যেখানেই যাই, আমার পরিচয় ‘ফ্যামিলি ক্রাইসিস’
পূর্বনির্ধারিত সময় দুপুর ২টা, স্থান রাজধানীর নিকেতনের অফিস। ১১ জানুয়ারি সকাল ১০টায় খুদে বার্তায় এলো অফিসের ঠিকানা। নির্ধারিত সময়ের কিছুক্ষণ পরে অফিসে ঢুকেই দেখা মিলল জনপ্রিয় নির্মাতা মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজের, তিনি তখন কাজে ব্যস্ত। এর আগেই অবশ্য আসার খবর জানানো হয়েছে নির্মাতাকে। মিনিট পাঁচেক অপেক্ষার পর সময় পাওয়া গেল বর্তমান সময়ের অন্যতম জনপ্রিয় ধারাবাহিক নাটক ‘ফ্যামিলি ক্রাইসিস’-এর নির্মাতার।
এত আয়োজন করে এই নির্মাতার সঙ্গে আলাপচারিতা শুরুর কারণ, ১৮২ পর্বে শেষ হচ্ছে এনটিভির আলোচিত ধারাবাহিক নাটকটির সম্প্রচার। তার আগে এই ধারাবাহিকের আদি-অন্ত, আলোচনা-সমালোচনা নিয়ে এনটিভি অনলাইন বসেছিল নির্মাতার সঙ্গে। দীর্ঘ আলাপে ‘ফ্যামিলি ক্রাইসিস’ নিয়ে কথার ঝাঁপি খুলেছেন মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ।
এনটিভি অনলাইন : ২০১৯ সালের এপ্রিলে ‘ফ্যামিলি ক্রাইসিস’ নাটক শুরু হয়। এ ধারাবাহিকের শুরুর দিকের গল্পটা কেমন?
মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ : ধারাবাহিকের বেসিক কোনো পরিকল্পনা নেই। কারণ, আমার প্রফেশন হচ্ছে নাটক বানানো। একটা শেষ হলে আরেকটা শুরু করি। সেই প্রসেসে এনটিভিতে আমাকে একটা সিরিয়াল করতে বলা হয়। আমাকে একটা গল্প দিতে বলা হয়। যখন আমি কামাল ভাইকে (প্রয়াত এনটিভির সাবেক অনুষ্ঠান বিভাগের প্রধান মোস্তফা কামাল সৈয়দ) এই টাইপের একটা গল্প দিই, কামাল ভাইয়ের একটা ধারণা ছিল আমরা হিউমার বেস কাজ করি, কমেডি বেস কাজ করি। সিরিয়াস কোনো ফ্যামিলি গল্প করতে পারব কি না। আমি বললাম, করতে পারব। উনি বললেন, বেসিক গল্পটা কী। আমি বললাম, কোনো গল্প নেই। তাইলে কীভাবে বানাবা? উত্তরে বললাম, প্রতিদিনের ঘটনা আমি শুট করব। বেসিক কোনো স্টোরিলাইন নেই এই গল্পে। একটা ফ্যামিলিতে প্রতিদিন যা ঘটে, তা-ই আমি শুট করে দেখাব। তারপর তিনি দিলেন। এটার শুরুর দিকে এগ্রিমেন্টে কাস্টিং ছিল অনেকে। তৌসিফের নাম ছিল, তানজিন তিশার নাম ছিল, ইরফান সাজ্জাদের নাম ছিল, মম; এমন অনেকের নাম ছিল, কিন্তু আমি ওঁদের নিইনি। শুট করে জমা দেওয়ার পর আমার মনে আছে, পাভেল ভাই (মো. সাইফুল ইসলাম, অনুষ্ঠান ও যোগাযোগ বিভাগের জ্যেষ্ঠ নির্বাহী) আমাকে ফোন দিয়েছিলেন, ওরা কোথায়? আমি বলেছি, ওরা আসবে। পরে ওদের কথা ওরাও মনে রাখেনি, আমিও নিইনি। আমি শুরু থেকে ডিসাইড করেছি, ওদের আমি নেব না। কিন্তু প্রতিটা চ্যানেলে যখন একটা কাজ করতে হয়, শুরুর দিকে বলে যে বড় কাস্টিং লাগবে, এ রকম প্রমিনেন্ট কাউকে লাগবে। কখনো বলেনি গল্প অনুযায়ী কাস্টিং লাগবে। আমি সে কারণে নতুন কাস্টিং, মানে বড় একটা রিস্ক নিয়েছি। এনটিভি চাইলে আমার নামে মামলাও করতে পারত। যেহেতু এগ্রিমেন্টে সাইন করা। সেই রিস্কটা আমি নিয়েছিলাম। এটা একটা বড় ধরনের ঘটনা এনটিভিতে ‘ফ্যামিলি ক্রাইসিস’ নিয়ে।
এনটিভি অনলাইন : এই ধারাবাহিকের নাম কেন এমন রাখলেন?
মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ : এই নাটকের বেসিক গল্পটা আমার। স্টোরিলাইনটা আমার। প্রতিদিন ফ্যামিলির গল্প দেখাব। এই নাম নিয়ে অনেক কাহিনি আছে। এটার স্ক্রিপ্ট করেছেন মারুফ রেহমান আর নাম ‘ফ্যামিলি ক্রাইসিস’। এনটিভি ইংরেজি নাম দিতে চায় না। ‘ফ্যামিলি ক্রাইসিস’ যে লেভেলের কমন শব্দ, এটার বাংলা করলে এতটা পপুলারিটি পেত না। অনেক বার্গেনিং ছিল। সম্প্রচারের আগ পর্যন্ত নাম চেঞ্জ করার জন্য আমার ওপর প্রেশার দেওয়া হয়েছিল। আমি বলেছি, আমার ওপর আস্থা রাখুন। এই নামটা সহজে মানুষ মনে রাখতে পারবে।
এনটিভি অনলাইন : পারিবারিক টানাপোড়েনের গল্পের কারণে এটি ব্যাপক দর্শকপ্রিয় হয়। গল্পই কি এ নাটকের সাফল্যের অন্যতম কারণ বলে মনে করেন?
মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ : আমি প্রথমে বলেছি, কামাল ভাইয়ের সঙ্গে প্রথম যেদিন মিটিং হয়েছিল, আমি বলেছিলাম, এটার কোনো গল্প নেই। আমি এখনো বিশ্বাস করি, ফ্যামিলি ক্রাইসিসে কোনো গল্প নেই। বাট, এটা হিট হওয়ার কারণ তো অবশ্যই একটা আছে। পপুলারিটি পেয়েছে, কতটুকু হিট হয়েছে, আমি জানি না। যারাই পছন্দ করেছে, তাদের তো নিশ্চয়ই একটা কারণ আছে। আমার এক ধরনের মত এবং দর্শকেরও হয়তো আলাদা মত থাকতে পারে। আমার যেটা মত—দর্শক যখন নাটকটা দেখছে, ওরা না ওদের নিজেদের খুঁজে পেয়েছে কোনো না কোনো ক্যারেক্টারে। ওরা হয়তো নিজের চরিত্র খুঁজে পেয়েছে, তা না হলে ওদের দেখা চরিত্র পেয়েছে, ওদের দেখা ড্রয়িংরুম পেয়েছে, ওদের দেখা বড় ভাই পেয়েছে, ছোট ভাই পেয়েছে, ওদের দেখা পরিচিত কোনো একটা ক্যারেক্টার কমন পড়েছে। যে কারণে মানুষকে ইজিলি কানেক্ট করেছে।
এনটিভি অনলাইন : এই নাটকের প্রতিটি চরিত্রই জনপ্রিয় হয়েছে। ফিল্ম বা ড্রামা ক্রিটিকেরা বলেন, চরিত্র সৃষ্টি করতে পারলে দর্শককে আকর্ষণ করবেই। কোথাও কেউ নেই-এর মতো নাটকের কথা যদি বলি, তাহলে দেখা যায়, প্রতিটি চরিত্রই ব্যাপক দর্শকপ্রিয় হয়েছিল। ফ্যামিলি ক্রাইসিসেরও প্রতিটি চরিত্রই দারুণ সাড়া ফেলেছে।
মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ : ওই যে বললাম, কারোর সাথে কানেক্ট হয়েছে। আর একটা হচ্ছে, বাংলাদেশে অনেক সিঙ্গেল ড্রামা আছে, অনেক পপুলার; কিন্তু ক্যারেক্টারের নাম কেউ জানে না, দেখবেন... অনেক নামীদামি নাটক আছে, এত পপুলার... জিজ্ঞেস করলে ক্যারেক্টার, প্রধান চরিত্রের নাম কী ছিল, কেউ বলতে পারবে না। ধারাবাহিকের একটা সুবিধা আছে... যদি কোনো কারণে কোনো ক্যারেক্টার পরিচিত বা কানেক্টেড হয় দর্শকের সাথে; তাহলে নামটা মুখস্থ রাখে। ওই জায়গায় আমি লাকি যে ফ্যামিলি ক্রাইসিসের প্রতিটা ক্যারেক্টারের নাম জানে। সবচেয়ে বাজে যে চরিত্র, যাকে দেখলে দর্শক বিরক্ত হয়, তার নামটাও জানে। প্রতিটা ক্যারেক্টারের নাম জানে। শেফালী খালা, ঝুমুর, রায়হান, জসিম, খলিল, তুলি থেকে শুরু করে এমন কেউ নেই... সালমা ভাবির নাম সবাই জানে। এই যে একটাই কথা... দর্শক কানেক্ট করেছে নামসহ। যখন চরিত্র কানেক্ট করে, তখন নামটা মনে থাকে।
এনটিভি অনলাইন : শেফালী খালা সম্পর্কে আপনার মন্তব্য...
মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ : শেফালী খালা সম্পর্কে যদি বলতে চাই, শেফালী খালা চরিত্র করা হয়েছে। এবং সত্যি কথা বলতে, শেফালী খালার স্ক্রিপ্ট ওয়াইস প্রথম ১৩ পর্ব মাঝেমধ্যে আসবে, মাঝে-মাঝে চলে যাবে। এটা খালা ক্যারেক্টার। প্রথম দিন শুটিংয়ের সময় যখন উনাকে ব্রিফ করি... উনি একটা শব্দ বলেছিলেন, ‘কী’। আমি বলেছি, শব্দটা প্রতিটি ডায়ালগে দিয়েন। উনি এমনভাবে দিতেন... প্রথম জনপ্রিয় সংলাপ হচ্ছে মিঠু (মনিরা মিঠু) আপার, ‘কী’। তারপর মিঠু আপার ক্যারেক্টার আস্তে আস্তে বড় হতে থাকে। মিঠু আপার ক্যারেক্টার রেগুলার প্ল্যানিংয়ে ছিল না। কিন্তু রেগুলার হওয়ার জন্য যে ক্রেডিট, সেটা মিঠু আপার নিজের।
এনটিভি অনলাইন : সালমা ভাবি সম্পর্কে...
মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ : রুনা খান অনেক ভালো অভিনেত্রী। আমাদের যারা দর্শক, যাঁরা মিডিয়া ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করেন, তাঁরা সবাই জানেন উনি এত ভালো। উনি অরিজিনালি ভালো অভিনেত্রী। উনার সাথে আমার এটা প্রথম কাজ। এর আগে কোনোদিন কাজ হয়নি। উনি আমাকে এমনি চিনতেন, আমিও। কিন্তু আমার কাজ সম্পর্কে ধারণা নেই। আমাদের ব্যাপারে পুরো ইন্ডাস্ট্রিতে—আমাদের, মোস্তফা সরয়ার ফারুকী সম্বন্ধে একটা নেগেটিভ ইম্প্যাক্ট থাকে মানুষের। সেটা হলো, কোনো স্ক্রিপ্ট থাকে না, ওরা কেমন টাইপের কাজ করে… একটা নেগেটিভ চিন্তা থাকে। কিন্তু কাজ করার পর পুরোটা পজিটিভ হয়ে যায়, এটা অনেক বার দেখেছি আমরা। উনি প্রথমবার আসছেন, তাই একটু কনফিউজড মনে হয়েছিল আমার কাছে। কী করছি, কী না করছি। আমার একটা প্ল্যানিং ছিল... সবার সাথে আমার কথা ছিল, কেউ অ্যাক্টিং করবেন না। প্রতিটা চরিত্রে কারো অ্যাক্টিং করার দরকার নেই। খুব সিম্পল ডায়ালগ ডেলিভারি দিতে হবে। রুনা আপা যখন শুরু করেছিলেন, আমার অপিনিয়ন, রুনা আপা প্রথম শুট করে এনজয় করেননি... আমার কাছে মনে হয়। কারণ, উনি তো অভিনেত্রী বেসিক্যালি। উনি ক্যারেক্টার প্লে করতে জানেন, উনি নিজেকে ভাঙতে জানেন। নরমাল একটা ক্যারেক্টার ‘ভাবি’, কথা বলছে, পেছন দিয়ে হাঁটছে, ননদকে আদর করছে... যখন ফিডব্যাক পাওয়া শুরু হয়েছে, তখন হয়তো উনার ফিল হয়েছে, হয়তো এটা…
এনটিভি অনলাইন : ঝুমুর প্রসঙ্গে...
মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ : ঝুমুরের নাম হচ্ছে সারিকা সাবা। সারিকা সাবা প্রথম আমার একটা ওয়েব ফিকশন করেছিল। দুটি সিকোয়েন্স করেছিল। দুই সিকোয়েন্স করার সময় ওর অ্যাক্টিং দেখে মনে হয়েছিল, ও পারবে। এই ক্যারেক্টারের অন্য একটা আর্টিস্ট ছিল, এই সিরিয়ালে, যাকে প্ল্যান করে করা হয়েছিল তখন। ওর সাথে আমার দেখা হয়েছিল মাসুদ রানা নামের একটা ক্যাম্পিং ছিল, ওটার একটা শর্ট ফিল্মের শুটিংয়ে। তখন আমি বললাম, তুই কী করছিস। ও বলল, আমি নাটক করতে চাই। এমন কথা হচ্ছিল। আমার একটা ক্যারেক্টার আছে, ওকে আমি স্টোরিলাইনটা বলে কয়েকটা সিকোয়েন্স ইনবক্সে পাঠিয়েছিলাম। বলেছিলাম, তুই পড়ে দেখিস। এটা পা খোঁড়া একটা ক্যারেক্টার। অ্যাক্টিং করতে পারলে ক্যারেক্টার দাঁড়িয়ে যাবে। তারপর সে বলল, আমি করতে রাজি আছি। আমি তখন ডিসিশন চেঞ্জ করি। ক্যারেক্টারটা তাকে দেওয়া হলো এবং সে এই জায়গায় সাকসেস। এটার টোটাল ক্রেডিট সারিকা সাবার। এ পর্যন্ত আসার পেছনে আমাকে যদি জিজ্ঞেস করা হয়, ক্রেডিট ওর। কারণ, ও এই ক্যারেক্টারটা বিলিভ করে অ্যাক্টিং করছে।
এনটিভি অনলাইন : রায়হান সম্পর্কে...
মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ : শামীম হোসেন সরকারকে সবাই চেনে। অ্যাক্টিং করে, পপুলার একজন অভিনেতা। শামীমের একটা পয়েন্ট দেখবেন যে তার উচ্চারণ খুব সুন্দর। স্পষ্ট করে কথা বলে। ওর ব্যাপারে নতুন কিছু বলার নেই। ওর সাথে আমার আগে থেকেই পরিচয়। ওর সাথে অনেক কাজ করেছি। বললাম, সিরিয়াল করতে হবে। মাঝখানে অনেক গ্যাপ দিয়েছিল। আমি তাকে কাকা ডাকি ফান করে। এখন পার্মানেন্ট কাকা, জাতীয় কাকা হয়ে গেছে। কাকা একটু কাজ করতে হবে, সিরিজ করব। আচ্ছা ঠিক আছে। তারপর আমার এখানে এলো। এই অফিসে বসে মিটিং হয়েছে। আমি বললাম, এই এই গল্প... একটা বড় ভাই থাকবে, একটা বোন থাকবে, ফ্যামিলি থাকবে। সেও একটা ফ্যামিলি বিলং করে। তার বাবা আর্মি পার্সন ছিলেন। সে গিয়ে বলেছে। আঙ্কেল বলেছেন, ডেফিনেটলি করবি। আর বাবার যে সার্কেল, ওখানে অনেক পপুলার হয়েছে সিরিয়ালটা।
এনটিভি অনলাইন : রুমার চরিত্র...
মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ : শবনম ফারিয়া। ওর ক্যারেক্টারটা হচ্ছে, মানে এটা হচ্ছে আমার দেখা ক্যারেক্টার... নিজেদের বোন আছে... দেখা যায় যে এ রকম একটা বোন আছে পরিবারে, একটু অলস টাইপের থাকে, ঠিকমতো পড়াশোনা করে না, দেরিতে ঘুম থেকে ওঠে বা এদের সংসারে থাকে। এভাবে ওর কাস্টিং করা। ও ওর জায়গায় পারফেক্ট অ্যাক্টিং করেছে। ওর সাথে আমার প্রচুর কাজ হয়েছে এর আগে। ওর সাথে একটা সম্পর্ক আছে আমার, সেটা হচ্ছে ভাইবোনের সম্পর্ক। আপন বোনের চেয়েও কোনো অংশে কম নয়।
এনটিভি অনলাইন : চুমকি...
মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ : চুমকি নতুন মেয়ে, শেষের দিকে যুক্ত করি। একটা সিরিজ যখন বানাতে চাই, একটা ফ্যামিলির পাশাপাশি অনেকগুলো ক্যারেক্টার থাকে। একটা বিল্ডিং আছে, বিল্ডিংয়ে চারটা ফ্ল্যাট আছে। আমি যদি একটা ফ্ল্যাটের গল্প বলি... বাকিদের মাঝে-মাঝে রাখতে হয়। সে জন্য বিভিন্ন টাইমে বিভিন্ন টাইপের ক্যারেক্টার সিরিয়ালে ইন করা হয়েছে।
এনটিভি অনলাইন : ঝুমুরের বিয়ে নিয়ে ব্যাপক শোরগোল পড়েছিল অন্তর্জালে। কার সঙ্গে বিয়ে হবে, দর্শকের পছন্দ ও মতামত পাওয়া যাচ্ছিল অসংখ্য...
মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ : আমি জিনিসটাকে ক্রিয়েট করেছি। সে জিনিসটা অডিয়েন্স নিয়েছে, অ্যাকসেপ্ট করেছে। আর এটা নিয়ে আলোচনা করেছে, সমালোচনা করেছে। আমি আমার ডিসিশন মতো কাজ করছি। আমারটা তারা কেউ পছন্দ করেছে, কেউ পছন্দ করেনি। আমার একটা ফিলোসফি, আমি একজন নির্মাতা। আমি আমার গল্পটা বলব। আমার দায়িত্বটা কী, জানেন? আপনাকে পছন্দ করানোর দায়িত্বটা আমার। আমাদের যত নাটক-সিনেমা... যা-ই বলেন, সেটা ডিপেন্ড করে দর্শকের ওপর। দর্শকের পছন্দ হলেই আমি সাকসেস। আমার অপিনিয়নটা আমি দর্শকের ওপর ফেলে দেব। দর্শকের পছন্দ করানোর দায়িত্বটা আমার। ডিসিশনটা আমি নেব...
এনটিভি অনলাইন : শবনম ফারিয়া ওরফে রুমাকে একটি কবিতা শুনিয়েছিল পারভেজ—তুমি আছ যত দিন, খেয়ে যাব তত দিন। এটি অন্তর্জালে ব্যাপক সাড়া ফেলেছিল, বিতর্কও হয়েছিল। টিকটক ভিডিও হয়েছিল...
মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ : পারভেজের যে ক্যারেক্টার, ওর ক্যারেক্টারটা আমি প্লে করেছিলাম—কোনো গ্রামের একটা পার্ট। ক্যারেক্টারটা শুরুর দিকে যে এত পপুলার হবে, আমি নিজেও জানতাম না সিরিয়াসলি। পপুলার হওয়ার পর একটা ক্যারেক্টারকে পৃথিবীর কোনো নির্মাতা অফ করে না। ডিরেক্টর হিসেবে আমি কখনো ফ্লপ আর্টিস্ট নিয়ে কাজ করি না। কোনো নির্মাতা একজন ফ্লপ আর্টিস্টকে নিয়ে কাজ করে? নতুন কাউকে নিয়ে করে, ফ্লপ জিনিসকে নিয়ে কেউ কাজ করে না। ফ্লপ ডিরেক্টরকে কখনো এনটিভি কাজ দেবে? কোনোদিনও দেবে না। আমরা যখন নতুন একটা আর্টিস্ট নিয়ে কাজ করি বা যার মধ্যে পটেনশিয়াল আছে, তাকে নিয়ে কাজ করি; তার কাজ অডিয়েন্স গ্রহণ করে, তাকে সবাই কন্টিনিউ করতে চায়। সেই প্রেক্ষিতে তাকে নিয়ে আসি কন্টিনিউ করার জন্য। তার পরও বিভিন্ন নেগেটিভ-পজিটিভ অনেক কিছু ছিল... ক্যারেক্টারটা অফও করা হয়েছে। পুরোই পার্সোনাল ব্যাপার... পাবলিকলি বলতে চাই না। কবিতার ব্যাপারে যেটা বলতে চাই, পারভেজ খুবই ট্যালেন্টেড একটা ছেলে। ও বেসিক্যালি ডিরেকশন দিতে চায়, অভিনয় খুব কম করতে চায়। ও আমাদের ছোটভাই কাজল আরেফিন অমির সাথে কো-ডিরেক্টর হিসেবে কাজ করে। কবিতাগুলো ওর। ও একদিন আমাকে এসে বলেছে, ভাই আমি একটা কবিতা বলি। আমি বলি, কী কবিতা বলো তো। ও বলে, এ রকম। আমি বলি, ঠিক আছে বলো। তবে যে কবিতাগুলো মানুষ নিচ্ছে... তারপরও প্রতিটা সিকোয়েন্সের আগে বলতাম, এই পার্টটা নিয়ে একটা কবিতা বলো। ভাইবোন নিয়ে একটা কবিতা বলো। ভাবিকে নিয়ে একটা কবিতা বলো। ও নিজের মতো করে বলতো। এই কবিতাটা না... কখনো আমি একবারও চিন্তা করিনি যে এই লেভেলের ব্যাড ইম্প্যাক্ট পড়বে। ফারিয়াকেও অনেক গালি খেতে হয়েছে, আমিও অনেক গালি খেয়েছি। বিভিন্ন টাইপের ভাইরাল হয়েছে। আমাদের দেশে যেটা হয়, আমরা নেগেটিভ জিনিস সবচেয়ে বেশি ভাইরাল করি, পজিটিভ জিনিস জীবনেও করি না। লাইফে একটা-দুইটা অ্যাক্সিডেন্ট ঘটতেই পারে। এটা একটা অ্যাক্সিডেন্টের মতো।
এনটিভি অনলাইন : করোনা নিয়ে যে পর্বগুলো হয়েছিল, দর্শক সেভাবে গ্রহণ করেনি। এ নিয়ে আপনার মন্তব্য কী?
মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ : এটা নিয়ে মতামত আছে। এই নাটকটা ফ্যামিলি ক্রাইসিস... আমি প্রথমেই বলেছি, প্রতিদিনেরই গল্প দেখাব। আমাদের সবচেয়ে বড় ক্রাইসিস গেছে ২০২০ সালে, করোনায়। এই ক্রাইসিসটা আমি কেন দেখাব না? আমি প্রতিদিনের ঘটনা বলছি সিরিজে এবং ২০২০ সালের গল্প বলছিলাম। আমি যদি আজকের গল্প বলি, আমার বাসার নিচে একটা ঘটনা ঘটে, আমি দেখাব না? সেই সেন্স থেকে আমি দেখাতে চেয়েছিলাম, আমি কিন্তু করোনাকে ইউস করতে চাইনি। প্রতিদিনের সেই ঘটনার ক্রাইসিসগুলো দেখাতে চেয়েছি। অনেকের কাছে ক্রাইসিস খুবই পজিটিভলি হয়েছে। ওই ক্রাইসিসের অনেক ইমোশন আমি দেখিয়েছি। অনেকের কাছে হয়নি। অনেকে বিরক্ত হয়েছে। বিরক্ত হওয়ার একটা কারণ, যেটা আমার মত, মানুষ এই লেভেলের হতাশায় ভুগেছে করোনা নিয়ে, ওটা আর দেখতে চায়নি স্ক্রিনে। হয়তো বা এই কারণে। করোনা-টাইমে আমি শুট করতে পারিনি। আমি এ গল্পটা করোনা ক্রাইসিস যাওয়ার পর শুট করেছি। তখন অডিয়েন্স রিলিফ পেয়েছে, আমরা এখন বের হতে পারছি, মুভ করতে পারছি। তখন এই জিনিসটা দেখতে পছন্দ করেনি।
এনটিভি অনলাইন : এ ধারাবাহিকের শেষ দিকে কিছু অসংলগ্ন গল্প ছিল বলে অভিযোগ দর্শকদের (যেমন, পাস করেই জিএম পদে রুমা চাকরি পায়)...
মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ : এটা খুব সহজ উত্তর। আমি আগেই বলেছি, এটার কোনো গল্প নেই। এটাতে গল্প খুঁজতে আসবেন না। প্রতিদিন যা ঘটে, আজকে আমি চা খেয়েছি, একটু পর পোলাও খাব। চায়ের পর পোলাও ইলজিক্যাল। ধরেন, আমি এখন ভাত খেয়েছি। একটু পর আমি পোলাও-মাংস খাচ্ছি। আমার ইচ্ছা হয়েছে খেতে। আমি প্রথমেই বলেছি, এটা ক্রাইসিসের গল্প। বেসিক চিত্র-গল্প নেই। গল্প যদি না থাকে, তাতে দোষের কিছু নেই। আমি ওভাবে প্ল্যান করে বানিয়েছি। আর ফারিয়ার যে ক্রাইসিস, ওটা আসলে যারা বলেছে যে এটা অসংলগ্ন এবং মাত্র পাস করে কীভাবে জিএম হয়েছে। ওরা মনে হয় পর্বটা দেখেনি। ওরা মনে হয় নাটকটা প্রোপারলি দেখেনি। ও কিন্তু জোর করে হয়নি। কোনো যোগ্যতা দিয়ে হয়নি। পারিবারিক একটা স্টোরি আছে যে ওকে ওই অফিসের একটা ছেলে পছন্দ করে, ওই অফিসে তার বড় ভাই জব করে, তার বড় ভাইকে তার বোন অফিসের যে ছেলেটা পছন্দ করে, তার বড় বোন টেকনিক্যালি সরিয়ে দিয়েছে ওখান থেকে। তার বড় ভাইয়ের চাকরি নেই, সেটা তার খুব গায়ে লেগেছে। ওই অফিসের ছেলে যেহেতু তাকে পছন্দ করে, তাকে ইউস করে ওই চেয়ারটা সে নিয়েছে। চাকরি ফ্যাক্ট না। আর তার টার্গেট হচ্ছে, সে অফিসে জয়েন করবে কোনো না কোনোভাবে। একটা মেয়েকে একটা ছেলে পছন্দ করে। মেয়ে এসে বলে, তোমাকে আমি পছন্দ করতে পারি... আমার এই জিনিসটা দিতে হবে। ওভাবেই চাকরিতে জয়েন করেছে...
এনটিভি অনলাইন : শেফালী খালা ও ঝুমুর গ্রাম থেকে এসেছিল। গ্রামের বাড়ি ছেড়ে দীর্ঘদিন তারা শহরে। ঝুমুরের বিয়েও হলো। তাদের কেন গ্রামে আর দেখা গেল না?
মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ : পাঠাইনি... করোনা ছিল, সে জন্য যায়নি। কী বলব আর এটা নিয়ে...
এনটিভি অনলাইন : হঠাৎ চৈতির চরিত্রটি উধাও হয়ে গিয়েছিল কেন?
মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ : প্রথমে একটা চৈতি ছিল ছাদে। আরেকটা ভাড়াটিয়া ছিল। একটা ছেলে একটা মেয়েকে নিয়ে পালিয়ে বিয়ে করে একটা রুম নিয়েছে। ইয়াং জেনারেশনের একটা ছেলে একটা মেয়ে ঘর থেকে পালিয়ে বিয়ে করে... ওদের পেশা চলে যেতে পারে। এটা আমার বলে দেওয়ার কিছু নেই। নরমালি বোঝা উচিত। ওরা তো ওখানে ভাড়া থাকে। আর এ বিল্ডিংটার মালিক যদি চলে যেত, তাহলে একটা প্রশ্ন ছিল। এটা ভাড়াটিয়া, আমি গল্প বলছি একটা ফ্যামিলির। ফ্যামিলির বাইরে যারা আছে, তারা যাবে-আসবে।
এনটিভি অনলাইন : সালমা ভাবির শ্বশুরবাড়ি কখনো দেখা যায়নি কেন?
মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ : শ্বশুরবাড়ি দেখাব না। শ্বশুরবাড়ির গল্প দেখাইনি আমি। প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে দাঁত ব্রাশ করি, ব্রেকফাস্ট করি, তারপর শাওয়ার করতে যাই... এগুলো তো আমি দেখাই না। অফিসে সকাল ৯টা থেকে ৫টা পর্যন্ত জব করে... অফিস তো সারাক্ষণ দেখাচ্ছি না। আমি সালমা ভাবির গল্প বলিনি। শ্বশুরবাড়ি থেকে তার একটা খালাতো ভাই এসেছে...
এনটিভি অনলাইন : শামীম হাসান সরকার অনলাইনে কীসের ব্যবসা করে, সেটাও ঠিকমতো জানতে পারেনি দর্শক...
মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ : আমি কী করি, আমাকে যদি কেউ জিজ্ঞেস করে, আমি নাটক বানাই। অনেকে জিজ্ঞেস করে, কী ব্যবসা... এখন আমি সারা দিন কীভাবে বানাই... পুরোটা ব্রিফ করার দরকার নেই। সে অনলাইনে ব্যবসা করত, যে মোবাইলে ফেসবুকে পোস্ট করে। এখন বাংলাদেশে অনলাইন প্রসেস আছে। ডেলিভারি আলাদা, প্রোডাক্ট আলাদা। শুধু ফেসবুকে একটা পেজ বানাব, ওদের সাথে কন্ট্র্যাক্ট করব, শেষ...
এনটিভি অনলাইন : ১৮২ পর্বে শেষ হচ্ছে ফ্যামিলি ক্রাইসিস। পারিবারিক টানাপোড়েন নিয়ে শুরু, শেষটা কি হ্যাপি এন্ডিং হবে? বা একটা জনপ্রিয় ধারাবাহিকের শেষ পর্বে কেমন চমক থাকবে? দর্শক-হৃদয়ে গেঁথে থাকার মতো কোনো বিশেষ কিছু থাকছে?
মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ : চমক-টমক জানি না। শেষ পর্যন্ত কী হচ্ছে, সেটা বলতে চাই না আমি। এটা টেলিভিশনে সবাই দেখবে... ইউটিউবে যখন আসবে, দেখবে... স্টোরি বলতে চাই না। শেষ লট নিয়ে একটা ইনফরমেশন দিই, চার দিনের শুট বাকি ছিল। সেই শুটটা আমি করতে পারিনি। আমার সহকারী শুটটা করেছে। ওর নাম কে এম সোহেল রানা। আমার চেয়ে বেটার শুট করেছে। আমার বাবা মারা গিয়েছিল ওই সময়, ও শুটটা করেছে।
এনটিভি অনলাইন : নির্মাতা হিসেবে এ ধারাবাহিক থেকে আপনার প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি?
মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ : প্রাপ্তি হচ্ছে এতগুলো প্রশ্নের উত্তর দিয়েছি। এটা অবশ্যই প্রাপ্তি। ধরেন, আপনি কোনো একটা জিনিস করলেন। নেগেটিভ-পজিটিভ যেটাই আসুক। নেগেটিভ-পজিটিভ দুটোই প্রাপ্তি। আমাকে যদি প্রশ্ন না করে, তাহলে আমি বুঝব কীভাবে। ধরেন, আমি একটা ক্যারেক্টার দেখিয়েছি, ক্যারেক্টার নিয়ে অডিয়েন্স খুব বিরক্ত হচ্ছে। ওটাও আমার প্রাপ্তি। কারণ, অডিয়েন্সকে আমি বিরক্ত করতে পেরেছি। প্রাপ্তি অনেক এই সিরিজে। অপ্রাপ্তি আসলে এই সিরিজে নেই। আমি যেখানেই যাই, অপ্রাপ্তি একটা আছে, আমি যা করছি সব ভুলে গিয়েছি। ফ্যামিলি ক্রাইসিসের ডিরেক্টর হিসেবে চেনে আমাকে। কয়েক দিন আগে কোভিড হয়েছিল, হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি... আমার পরিচয় হচ্ছে ফ্যামিলি ক্রাইসিস। দেশের বাইরে গেলে পরিচয় হচ্ছে ফ্যামিলি ক্রাইসিস। এর আগে যা কাজ করেছি, সেগুলো আর জানে না।
এনটিভি অনলাইন : ফেসবুক-ইউটিউবসহ অন্তর্জালের বিভিন্ন মাধ্যম মিলিয়ে কোটি কোটি মিনিট ভিউ হয়েছে এ নাটকের। অন্য সব হিট নাটকগুলোতে দেখা যায়, সেখানে সুড়সুড়িমূলক গল্প রয়েছে। ফ্যামিলি ক্রাইসিস তো পারিবারিক নাটক। এত ভিউ হওয়ার কারণ কী।
মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ : এর পুরো ক্রেডিট দর্শকদের। ওদের ভালো লাগছে, দেখছে। দর্শকের ইনটেনশন আমরা কেউ জানি না। এখন দর্শক কিন্তু সেকেন্ডে সেকেন্ডে চেঞ্জ হয়। ওরা কোনটা পছন্দ করে, আমরা জানি না। আমার নির্মাতা এবং প্রডিউসার... যারা চ্যানেল, যারা প্রোডাকশন ডিস্ট্রিবিউট করে, তাদের একটাই কাজ, অডিয়েন্স কোনটা পছন্দ করে। অডিয়েন্সের চাওয়া, আমি করব কি না। ওদের পছন্দ অনুযায়ী আমি কাজ করতেই পারি। আমার যদি মাথায় ঠিক করা থাকে যে এটা পছন্দ করতে পারে, তাহলে কিন্তু আমি সাকসেস। আবার ওরা বলে দিল এটা করতে, ওরা একটা খারাপ কিছু বলে দিতে পারে। আর সব অডিয়েন্স তো সমান না। টোটাল ক্রেডিট দর্শকের। ওরা পছন্দ করেছে, সে কারণে ভিউ হয়েছে, পপুলারিটি পেয়েছে। ওরা না দেখলে কিছু করার নেই।
এনটিভি অনলাইন : ফ্যামিলি ক্রাইসিস কি আপনার ক্যারিয়ারের সেরা নাটক? বা আপনার ক্যারিয়ারের সেরা কাজটি সম্পর্কে জানতে চাই।
মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ : নির্মাতা হিসেবে যদি বলি, এটা আমার জীবনের সেরা কাজ নয়। আমার জীবনের সবচেয়ে বাজে কাজ এটা। এটা নেগেটিভলি নেবেন না। এটা আমি বড় গলায় বলতে পারি। আমার লাইফে যত কাজ করেছি, সবচেয়ে বাজে কাজ এটা। কোন সেন্সে বলছি? ওই যে বাজেট, টাকাপয়সা একটা ফ্যাক্ট। আর আমাদের অনেক বাধ্যবাধকতা আছে। ঢাকা সিটিতে শুট করার সময় সকাল ১০টায় কল দিলে ১টায় শুরু করতে হয়। এত ট্রাফিক থাকে সকাল থেকে, যেতে পারে না আর্টিস্টরা। আর এত বড় লম্বা একটা ফ্যামিলি নিয়ে শুট করবেন, অনেক বড় একটা জার্নি। এক রুমে দুজন ঘুমালেও ঝামেলা হয়। অনেকের সাথে অনেক কিছু মেইনটেইন করতে হয়। বাংলাদেশে আমরা নির্মাতা হিসেবে যতটুকু কাজ করি, তার চেয়ে বেশি করি মেইনটেইন। দুই বছর কাজ করি, এতগুলো আর্টিস্ট মেইনটেইন করা চাট্টিখানি কথা নয়। এখানে মান-অভিমান আসে, ঝগড়া আসে, কারো ক্যারেক্টার বড় হয়ে গেলে মন খারাপ হতে পারে... এত কিছু মেইনটেইন করতে পাগল হয়ে যেতে হয়। এ সিরিজে ম্যাক্সিমাম শট এক শটে বানিয়েছি। এটা ছিল এই সিরিজের মূল শক্তি। এক শটে বানানোর একটা সাইকোলজি আছে আমার। যে কারণে মানুষকে রিলেট করছে। আমি যখন ক্যামেরা ধরে রাখছি, আটটা-দশটা আর্টিস্ট এদিকে পাসিং হয়েছে, গল্প করছে। তখন মানুষের লাইভ মনে হয়েছে। মনে হয়েছে এটা আমার দেখার ড্রয়িং রুম। আমি যদি কাটতে যেতাম, তখন মনে হতো এটা নাটক।
ডেফিনেটলি অর্জন। ক্যারিয়ারের জন্য ডেফিনেটলি প্লাস। কারণ, মানুষ বলে এবং সবাই যে ফ্যামিলি ক্রাইসিস পছন্দ করে তা নয়। অপছন্দও করে। এটা কী বানিয়েছেন, কী বানাননি... কিন্তু সবাই নাম জানে। এমন কোনো জায়গা নেই, যেখানে ফ্যামিলি ক্রাইসিস নিয়ে কোনো কথা হয়নি। এমন কোনো প্লেস পাইনি যে আমাকে বিভিন্ন প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয় না। এটা এক ধরনের অর্জন। এটা খুবই পজিটিভলি দেখি।
এনটিভি অনলাইন : বাংলাদেশে ফ্যামিলি ড্রামার ভবিষ্যৎ কী?
মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ : সিরিয়ালের ক্ষেত্রে বাংলাদেশে সবচেয়ে ইজি ওয়ে হচ্ছে ফ্যামিলি গল্প। কারণ, রিস্ক ফ্রি। আমাদের জীবনবোধের গল্প এত আছে, আমাদের দর্শককে খুব ইজিলি রিড করা যায় এখানে। তার দেখা ক্যারেক্টার যদি আপনি দেখাতে পারেন। আমাদের যে পরিমাণ ক্রাইসিস আছে, আমরা কেউ হ্যাপি নই। আমি যে ঢাকায় থাকি, আমি কিন্তু নরসিংদী থেকে এসেছি পড়ালেখা করার জন্য, তারপর নির্মাণ করছি। আমার একটা ব্যাড স্টোরি আছে। আমি যদি সেটা প্রেজেন্ট করি, দেখা গেল অনেকের লাইফের সাথে মিলে যাবে। এগুলো কমন জিনিস। ফ্যামিলি গল্প হচ্ছে খুবই রিস্ক ফ্রি। বাংলাদেশে প্রোপার ফ্যামিলি গল্প যদি বানানো যায়, আমি এখনো বলছি, মানুষ দেখবে। আর একটা জিনিস আছে, এত প্ল্যাটফর্ম... টেলিভিশন, ওটিটি, মোবাইল সবকিছু মিলিয়ে মানুষ না কোনটা রেখে কোনটা দেখবে, কেউ ডিসাইড করতে পারে না। ঢাকা শহরে ট্রাফিক জ্যাম থাকে, কাজকর্ম করে, বাসায় ফিরে ওরা সিরিয়াস কিছু দেখছে না। ওরা মনে করে, আমি যতটুকু দেখব, ততটুকু এন্টারটেইন হব। সেই হিসেবে হিউমার কোনো গল্প অডিয়েন্সের কাছে খুব তাড়াতাড়ি পৌঁছায়। কিন্তু এটা মনে রাখে না, ফ্যামিলি গল্প মনে রাখে।
এনটিভি অনলাইন : বর্তমানে ওটিটি প্ল্যাটফর্ম অনেক জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এ নিয়ে আপনার ভাবনা কী। ওটিটির জন্য কী ধরনের কনটেন্ট তৈরি হওয়া উচিত বলে মনে করেন বা কেমন গল্প উঠে আসতে পারে?
মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ : আমাদের দেশে ওটিটি নিয়ে মানুষের ফিক্সড একটা ধারণা আছে। ওটিটি মানে হচ্ছে থ্রিল টাইপের গল্প লাগবে, হিস্টোরিক্যাল কোনো কিছু লাগবে। এখনো ইন্টারন্যাশনালে যদি ওটিটি বলে... ওখানে ফ্যামিলি স্টোরি, রোমান্টিক স্টোরি, কমেডি স্টোরি চলে না। একটু ওয়েটওয়ালা স্টোরি মানুষ দেখতে চায়। বাংলাদেশ কোনো না কোনো এক সময় ফ্যামিলি গল্প চলবে, যদি বানানো যায়। ডেফিনেটলি পরিকল্পনা আছে বানানোর। আমি সারা জীবন ফ্যামিলি গল্প বানাতে চাই। ফার্স্ট প্রায়োরিটি ফ্যামিলি গল্প।
এনটিভি অনলাইন : ফ্যামিলি ক্রাইসিসের রচনাকার মারুফ রেহমান। উনার প্রসঙ্গে...
মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ : উনি খুবই ট্যালেন্টেড একজন মানুষ। উনার সাথে ১০ মিনিট আড্ডা দিলে উনি ইনস্ট্যান্ট কিছু কনসেপ্ট দেন, যেকোনো লোকের পছন্দ হবে। এটা বেটার, আর উনার সংলাপ খুব ভালো। খুবই ভালো লেখেন আর সংলাপের মধ্যে প্রচণ্ড লেভেলের হিউমার থাকে। উনার সাথে আমার প্রচুর কাজ আছে। আমরা একসাথে পড়ি। আমরা একসাথে প্রচুর কাজ করেছি।
এনটিভি অনলাইন : এখন তো অভিনয়শিল্পীরা অনেক ব্যস্ত। অনেক কাজ করতে হয়। তাঁরা কি চরিত্র ফুটিয়ে তুলতে যথেষ্ট সময় দিতে পারছেন? ভালোভাবে চিত্রনাট্য পড়ে নিজেকে চরিত্রের জন্য তৈরি করতে পারছেন?
মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ : আমাদের দেশে যেটা হয়, সেটা হচ্ছে, অ্যাক্টিংয়ের অনেকগুলো প্রকার আছে। মেথড অ্যাক্টিং আছে, নরমালি অ্যাক্টিং করা। যেকোনো একটা ক্যারেক্টার প্লে করতে গেলে একজন শিল্পীকে ডেফিনেটলি সময় দেওয়া উচিত। সেই ক্যারেক্টারে ঢোকার জন্য তার টাইম দরকার। কিন্তু আমাদের সেই টাইম, সেই বাজেট কখনো নেই। সেটা আমাদেরও নেই, আর্টিস্টদেরও নেই। যে কারণে আমি মনে করি, দেশের অভিনেতা-অভিনেত্রী অনেক ট্যালেন্টেড। কেন জানেন? আমি অনেক সময় শটের মাঝখানে ক্যামেরার পেছন থেকে বলি, চোখ দিয়ে পানি বের করেন। ওরা বের করে ফেলে। এটা টাফ। কোন লেভেলের ট্যালেন্টেড হলে এটা পারে! আমরা যে অ্যাক্টিংটা করাই, সেটাকে বলে অর্ডারি অ্যাক্টিং। আমরা বলছি, ওরা করছে। কতটুকু ট্যালেন্টেড হলে ওরা করতে পারে! অথচ ওদেরকে সিকোয়েন্সের জন্য একটু টাইম দিই না। ধরেন, অনেক সময় আউটডোরে গিয়েছি শুট করতে, একটা সিরিয়াস সিকোয়েন্স, তাকে গিয়ে বলি এই জিনিসটা এভাবে করতে হবে। তাকে ক্যারেক্টারের জন্য তৈরি হতে দিইনি। সময় দিই না। তার পরও তারা অ্যাক্টিং করে আসে ওখান থেকে। ওদের আমি স্যালুট দিই যে ওরা পারে।
এনটিভি অনলাইন : আপনি এনটিভির জন্য ফ্যামিলি ক্রাইসিস নির্মাণ করেছেন। এনটিভি অনলাইনেও ব্যাপক হিট হয়েছে ধারাবাহিকটি। নির্মাণের সময় আপনি কি এনটিভি অনলাইনের কথা ভেবেছিলেন?
মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ : আমি কোনো কিছু ভাবিনি। আমি একটা সিরিজ বানিয়েছি। অনলাইনের পক্ষে কথা বলে লাভ নেই, টিভির পক্ষেও বলে লাভ নেই। অনলাইনের পক্ষে ভাবলে কমেডি বানাতাম। ট্রেন্ডি কনটেন্ট বানাতাম। ফ্যামিলি ক্রাইসিস ট্রেন্ডি নয়। এখনকার ইউটিউব বলেন, ডিজিটালি বলেন, ম্যাক্সিমাম মানুষ ট্রেন্ডিং কনটেন্ট খুব তাড়াতাড়ি ক্যাচ করে। আমি ওই চিন্তা করে বানাইনি। সিরিজ ফ্যামিলি গল্প, সেটা আসলে অনলাইনে হিট হয়ে গেছে। টু বি অনেস্ট, এটা আমি কখনো জানতাম না এত পপুলার হবে। আমি জানতাম যে মানুষ পছন্দ করবে, কিন্তু এত পপুলার হবে আমি জানতাম না।
এনটিভির ডেফিনেটলি একটা সাপোর্ট আছে। শুরু থেকে আমার একটা সাপোর্ট ছিল। এর আগে কাজ করেছি, সাপোর্ট দিয়েছে। এনটিভির যে ফেসবুকের ক্লিপগুলো ভাইরাল হয়েছে, ডিজিটালে এনটিভির বড় একটা পেজ আছে, এটা তো ডেফিনেটলি মার্কেটিংয়ের একটা পার্ট। ওটা না থাকলে হয়তো আমার এ ধারাবাহিক এত মানুষের কাছে পৌঁছাত না।
‘ফ্যামিলি ক্রাইসিস’ নিয়ে এমন দীর্ঘ আড্ডার পর ফটোশুটের পালা এলো। নির্মাতা নিয়ে গেলেন তাঁর অফিসের ছাদে। সেখানে চলল ক্যামেরার ক্লিক। তারপর একটু আকাশের দিকে উঁকি...