জন্মগত হৃদরোগ কেন হয়?
আমাদের দেশে জন্মগত হৃদরোগে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা এক হাজারে আটজন। এই রোগ বেশ গুরুতর। আজ বুধবার (১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ তারিখ) এনটিভির স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ১৯৪৩তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন আদ-দ্বীন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. ইউ এইচ নাসেরা বেগম।
প্রশ্ন : একটি শিশু জন্মের সময় কী কী ধরনের হৃদরোগ নিয়ে জন্মাতে পারে?
উত্তর : ছোট শিশুদের ক্ষেত্রে জন্মগত হৃদরোগকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়। সাইনোটিক বা নীল শিশু এবং এসাইনোটিক বা সাধারণ কৃষ্ণ (কালার্ড) শিশু। সাইনোটিকে দেখতে হয় সান্ট আছে কি না (হৃৎপিণ্ডের একটি ধমনি পালমোনারি এবং অন্যটি এয়োটা। এদের মধ্যে যদি যোগাযোগ থাকে তাহলে তাকে সান্ট এনোমেলি বলে)।
সান্ট এনোমেলিতে এট্রিয়াল সেপটাল সমস্যা থাকতে পারে। দুটি এট্রিয়াম অর্থাৎ বাম এবং ডান এট্রিয়ামের মধ্যে ছিদ্র থাকতে পারে। ভেন্টিকুলাস সেপটাল সমস্যা থাকতে পারে। বাম এবং ডানের ভেন্টিক্যালের মধ্যে ছিদ্র থাকতে পারে। অথবা দুটো আটারির মধ্যে একটি যোগসূত্র থাকতে পারে।
আর সাইনোটিক গ্রুপের মধ্যে সবচেয়ে জটিল সমস্যা হচ্ছে টেট্রালজি অব ফেলো।
প্রশ্ন : টেট্রালজি মানে কী?
উত্তর : এটি হচ্ছে চারটি কমপ্লেক্স কনজেনিটাল হার্ট ডিজিজ। এটিকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। সাধারণ এনোমালি এবং জটিল এনোমালি। সিম্পল এনোমালিতে সান্ট থাকবে অথবা বাম হৃদযন্ত্র অথবা ডান হৃদযন্ত্রে (বাধা) অবসট্রাকশন থাকবে। এ ছাড়া এয়োটিক স্টেনোসিস, পালমোনারি স্টেনোসিস অথবা কোয়াকটেশন অব দি এয়োটার সমস্যা থাকে। এগুলো হচ্ছে সাধারণ হৃদরোগ। এট্রিয়াল সেপটাল সমস্যায় এট্রিয়ামের মধ্যে যে ছিদ্র থাকে, ভেন্টিকেলের মধ্যে যে ছিদ্র থাকে কিংবা পেটেন্ট ডাকটাস আটারিওসাস- সবই সাধারণ। কিন্তু যখন তিন থেকে চারটা সমস্যা একত্রে হয় তখন তাকে জটিল বলে।
টেট্রালজি অব ফেলোস হচ্ছে সাইনোটিক রূপের জটিল কনজেনিটাল হার্ট ডিজিজ। এর মধ্যে একটা বড় ভেন্টিকুলাস সেপটাল সমস্যা (ডিফেক্ট) থাকে।
প্রশ্ন : একটি শিশু জন্মের সময় পেটে থাকতেই তার সমস্যা তৈরি হচ্ছে এবং জন্মের সময় এই সমস্যাগুলো নিয়ে শিশুটি জন্ম নিচ্ছে। এটা হয় কেন?
উত্তর : ৯০ ভাগ হৃদযন্ত্রের ত্রুটি হচ্ছে মাল্টি ফেকটোরিয়াল। পরিবেশ, মাদক, রেডিয়েশন এবং জেনেটিক ইত্যাদি কারণে হয়।
প্রশ্ন : অনেকে না জেনে ওষুধ খেয়ে ফেলছেন, এসব কারণ এর সঙ্গে সম্পর্কিত কি না?
উত্তর : গর্ভকালীন প্রথম তিন মাস যখন কার্ডিয়াক সেপটা তৈরি হয়, তখন যে কোনো মাল্টি ফেকটোরিয়াল সমস্যায় এটি হতে পারে। তবে সন্তানসম্ভবা নারীর প্রতি সব সময় পরামর্শ থাকে, সন্তান ধারণ করেছেন জানলে যে কোনো ধরনের ওষুধ গ্রহণ বন্ধ করুন এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। মামস, রুবেলা এসবের টিকা অন্তত গর্ভধারণের এক মাস আগে নিতে হবে।
মায়েদের প্রতি বিশেষভাবে অনুরোধ, গর্ভে সন্তান ধারণ করেছেন জানার পর কোনো অসুস্থ রোগীর কাছে যাবেন না।
প্রশ্ন : হৃদরোগ নিয়ে জন্মানো শিশুদের কী চিকিৎসা করা হয়?
উত্তর : শিশুটির খাওয়ায় সমস্যা হয়, দুধ চুষতে পারে না। শিশুটির বৃদ্ধি ব্যাহত হয় এবং নীল হয়ে যায়। চিকিৎসার জন্য ইকোকার্ডিওগ্রাম, ইসিজি, বুকের এক্স-রে করে দেখতে হয় কোন জাতীয় হৃদরোগ হয়েছে।
ছোটবেলায় সাধারণত এট্রিয়াল সেপটাল সমস্যা ধরা পড়ে না। এটা বড় হয়ে ধরা পড়ে। বাকিগুলো যেমন : ভেন্টিকুলাস সেপটাল ডিফেক্ট, পেটেন্ট ডাকটাস আটারিওসাস, টফ এবং টিজিও জন্মের পর ধরা পড়ে।
এ ধরনের সমস্যায় চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে এবং কার বেলায় কী চিকিৎসা নিতে হবে তা চিকিৎসকরা নির্ণয় করেন।