জাবির জার্নালিজম বিভাগের সভাপতির পদত্যাগ দাবি
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) জার্নালিজম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের সভাপতি আমিনা ইসলামের পদত্যাগ দাবি করেছেন বিভাগটির শিক্ষকরা। সাতটি নির্দিষ্ট অভিযোগ এনে তাঁর প্রতি অনাস্থা জানিয়ে ও পদত্যাগ চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর চিঠি পাঠিয়েছেন তাঁরা।
ওই বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শেখ আদনান ফাহাদ এনটিভি অনলাইনকে বিষয়টি জানিয়েছেন। তিনি বলেন, গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের সঙ্গে দেখা করে এ চিঠি হস্তান্তর করা হয়।
ফাহাদ জানান, চিঠিতে তিনি ছাড়াও স্বাক্ষর করেছেন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক উজ্জ্বল কুমার মণ্ডল, রাকিব আহমেদ।
লিখিত অভিযোগে শিক্ষকরা উল্লেখ করেন, ‘বিভাগের বর্তমান সভাপতি আমিনা ইসলাম শিক্ষকদের সম্মানহানি, অসৌজন্যমূলক ও প্রভুসুলভ আচরণ, একের পর এক অনিয়ম-দুর্নীতি, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের হুমকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন, স্বেচ্ছাচারিতা ও দায়িত্বজ্ঞানহীনতার সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিয়ে গেছেন। তাঁর প্রশ্নবিদ্ধ কার্যক্রমগুলো প্রাতিষ্ঠানিক ও শিক্ষা-সংক্রান্ত বিষয়ে আপত্তিকর বিধায় আমরা তাঁর প্রতি অনাস্থা জ্ঞাপনের সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছি।’
চিঠিতে সভাপতি আমিনা ইসলামের বিরুদ্ধে যে সাতটি অভিযোগ আনা হয়, সেগুলো হলো : বিভাগের শিক্ষকের ওপর পুলিশের হামলার বিষয়ে বিভাগীয় সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতা ও নৈতিক-যৌক্তিক আন্দোলন বন্ধের অপচেষ্টা; অসৌজন্যমূলক আচরণ; একাডেমিক কমিটির সভার কার্যবিবরণী পরিবর্তন; ভয়ভীতি ও হুমকি প্রদানকারী; ক্যামেরা ক্রয়সংক্রান্ত দুর্নীতি ও অনিয়ম; শিক্ষা সফর বিষয়ে অসহযোগিতা এবং বিভিন্ন দিবস ও অনুষ্ঠান পালনে রহস্যময় নীরবতা।
এসব অভিযোগের বিস্তারিত বিবরণ উপাচার্য বরাবর জমা দিয়েছেন ওই শিক্ষকরা। এতে উল্লেখ করা হয়, কয়েক দিন আগে বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রাকিব আহমেদের ওপর পুলিশের হামলার বিষয়ে বিভাগের সভাপতি হিসেবে কোনো ধরনের সভা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি আমিনা ইসলাম। উপরন্তু শিক্ষার্থীদের ভয়ভীতি ও হুমকি দিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের চলমান যৌক্তিক আন্দোলন নস্যাৎ করার হীন চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।
এ ছাড়া আমিনা গত ফেব্রুয়ারিতে তৃতীয় বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষা কমিটির সভাপতিকে বিভাগের তৃতীয় শ্রেণির একজন কর্মচারী দিয়ে অপমান করেছেন বলে দাবি করেন তাঁরা। বিভিন্ন একাডেমিক সভার সিদ্ধান্ত, কার্যবিবরণী ও প্রয়োগে স্বেচ্ছাচারিতা বর্তমান সভাপতির অভ্যাসে পরিণত হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয় চিঠিতে।
আমিনা ইসলাম বিভিন্ন সময়ে বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বরখাস্ত ও বহিষ্কারের হুমকি দিয়েছেন বলে অভিযোগ করেন এ তিন শিক্ষক। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের টাকায় বিভাগের জন্য একটি ভিডিও ক্যামেরা ক্রয়সংক্রান্ত দুর্নীতির অভিযোগও তোলেন তাঁরা। তাঁদের অভিযোগ, কোনো ধরনের সভা না করে নিজের পরিচিত লোকের মাধ্যমে প্রায় ৮০ হাজার টাকা বেশি খরচ করে ভিডিও ক্যামেরা কেনেন আমিনা।
অভিযোগকারী তিন শিক্ষক দাবি করেন, ‘বিভাগীয় সভাপতি আমিনা ইসলাম জার্নালিজম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের সভাপতির দায়িত্ব পালনের নৈতিক অধিকার হারিয়েছেন। বিভাগের শিক্ষক হিসেবে, তাঁর সহকর্মী হিসেবে নিজেদের নিরাপদ মনে করছি না।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে এনটিভি অনলাইনকে মুঠোফোনে আমিনা ইসলাম বলেন, ‘এই মাত্র তোমার কাছেই এটা শুনলাম। এখন এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে পারব না। আগে দেখি, উপাচার্য মহোদয় কী বলেন। শুনি, তার পর দেখা যাবে।’
উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম সকালে এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘একটা জরুরি মিটিংয়ে আছি। এ বিষয়ে পরে কথা বলব।’