শত্রুতা ভুলে একসঙ্গে
করোনাকালে শিক্ষার্থীশূন্য জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) ক্যাম্পাসে প্রাণ-প্রকৃতির রাজত্ব। সন্ধ্যা নেমে এলে নির্জন ক্যাম্পাস পাখির কিচিরমিচির শব্দে হয়ে ওঠে মুখর। সবুজ জঙ্গল থেকে ভেসে আসে শিয়ালের ডাক। কোলাহলশূন্য আবাসিক হলের ভবন। বন্ধ বটতলার হোটেল ও দোকানগুলো। তাই খাদ্য সংকটে ক্যাম্পাসে ছুটে বেড়াচ্ছে কুকুর ও বিড়ালগুলো।
এ সব প্রাণীর জীবন বাঁচাতে এগিয়ে এসেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. আলী আযম তালুকদার। প্রতিদিন রাতে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে দিচ্ছেন খাবার। সেখানেই ঘটেছে এক বিচিত্র ঘটনা। কুকুরের সঙ্গে খাবার খাচ্ছে পাশের জঙ্গল থেকে আসা শিয়াল। ক্ষুধার তাড়নায় কুকুর-শিয়াল চির বৈরী সম্পর্ক ভুলে মিলেছে এক সুঁতোয়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জাবি ক্যাম্পাসে রাত ১১টায় খাবার নিয়ে হাজির হয় একটি গাড়ি। গাড়ি দেখেই ছুটে আসে বিড়াল ও কুকুর। গাড়ি দেখেই প্রাণীগুলো বুঝতে পারে খাবার চলে আসছে। বিভিন্ন স্থানে খাবার দেওয়া মাত্রই কুকুর ও বিড়ালের পাশাপাশি জঙ্গল থেকে বের হয় শিয়াল। কুকুর-শিয়াল মিলে চলে খাবার গ্রহণের প্রতিযোগিতা। জীবন বাঁচানোর এই সংগ্রামে তারা ভুলে যায় শত্রুতা। শিয়ালের মনে কোনো ভয়-ভীতি কাজ করে না তখন। দিন দিনই কুকুরের সঙ্গে বাড়ছে শিয়ালের সংখ্যা।
অধ্যাপক ড. আলী আযম তালুকদার বলেন, ‘ক্যাম্পাস বন্ধের শুরু থেকেই এই অসহায় প্রাণীদের খাবার সরবরাহ করে আসছি। প্রতিদিন সন্ধ্যার পরই রান্না শুরু হয়। ৩২টি কুকুর, ১১টি বিড়াল ও ২০টি শিয়ালকে নিয়মিত খাবার দিচ্ছি। প্রথমদিকে শিয়ালের সংখ্যা কম ছিল, ক্ষুধার তাড়নায় তাদের সংখ্যা বাড়ছে। আমাকে দেখলেই কাছে ছুটে আসে কুকুর ও বিড়ালগুলো। দিনের বেলা গাড়িতে খাবার না থাকলেও এগিয়ে আসে। এটাই হলো মানুষের প্রতি পশুর প্রেম।’
আলী বলেন, ‘প্রথমদিকে কুকুর-বিড়ালকে খাবার দেওয়া আমার অনেক সহকর্মীরা ভালোভাবে নিতেন না। কারণ খাবারের জন্য প্রাণীগুলো আশেপাশে ঘোরাঘুরি করতো। বাচ্চারা ভয় পেতো। মানবিক দিক বিবেচনা করে অনেকেই এখন এ কাজে সহযোগিতা করতে আগ্রহী। এ পর্যন্ত খাদ্য যোগানের পুরো ব্যবস্থাপনা আমার নিজস্ব অর্থায়নেই সম্পন্ন করছি। এ কাজে আমার হল, বিভাগ ও পরিবহণ অফিসের কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী সহযোগিতা করছেন।’
খাদ্য সরবরাহের এ কাজ কতদিন চালাবেন? প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক ড. আলী আযম বলেন, ‘ক্যাম্পাস সম্পূর্ণভাবে চালু না হওয়া পর্যন্ত এ কাজ চালিয়ে যাব। অভুক্ত ও অসহায় প্রাণীগুলোর প্রতি ভালোবাসা থেকেই কাজটি করছি। সবাই তার আশেপাশের অভুক্ত প্রাণীদের পাশে দাঁড়ালে বেঁচে যাবে প্রাণীকূল আর জয় হবে মানবতার।’