণ কাজ করা হয়েছে। পাখিদের সুরক্ষায় লেকগুলোর আশেপাশে সচেতনতামূলক বিলবোর্ড স্থাপন করেছি।
এ বছর পাখি সংখ্যা কম কেন? জানতে চাইলে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও পাখি গবেষক মো. কামরুল হাসান জানান, এ বছর সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময় থেকে অতিথি পাখিরা আসতে শুরু করেছে। পাখিরা কোলাহলবিহীন পরিবেশ পছন্দ করে। ভর্তি পরীক্ষার সময় ক্যাম্পাসে মানুষের ভিড় বেশি থাকার কারণে পাখি সংখ্যা কম। তবে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে অতিথি পাখির সংখ্যা বাড়বে।
কামরুল হাসান আরও বলেন, ‘সাধারণত পাঁচ থেকে থেকে প্রজাতির হাঁস জাতীয় পাখিরা বেশি আসে। গত বছর করোনা মহামারি থাকার করনে ১০ থেকে ১২ প্রজাতির পাখি দেখা গিয়েছিল।
এছাড়াও কামরুল হাসান আরও বলেন, ‘প্রতি বছর প্রাণিবিদ্যা বিভাগের তত্ত্বাবধানে পাখি মেলার আয়োজন করা হয়। পাখি মেলার মাধ্যমে পাখিদের সাথে মানুষের পরিচিতি ঘটে। পাখির সুষ্ঠু পরিবেশ ও পাখি সংরক্ষণে সচেতনতা বৃদ্ধি পায়। করোনা মহামারির কারণে গত বছর পাখি মেলা আয়োজন করা সম্ভব হয়নি। এ বছর জানুয়ারির প্রথম দিকে পাখি মেলার আয়োজন করা হবে।’