ঢাবিতে প্রাধ্যক্ষকে তিন ঘণ্টা অবরুদ্ধ করল ছাত্রলীগ
হলের সিট নিয়ে বিরোধের জের ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অমর একুশে হলের প্রাধ্যক্ষকে প্রায় তিন ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। গতকাল মঙ্গলবার গভীর রাতে এ ঘটনা ঘটে।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত রাতে হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আমিনুল ইসলামকে অবরুদ্ধ করে তাঁর পদত্যাগ দাবি করে ছাত্রলীগ। তাঁর ব্যক্তিগত গাড়ি ও হলের প্রশাসনিক কক্ষে ব্যাপক ভাঙচুর চালানো হয়।
প্রায় তিন ঘণ্টা অবরুদ্ধ থাকার পর রাত ৩টা ২০ মিনিটে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের হস্তক্ষেপে এবং ছাত্রলীগ নেতাদের দাবি-দাওয়া পূরণের আশ্বাস দেওয়ার পর মুক্ত করা হয় অবরুদ্ধ প্রাধ্যক্ষকে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গতকাল নিয়মিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে হল প্রাধ্যক্ষের নেতৃত্বে হলের আবাসিক শিক্ষকরা বিভিন্ন কক্ষে তল্লাশি চালান। এ সময় হলের রফিক ভবনের ৫০১ নম্বর কক্ষের দুজন ছাত্রকে একই হলের সালাম ভবনের ৪০৩ নম্বর কক্ষে স্থানান্তর করতে চান আবাসিক শিক্ষকরা। এতে ছাত্রলীগের এক নেতা বাধা দিলে তার বিছানার চাদর জব্দ করে প্রশাসনিক রুমে নিয়ে যান শিক্ষকরা। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা হলের প্রাধ্যক্ষের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু করে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হল প্রাধ্যক্ষ দীর্ঘদিন ধরেই অবৈধ শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দিয়ে আসছিলেন। এদের মধ্যে হলের কয়েকজন ছাত্রলীগের পদধারী নেতাও রয়েছেন। এরই জের ধরে গতকালের ঘটনায় ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন ওই নেতারা।
একপর্যায়ে হলের সব ছাত্রলীগের নেতাকর্মী প্রাধ্যক্ষের রুম ঘিরে তাঁর পদত্যাগ দাবি করেন। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এবং ছাত্রলীগের নেতারা এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করেন।
এর পরও হলের ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা অবরোধ প্রত্যাহার না করলে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি আবিদ আল হাসান নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, ‘যদি তোমরা বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী হও এবং আমাদের অভিভাবক মেনে থাকো, তাহলে প্রত্যেক নেতা তার কর্মীদের নিয়ে রুমে ফিরে যাও। আর যদি না যাও, তাহলে আমরা চলে যাচ্ছি তোমরা তোমাদের মতো যা ইচ্ছা তাই করো।’ তখন সব নেতা নিজের কর্মীদের নিয়ে রুমে ফিরে যায়। পরে প্রক্টরসহ ছাত্রলীগ নেতারা প্রাধ্যক্ষকে বাসায় পৌঁছে দেন।
তবে ওই ঘটনায় ছাত্রলীগের জড়িত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন আবিদ আল হাসান। তিনি বলেন, ছাত্রলীগ জড়িত থাকার বিষয়টি একেবারেই ভিত্তিহীন। হলের সব ছাত্র এক হয়ে এ প্রতিবাদ করেছে। তিনি বলেন, ওই হলের প্রাধ্যক্ষ যখন তখন শিক্ষার্থীদের চার্জ করেন। ছোটখাটো কোনো দোষ পেলে আজীবনের জন্য হল থেকে বহিষ্কার করেন। এ ছাড়া যাঁরা প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী আছেন, তাঁদের পয়লা বৈশাখের খাবারের টোকেন দেওয়া হয়নি। এসব মিলিয়ে হলের সব ছাত্র স্যারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছেন।
হল প্রশাসনের স্বেচ্ছাচারিতার প্রতিবাদে হলের সাধারণ শিক্ষার্থীরা একযোগ হয়ে প্রতিবাদ করেছিল বলে জানান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মোতাহার হোসেন প্রিন্স।
এ বিষয়ে অমর একুশে হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আমিনুল ইসলাম এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা রাতে যে আচরণ করেছে, এটা কারো কাছে কাঙ্ক্ষিত ছিল না। তা ছাড়া বয়সের একটা ব্যাপার আছে। সঠিক করলে বুঝতে পারবে, সঠিক না করলে তার প্রতিদান পাবে।’
ঘটনা সম্পর্কে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. আমজাদ আলী বলেন, ‘ছাত্ররা বেশ কিছু দাবিতে স্যারকে অবরুদ্ধ করে রেখেছিল। আমরা প্রাধ্যক্ষ মিটিংয়ে ছাত্রদের সেসব দাবি নিয়ে কথা বলার আশ্বাস দিলে তারা স্যারকে অবরুদ্ধ করে রাখার অবস্থা থেকে সরে আসে।’