দ্বিতীয় ধাপে ভোট পড়েছে ৩৭ দশমিক ৫৭ শতাংশ : ইসি
ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদের প্রথম ধাপের মতো দ্বিতীয়ধাপেও ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) চেয়ে ব্যালটে ভোট বেশি পড়েছে। আর কিছু কিছু উপজেলায় অস্বাভাবিক ভোট পড়েছে। প্রথম ধাপে ইভিএমে মাত্র ৩১ দশমিক ৩১ শতাংশ ভোট পড়লেও দ্বিতীয়ধাপে পড়েছে ৩২ দশমিক ১৭ শতাংশ। একইভাবে বেড়েছে ব্যালটে ভোট পড়ার হার। প্রথমধাপে ব্যালটে ভোট পড়েছিল ৩৭ দশমিক ৩১ শতাংশ। এবার দ্বিতীয়ধাপে পড়েছে ৩৮ দশমিক ৪৭ শতাংশ।
দ্বিতীয় ধাপে ১৫৬ উপজেলার মধ্যে ১২৯টিতে ব্যালটে এবং ২৩টিতে ইভিএমে ভোট অনুষ্ঠিত হয়। প্রথমধাপে গড়ে ভোট পড়েছিল ৩৬ দশমিক ১৮ শতাংশ। এবার সেই ভোট পড়ার শতাংশ দ্বিতীয় ধাপে কিছুটা বেড়েছে। এই ধাপে গড়ে ভোট পড়েছে ৩৭ দশমিক ৫৭ শতাংশ।
আজ বুধবার (২২ মে) ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ এ তথ্য জানিয়েছেন। যদিও ইসির সংশ্লিষ্টরাই দ্বিতীয় ধাপে কম ভোট পড়তে পারে বলে ধারণা করেছিলেন। রিটার্নিং অফিসারদের পাঠানো তথ্যমতে, ৩০ শতাংশের কিছু বেশি ভোট পড়তে পারে বলে মঙ্গলবার বিকেলে জানিয়েছিলেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল।
প্রথম ধাপের মতো দ্বিতীয় ধাপেও ভোটার উপস্থিতি কম হলেও ব্যাপক জাল ভোট, ব্যালট বাক্স ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষ ও হতাহতের ঘটনাও ঘটেছে। সারাদিন ভোটার উপস্থিতি কম হলেও অনেক জায়গায় ভোট পড়ার হার অস্বাভাবিক পাওয়া গেছে। ইভিএমের চেয়ে ব্যালটে ভোট বেশি পড়ার কারণ হিসাবে অনেকে বলছেন, ইভিএমের চেয়ে ব্যালট পেপারে ভোটের ক্ষেত্রে অনিয়ম হয় বেশি। কেন্দ্রে দখল করে ব্যালট পেপারে সিলমারা ঘটনা ঘটে। ইভিএমে ব্যালটের চেয়ে অনিয়মের মাত্রা কিছুটা কম হয়। এখানে কেন্দ্র দখল হলেও ভোটারের ফিঙ্গার ছাড়া ভোট দেওয়া সম্ভব নয়। এ কারণে ব্যালট পেপারে অনুষ্ঠিত উপজেলাগুলোয় ভোটের প্রদত্ত হার বাড়তে পারে।
ভোট শেষে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল জানিয়েছিলেন, উপজেলা পরিষদের দ্বিতীয় ধাপে ৩০ শতাংশের বেশি ভোট পড়তে পারে। তবে ৩০ শতাংশ ভোটকে কখনোই উৎসাহব্যঞ্জক মনে করেন না। স্বল্প ভোট পড়ার একটা বড় প্রধানতম কারণ হিসাবে দেশের একটা বড় রাজনৈতিক দল; তারা প্রকাশ্যে এবং ঘোষণা দিয়ে ভোট বর্জন করেছে। জনগণকে ভোট প্রদানে নিরুৎসাহিত করেছে। আমাদের ভোট নিয়ে কোনো সংকট নেই। সংকট হচ্ছে রাজনৈতিক। রাজনীতি যদি আরো সুষ্ঠু ধারায় প্রবাহিত হয়, আগামীতে হয়তো ভোটের যে স্বল্পতার সমস্যা; এগুলো কাটিয়ে উঠবে। ভোটাররা উৎসাহিত হবে। ভোট আরও উৎসাহব্যাঞ্জক পরিবেশে অনুষ্ঠিত হবে।
নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীরের মতে, মোটা দাগে পাঁচ কারণে ভোট কম পড়েছে। এগুলোর মধ্যে বৈরি আবহাওয়া, ভোটে বিএনপি অংশ না নেওয়া, জনপ্রিয় প্রার্থীর অভাব, ধান কাটার মৌসুম এবং সাধারণ ছুটি থাকায় শ্রমিকরা নিজ এলাকায় চলে যাওয়ায় ভোট কম পড়েছে।
নির্বাচন সংশ্লিষ্টদের মতে, নির্বাচন ব্যবস্থাপনায় এক ধরণের অনাস্থার পরিবেশ থাকায় ভোটাররা ভোট বিমুখ হয়েছে। বিশেষ করে বিগত তিনটি জাতীয় নির্বাচন নিয়ে অস্বস্তি রয়েছে। সর্বশেষ বিগত ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর বড় একটি অংশ বর্জন করে। সেই ধারাবাহিকতায় উপজেলা ভোটেও বিএনপি-জামায়াত ভোট বর্জনের ঘোষণা দেয়। তাছাড়া ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ দলীয়ভাবে নির্বাচনে অংশ নেয়নি। ফলে বেশিরভাগ উপজেলায় আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে ভোটের লড়াই হয়। একঅর্র্থে আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বি ছিলো আওয়ামী লীগই। এতে করে সাধারণ ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে টানতে পারেননি প্রার্থীরা।
কিছু উপজেলায় অস্বাভাবিক ভোট
ইসির প্রস্তুত করা ফলাফল শিটে দেখা গেছে, কিছু কিছু উপজেলায় অস্বাভাবিক ভোট পড়ার হার। খাগড়াছড়ির পানছড়ি উপজেলা পরিষদে সর্বোচ্চ ভোট পড়েছে ৭৪ দশমিক ৯৫ শতাংশ। আর রাজশাহীর বাগমারা উপজেলায় সর্বনিম্ন ভোট পড়েছে ১৭ দশমিক ৯৮ শতাংশ। এ ছাড়া দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দিনাজপুরের বোচাগঞ্জে ৬৫ দশমিক ৮৭ শতাংশ, কাহারোলে ৬২ দশমিক ২৪ শতাংশ, নওগাঁওয়ের পোরশায় ৬৪ দশমিক ৪৩ শতাংশ, বাগেরহাটের ফকিরহাটে ৬২ দশমিক ৬০ শতাংশ ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈলে ৬১ দশমিক ৮১ শতাংশ।
পক্ষান্তরে কম ভোট পড়ার মধ্যে পাবনার চাটমোহরে ১৮ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ, যশোরের শার্শায় ১৮ দশমিক ৬৩ শতাংশ, চাঁদপুরের হাজিগঞ্জে ১৮ দশমিক ৪২ শতাংশ, নোয়াখালীর সেনবাগে ১৯ দশমিক ৬০ শতাংশ, রাজবাড়ি সদরে ২০ দশমিক ৬৪ শতাংশ। কম ভোট পড়া উপজেলাগুলোর বেশিরভাগ ভোট হয়েছে ইভিএমে। কোন উপজেলায় অতিরিক্ত বেশি ভোট আবার কোন উপজেলায় কম ভোট পড়ার চিত্র পাওয়া গেছে।
এবার চারধাপে উপজেলার ভোট হচ্ছে। এর মধ্যে গত ৮ মে প্রথম ধাপে ১৩৯ উপজেলায় ভোট হয়; ২১ মে দ্বিতীয় ধাপে ১৫৯ উপজেলার ভোট হয়েছে। পরবর্তীতে তৃতীয় ধাপের ১১২ উপজেলায় ভোটগ্রহণ ২৯ মে এবং চতুর্থ ধাপে ৫৫ উপজেলায় ভোট হবে ৫ জুন।