সংকট নিরসনে দুই মাস ছুটিতে জাবি?
গ্রীষ্মকালীন অবকাশ ও রমজানকে সামনে রেখে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই মাস ছুটির সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন। গত শনিবার সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আগামী ২৬ মে থেকে ২৫ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকবে। দীর্ঘ এ সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হবে বলে মনে করছেন অনেক শিক্ষক-শিক্ষার্থী। আবার কেউ কেউ মনে করছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি বিভাগে চলমান সংকট নিরসনেই প্রশাসন এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
গত বুধবার এক প্রশাসনিক আদেশে ২৬ মে থেকে ১৪ জুন পর্যন্ত গ্রীষ্মকালীন ছুটি ঘোষণা করে প্রশাসন। তবে আকস্মিক সিন্ডিকেট সভায় এ ছুটি ২৫ জুলাই পর্যন্ত বাড়িয়ে ২০ দিন থেকে করা হয় দুই মাস। এ নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে শিক্ষক-শিক্ষার্থী মহলে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের যুক্তি, পুরো রমজান মাস দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতে সরকারের তরফ থেকে নির্দেশনা পাওয়া গেছে। এর প্রতিক্রিয়ায় শিক্ষার্থীদের অভিমত, সে ক্ষেত্রে গ্রীষ্মকালীন ছুটি কিছুদিন কমিয়ে দেওয়া যেত। বিভিন্ন আড্ডাস্থলসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে এ ছুটির সমালোচনা করেছেন তাঁরা। অনেকে এ ছুটিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসিয়াল ছুটির ‘রেকর্ড’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। তাঁদের আশঙ্কা, যেসব বিভাগ সেমিস্টার পদ্ধতি অনুসরণ করে সেসব বিভাগের শিক্ষার্থীরাই বেশি বিপাকে পড়বেন।
এ বছরের শুরুর দিকের কয়েক মাসজুড়ে রাজনৈতিক অস্থিরতায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হয়েছে। পরিস্থিতি শান্ত হওয়ার পর আবারও সচল হয়ে ওঠে শিক্ষা কার্যক্রম। এরই মধ্যে হঠাৎ দুই মাসের ছুটি সেশন জট বাড়ানোসহ শিক্ষা কার্যক্রমের স্বাভাবিক ধারাকে ব্যাহত করবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়েরশিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের ৩৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থী এহসানুল হক এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘এমনিতেই আমাদের বিভাগসহ বেশ কিছু বিভাগ সেশন জটের কবলে পড়েছে। এখন এ দীর্ঘ ছুটি বিদ্যমান সেশন জটকে আরো প্রকট রূপ দেবে এবং নিশ্চিতভাবেই তা আমাদের শিক্ষাজীবনে একটি বিরূপ প্রভাব ফেলবে।’
অনেক শিক্ষক-শিক্ষার্থী আবার প্রশাসনের এ সিদ্ধান্তকে বিভিন্ন বিভাগে চলমান অচলাবস্থা নিরসনের একটি কৌশল হিসেবে দেখছেন। তাঁরা মনে করেন, সমস্যা সমাধানে ব্যর্থ হয়ে প্রশাসন এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। নবনির্মিত একটি ভবনের তৃতীয় তলায় স্থান বরাদ্দের দাবিতে প্রায় দেড় মাস ধরে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে তিনটি বিভাগ। এদের মধ্যে ভবনে ওঠার পর আন্দোলন প্রত্যাহার করে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করেছে পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগ। তবে আন্দোলন অব্যাহত রেখে শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রেখেছে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ও ভূতাত্ত্বিক বিজ্ঞান বিভাগ। একই দাবিতে গত বুধবার থেকে অফিস চলাকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন অবরোধ করে কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন এ দুই বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
অন্যদিকে বিভাগীয় সভাপতির পদত্যাগের দাবিতে সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগের শিক্ষকরা শিক্ষা কার্যক্রম থেকে বিরত আছেন। এ ছাড়া একই দাবিতে গত ৪ এপ্রিল থেকে অচলাবস্থা বিরাজমান নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগেও। তবে শনিবার এর একটি সমাধান হলেও দীর্ঘ এ ছুটির কারণে ওই বিভাগের শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হতে আরো অপেক্ষা করতে হবে শিক্ষার্থীদের।
প্রশাসনের এমন কৌশলের সমালোচনা করে সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক নাসিম আখতার হোসাইন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে সংকট সমাধান করতে চাওয়া প্রশাসনের ভুল সিদ্ধান্ত। এমনিতেই কয়েক মাসের জাতীয় পর্যায়ের অস্থিরতার কারণে শিক্ষা কার্যক্রমে স্থবিরতা নেমে এসেছিল। এখন তা আবার ধারা ফিরে পেয়েছিল। এমন অবস্থায় হঠাৎ করে দুই মাস ছুটি দিয়ে সে ধারাকে রোধ করা হয়েছে। রমজান পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় খোলা রাখা যেত। এর ফলে শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য আবুল হোসেন এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘এমনিতেই ১৪ জুন পর্যন্ত আমাদের ছুটি ছিল। পরে সরকারের নির্দেশনার কারণে রমজানেও বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। আলাদাভাবে দুই বার ছুটি হলে শিক্ষার্থীদের আবার ক্যাম্পাসে এসে কয়েক দিন পরই বাসায় ফিরে যেতে হতো। আর গ্রীষ্মকালীন ছুটি কমিয়ে দিলে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অসন্তোষ প্রকাশ করতেন। তাই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’