নাক ডাকা সমস্যায় কী করবেন
নাক ডাকার সমস্যা প্রায় সব বয়সী মানুষেরই হয়। এটিকে সব সময় সমস্যা হিসেবে বিবেচনাও করা হয় না। কিন্তু এর ফলে দেহের যদি কোনো ক্ষতি হয়, তখন এর চিকিৎসা করতে হয়। আজ মঙ্গলবার (১০ ফেব্রুয়ারি-২০১৫) এনটিভির স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের এক হাজার ৯৪২তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন স্কয়ার হাসপাতালের ইএনটি ও হেডনেক সার্জারি বিভাগের পরামর্শক চিকিৎসক এম এইচ শাহিল মাহমুদ।
প্রশ্ন : নাক ডাকাকে কখন সমস্যা বলা হয়?
উত্তর : নাক ডাকা খুব প্রচলিত একটি সমস্যা। শিশু থেকে বৃদ্ধ, সব বয়সের মানুষেরই এটি হয়ে থাকে। যদিও বিভিন্ন মানুষের ক্ষেত্রে এর কারণও ভিন্ন।
আমাদের শরীরে নাক থেকে শুরু করে ভেতরে যে শ্বাসপথ রয়েছে, সেটি দিয়ে যদি বাতাস ঠিকমতো না প্রবেশ করে, তাহলে এই সমস্যা হতে পারে। এই পথটি সরু হয়ে গেলে বা কোথাও কোনো বাধা পেলে এ সমস্যা হয়।
ছোট শিশুর ক্ষেত্রে নাকে সর্দি থাকলে বা নাকের পেছনে এডিনয়েড থাকলে এ সমস্যা হতে পারে। মাঝ বয়সে নাকের পর্দা বাঁকা বা নাকে পলিপের কারণেও এ সমস্যা হতে পারে।
বয়স বেড়ে গেলে সাধারণত দেখা যায়, চল্লিশোর্ধ্ব মানুষের এই বাতাসের পথ (এয়ারওয়ে) নরম হয়ে যায়। এর ফলেও সমস্যা হয়।
এ ছাড়া ওজন বাড়ার কারণেও নাক ডাকার সমস্যা হতে পারে। ওজন বাড়লে বাতাস চলাচলের পথের পাশে চর্বি জমে। এতে করে পথটি নরম ও সরু হয়ে যায়।
প্রশ্ন : আমরা জানি, সব নাক ডাকাই ক্ষতিকর নয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে এটি ক্ষতি করে। কোন ক্ষেত্রে এটি ক্ষতির কারণ হয়?
উত্তর : যখন বাতাস চলাচলের রাস্তা কমে যাওয়ার ফলে শরীরের অক্সিজেনের পরিমাণ কমে যায়, তখন এটা বড় ধরনের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
প্রশ্ন : অক্সিজেন না পাওয়ার ফলে কী কী সমস্যা হতে পারে?
উত্তর : ছোট বাচ্চাদের ক্ষেত্রে অনেক ধরনের ক্ষতি হতে পারে। অক্সিজেন সঠিকভাবে না পেলে মস্তিষ্কের বৃদ্ধি, শারীরিক বৃদ্ধি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
বয়স্কদের ক্ষেত্রে যখন এই পথ নষ্ট হয়ে যায়, তখন সে অনেক কষ্ট করে শ্বাস নেয়। যে নাক ডাকে, সে হয়তো বুঝতেও পারে না তার এই সমস্যা হচ্ছে। যে পাশে থাকে, সে বিষয়টি বুঝতে পারে। শ্বাস নিতে কষ্ট হতে থাকলে অক্সিজেন ভেতরে প্রবেশ করে না। ফলে কার্বন ডাইঅক্সাইড শরীরে জমতে থাকে। তখন সে হয়তো ধড়ফড় করে ঘুম থেকে উঠে যায়।
প্রশ্ন : এ রোগে কী চিকিৎসা করা হয়?
উত্তর : যদি এডিনয়েডের ফলে সমস্যা হয়, তখন এটি অপসারণ করতে হয়। পলিপের কারণে হলেও অপসারণ করে ফেলতে হয়।
কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায়, গলার ভেতরে পেছনের দিকটা সরু হয়ে আছে, যেটাকে ক্রাউডিং অব দ্য ওরোফেরিংস বলে। বিশেষ করে যাদের ওজন বেশি, তাদের ক্ষেত্রে এ সমস্যা হয়। যদি ওজন কমিয়ে আনা যায়, তবে এ সমস্যার সমাধান হতে পারে।
প্রশ্ন : সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য আর কী কী পরামর্শ থাকে?
উত্তর : নাক ডাকাকে খুব হালকাভাবে না নিয়ে এটা হওয়ার কারণ নির্ণয় করা দরকার। যেকোনো বয়সেই হোক, কারণটাকে বের করে নিয়ে চিকিৎসা করতে হবে। সাধারণত মেডিকেল চিকিৎসায় এটি ভালো হয়ে যায়। এ ক্ষেত্রে সার্জারি খুব কমই লাগে। ওজনাধিক্যের ফলে এ সমস্যা হলে সিপআপ ব্যবহার করে চিকিৎসা করা হয়।
প্রশ্ন : সার্জারি কোন সময় করতে হয়?
উত্তর : এ সমস্যায় সার্জারি করতে হবে, বিষয়টি এমন নয়। সার্জারি করার মতো সমস্যা হলেই সার্জারি করতে হয়।
প্রশ্ন : শিশুদের ক্ষেত্রে যাদের এডিনয়েড বা টনসিলাইটিসের সমস্যা আছে, তাদের ক্ষেত্রে কী সমস্যা হয়? অনেক শিশুই হয়তো মোটা নয় কিন্তু নাক ডাকছে, তাদের ক্ষেত্রে করণীয় কী?
উত্তর : মানুষ নাক দিয়েও শ্বাস নিতে পারে, আবার মুখ দিয়েও শ্বাস নিতে পারে। কিন্তু শ্বাস মুখ দিয়ে নেওয়ার জন্য নয়। এডিনয়েডে নাকের পেছনের গ্রন্থি বড় হয়ে যায়, নাকটা ব্লক হয়ে যায়। এ সমস্যায় রোগী নাক দিয়ে শ্বাস না নিয়ে গলা দিয়ে শ্বাস নেয়। এর ফলে গলায় ইনফেকশন হয়, গলাটা শুকিয়ে যায়। ফলে টনসিলগুলো বড় হয়ে যায়। টনসিল যখন বেশি বড় হয়ে যায়, তখন টনসিল নিজেও বাতাস চলাচলের পথকে বন্ধ করে দেয়। তাই এর চিকিৎসা করে সমস্যার প্রতিকার করা যাবে।