শ্বাসনালির জটিল রোগ সিওপিডি
শ্বাসনালির একটি জটিল রোগের নাম সিওপিডি। এই রোগে আক্রান্ত হলে শ্বাসনালী ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ১৯৯০ সালের হিসাব মতে, সারা পৃথিবীতে সিওপিডি রোগে আক্রান্ত হয়ে মানুষের মৃত্যুর অবস্থান অষ্টম স্থানে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, ২০২০ সালে এর অবস্থান তৃতীয়তে এসে দাঁড়াবে। আজ বুধবার (১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫) এনটিভির স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ১৯৫০ পর্বে এ বিষয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন ইউনাইটেড হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. ইকবাল হাসান মাহমুদ।
প্রশ্ন : সিওপিডি কী?
উত্তর : সিওপিডি হচ্ছে ক্রনিক অবসট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ। এটি শ্বাসযন্ত্রের এক ধরনের রোগ। এর ফলে রোগীর প্রচণ্ড শ্বাস কষ্ট হয়, শ্বাস ফেলতে বাঁধা অনুভূত হয়। এই রোগ রিভার্স হয় না। অর্থাৎ অনেক ওষুধ ব্যবহারের পরও শ্বাসনালি আর আগের অবস্থানে ফিরে যায় না।
হাঁপানি রোগীর ক্ষেত্রে ওষুধ ব্যবহারে রোগটি সেরে যায়। কিন্তু সিওপিডি ভালো হয় না। এটি অত্যন্ত জটিল একটি পরিস্থিতি। এই রোগে আক্রান্ত রোগী একপর্যায়ে এসে হয়তো অথর্ব হয়ে পড়ে। হয়তো বসে থাকলে ভালো থাকে, আবার নড়াচড়া করলে শ্বাসকষ্ট শুরু হয়।
প্রশ্ন : এর কারণ কী?
উত্তর : এর প্রধান কারণ ধূমপান। একটি লোক যদি বছরের পর বছর ধূমপান করতে থাকে তাহলে এ রোগ হতে পারে। এ ক্ষেত্রে শরীরে যে ছোট ছোট শ্বাসনালিগুলো রয়েছে সেগুলো নষ্ট হয়ে যায়। বায়ুথলি বিনষ্ট হয়ে যায়। শ্বাস নিতে পারবে ঠিকই কিন্তু বায়ু থলিতে গিয়ে বাতাস আটকা পড়ে যাবে। এর ফলে পেরেনকাইমাল ডিসট্রাকশন হয় অর্থাৎ ফুসফুসের গঠন নষ্ট হয়ে যায়। বলা হয়, রোগী কবরের দিকে চলে যেতে থাকে। এ রোগের জন্য রোগী নিজে দায়ী।
বছরের পর বছর যদি লাকড়ির চুলা বা খড়ের চুলায় রান্না করা হয় তবে এই রোগে আক্রান্ত হতে পারে। গাড়ির ধোঁয়াও সিওপিডির বড় কারণ।
প্রশ্ন : এর লক্ষণ বা উপসর্গ কী?
উত্তর : এর লক্ষণ শ্বাসকষ্ট এবং কাশি হওয়া। এ ছাড়া শীতকালে হেমো ফাইলাস ইনফ্লুয়েঞ্জা বা নিউমোককটাল নিউমোনি নামক দুটি জীবাণু বুকে গিয়ে কফ সৃষ্টি করে। কফগুলো পেকে যায়, পাশাপাশি জ্বর আসে। শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায়। এসব জীবাণু প্রতিকারে বাংলাদেশে এখন ভেকসিন পাওয়া যায় এসব ভেকসিন নিতে হবে।
প্রশ্ন : হাঁপানির সাথে সিওপিডির পার্থক্য কী?
উত্তর : হাঁপানির সঙ্গে ধূমপানের কোনো সম্পর্ক নেই। কিন্তু সিউপিডির জন্য সরাসরি ধূমপান দায়ী। হাঁপানিতে বংশগত কারণ আছে, সিওপিডিতে নেই। সালবিউটামল ইনহেলার বা টেবলেট দিলে হাঁপানি রোগী ভালো হয়ে যায় কিন্তু এই রোগী ভালো হয় না। সিওপিডিতে প্রচুর কফ হয়। হাঁপানিতে কফ থাকে না। কফ থাকলেও খুব অল্প অল্প যায়। হাঁপানিতে ফুসফুস নষ্ট হয় না। এখানে নষ্ট হয়ে যায়।
প্রশ্ন : সাধরণত রোগীরা কোন পর্যায়ে চিকিৎসকের কাছে আসে?
উত্তর : একদম শেষ মুহূর্তে এ রোগের চিকিৎসা করাতে আসে। যখন বিভিন্ন ধরনের হাঁপানির চিকিৎসা করে হাঁপানি ভালো হয় না তখন আসে। অনেক ক্ষেত্রে আর কিছুই করার থাকে না। তখন তাকে অক্সিজেনের মধ্যে রাখতে হয়। অনেকের ক্ষেত্রে হয়তো ১৬ ঘণ্টা পর্যন্ত অক্সিজেন দিতে হয়। যদি শেষের দিকে আসে তবে ভালো হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।
প্রশ্ন : যদি রোগী শুরুর দিকে আসে তবে সে ক্ষেত্রে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়?
উত্তর : রোগী ধূমপান করলে বলা হয় ধূমপান ত্যাগ করুন। পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করুন। কিছু কিছু শ্বাসের ব্যায়াম শেখানো হয়। এখানে প্রয়োজন হলে ফিজিওথেরাপিস্টের সহযোগিতা নেওয়া হয়। ওষুধ নিয়মিত খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকি। কলিন-বিরোধী ইনহেলার যেমন ইপ্রাভেন্ট, ইপ্রেক্স এগুলো খুব ভালো কাজ করে। স্টেরয়েড মিশ্রিত ইনহেলার দিয়ে থাকি। ভেকসিন দেওয়া হয়। শীতকালে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হয় যেন কিছুতেই ঠাণ্ডা না লাগে। লোকালয়ে রোগীকে যেতে নিষেধ করা হয়। এসব রোগীর যেহেতু ফুসফুস ধ্বংস হয়ে রয়েছে তাই তারা অপরিচিত জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে। এ জন্য মাস্ক ব্যবহার করতে বলা হয়। যাদের অবস্থা অনেক খারাপ তারা যেন বেশ সতর্কতার সাথে চলে- সেই পরামর্শ দিয়ে থাকি।
প্রশ্ন : এর প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা কী?
উত্তর : সবার জন্য ধূমপান একটি সর্বনাশা নেশা। আমরা কখনো চাই না ধূমপানের কারণে কেউ সিওপিডিতে আক্রান্ত হোক। ধূমপায়ী ব্যক্তি পাশের লোকটিকেও আক্রান্ত করে। তাই স্বাস্থ্যকর পরিবেশ তৈরি করতে হবে। শহরকে সুন্দর রাখতে হবে। কার্বনমনোক্সাইড, সালফার, লিড, কার্বন ডাই-অক্সাইড- এসব গ্যাস যত দূর সম্ভব কমিয়ে ফেলার চেষ্টা করতে হবে।