এফডিসিতে দারোয়ানের তাড়া খেয়েছিলেন কিংবদন্তি রাজ্জাক
কিংবদন্তি অভিনেতা নায়করাজ রাজ্জাক ষাটের দশকের মাঝামাঝি সময়ে বাংলা চলচ্চিত্রের প্রবেশ করেন। এরপরের দুই দশক বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্পের প্রধান অভিনেতা হিসেবে তাঁর পরিচয় ঘটে।
গত বছর এক অনুষ্ঠানে নায়করাজ রাজ্জাক বলেছিলেন, ‘১৯৬৪ সালে ভেবেছি এফডিসিতে (চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশন) ঢুকব। এখানে কাদের দারোয়ানের অনেক তাড়া খেয়েছি। ছোটখাটো অনেক অভিনয় করেছি। ৬৬ সালে এসে নায়ক হয়েছি।’
নায়করাজ রাজ্জাক একাধারে একজন অভিনেতা, প্রযোজক ও পরিচালক হিসেবে চলচ্চিত্র অঙ্গনে ভূমিকা পালন করেছেন।
নায়করাজ ১৯৪২ সালের ২৩ জানুয়ারি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। কিশোর বয়সে কলকাতায় মঞ্চ নাটকে জড়িয়ে পড়েন তিনি। পরে ১৯৬৪ সালে দাঙ্গার সময় ঢাকায় চলে আসেন পরিবারের সঙ্গে। প্রথমদিকে, রাজ্জাক তৎকালীন পাকিস্তান টেলিভিশনে ‘ঘরোয়া’ নামের ধারাবাহিক নাটকে অভিনয় করে দর্শকদের কাছে জনপ্রিয় হন।
নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে রাজ্জাক আবদুল জব্বার খানের সহযোগিতায় ইকবাল ফিল্মসে কাজ করার সুযোগ পান। পরিচালক কামাল আহমেদের সহকারী হিসেবে ‘উজালা’ ছবিতে কাজ শুরু করেন। সালাউদ্দিন প্রোডাকশন্সের ‘তেরো নাম্বার ফেকু অস্তাগড় লেন’ চলচ্চিত্রে ছোট একটি চরিত্রে অভিনয় করে সবার কাছে নিজ মেধার পরিচয় দেন রাজ্জাক। পরবর্তী সময়ে ‘কার বউ’, ‘ডাক বাবু’, ‘আখেরী স্টেশন’সহ আরো বেশ কয়েকটি ছবিতে ছোট ছোট চরিত্রে অভিনয় করেন তিনি। পরে ‘বেহুলা’ চলচ্চিত্রে সুচন্দার বিপরীতে তিনি নায়ক হিসেবে ঢালিউডে উপস্থিত হন এবং সবার মন জয় করে নেন। দর্শকের ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে তিনি নায়করাজ উপাধি পান।
রাজ্জাকের অভিনীত চলচ্চিত্রগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘নীল আকাশের নিচে’, ‘জীবন থেকে নেয়া’, ‘ওরা ১১ জন’, ‘আলোর মিছিল;, ‘ছুটির ঘণ্টা’, ‘বাবা কেন চাকর’।
নায়করাজ ১৯৭৬ সালে প্রথম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন ‘কি যে করি’ ছবিতে অভিনয়ের জন্য। এরপর অশিক্ষিত (১৯৭৮), বড় ভালো লোক ছিল (১৯৮২), চন্দ্রনাথ (১৯৮৪), যোগাযোগ (১৯৮৮) চলচ্চিত্রে জন্য। ২০১১ সালের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে তিনি আজীবন সম্মাননা অর্জন করেন।
রাজ্জাক প্রায় ৩০০টি বাংলা ও উর্দু চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। নায়করাজ শুধু নায়ক হিসেবেই নয়, পরিচালক হিসেবেও সফল। পরিচালনা করেছেন প্রায় ১৬টি চলচ্চিত্র। সর্বশেষ তিনি ‘আয়না কাহিনী’ ছবিটি নির্মাণ করেছেন। চলচ্চিত্রের বাইরে জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলের শুভেচ্ছাদূত হিসেবে কাজ করেছেন নায়করাজ রাজ্জাক। তাঁর প্রযোজনা সংস্থার নাম রাজলক্ষ্মী প্রোডাকশন।
রাজ্জাকের জন্ম ১৯৪২ সালের ২৩ জানুয়ারি, ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের রাজধানী কলকাতার টালিগঞ্জে। রাজ্জাক বাবা আকবর হোসেন ও মা মিরারুন্নেসার কনিষ্ঠ সন্তান। রাজ্জাকের দুই ছেলে বাপ্পারাজ আর সম্রাটও চলচ্চিত্র অভিনেতা।