পায়ের পচন রোগের লক্ষণ কী
শরীরে বিভিন্ন ধরনের অ্যাটাকের কথাই আমরা শুনি। লেগ অ্যাটাক বা পায়ের অ্যাটাকের মধ্যে একটি। এই রোগে পায়ের রক্তনালি বন্ধ হয়ে যায়। দ্রুত চিকিৎসা না নিলে অনেক ক্ষেত্রে এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির পা হারাতে হয়। আজ শনিবার (০৭ মার্চ-২০১৫) এনটিভির স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ১৯৬৭তম পর্বে এ বিষয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন ইবনেসিনা হাসপাতালের ভাসকুলার কেয়ার সেন্টারের প্রধান ভাসকুলার সার্জন ডা. জি এম মকবুল হোসেন।
প্রশ্ন : পায়ের অ্যাটাক, পায়ের পচন বিষয়টি কী? এর আওতায় আপনারা পায়ের কোন কোন বিষয়গুলোকে চিহ্নিত করেন?
উত্তর : আমরা সাধারণত অ্যাটাক কথাটির সঙ্গে বেশ পরিচিত। যেমন : হার্ট অ্যাটাক, হার্টের রক্তনালি ব্লক হয়ে হার্ট অ্যাটাক হয়), ব্রেন অ্যাটাক (মস্তিষ্কের রক্তনালিতে ব্লক হয়ে ব্রেন অ্যাটাক হয়)। একইভাবে পায়ের যে রক্তনালি আছে সেটি যদি ব্লক হয় সেটাকে বলে লেগ অ্যাটাক। কিছু উপসর্গ দিয়ে বোঝা যায় লেগ অ্যাটাক হয়েছে।
প্রশ্ন : পায়ের অ্যাটাক হয় কেন? এবং কারা এতে বেশি আক্রান্ত হয়?
উত্তর : যারা ধূমপায়ী তারা এই ধরনের অ্যাটাক হওয়ার ঝুঁকিতে থাকেন। ধূমপায়ীদের রক্তনালি বন্ধ হয়ে যাওয়ার একটা আশঙ্কা থাকে। যাদের হাইপারটেনশন আছে, বিষণ্ণতা (ডিপ্রেশন) রোগ আছে, উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে, ডায়াবেটিস রয়েছে তাদেরও এই ধরনের সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এ ছাড়া যদি রক্তে অতি মাত্রায় চর্বি থাকে তাহলেও রক্তনালিতে ব্লক হয়। এই ব্লক হার্টের রক্তনালিতে হতে পারে এবং পায়ের রক্তনালিতেও হতে পারে। একটু একটু করে ব্লক হয়ে হয়তো সম্পূর্ণ নালিটিই বন্ধ হয়ে যেতে দেখা যায়। এর মানে হার্টের বেলায় যেই বিষয়গুলো ঝুঁকি বাড়ায় সেগুলো পায়ের ক্ষেত্রেও ঝুঁকির কারণ।
প্রশ্ন : কারো যদি এ রকম ব্লক হয় তখন পায়ে কী ধরনের অনুভূতি হয়?
উত্তর : হঠাৎ করে পায়ে ব্যথা হবে এবং ব্যথা অত্যন্ত তীব্র হবে। তার স্বাভাবিক চলাচল একেবারেই বন্ধ হয়ে যেতে পারে এই ব্যথার কারণে। পা ধীরে ধীরে ঠাণ্ডা হয়ে যেতে পারে। পা অবশ হয়ে যাবে। দীর্ঘ মেয়াদি উপসর্গে আঙুল কালো হয়ে যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে অনেকেই ভাবেন রোগীটির হয়তো পেরালাইসিস হয়ে গেল। এসব রোগে চিকিৎসা না করা হলে ফ্রাং গেংরিন বা পচন রোগ হয়ে যেতে পারে।
প্রশ্ন : কখন চিকিৎসকের কাছে যাবে?
উত্তর : নার্ভে চাপ পড়লে পায়ে ব্যথা হতে পারে, গাঁটে (জয়েন্ট) যদি সমস্যা হয় তখনও পায়ে ব্যথা হতে পারে। পায়ের মাংসে যদি কোনো রোগ হয় তখনো পা ব্যথা হতে পারে। রোগীদের এসব সমস্যায় চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।
প্রশ্ন : এর চিকিৎসা কী হয়?
উত্তর : অন্যান্য পায়ে ব্যথা এবং রক্তনালির পায়ে ব্যথার মূল পার্থক্য হচ্ছে এখানে পা ঠাণ্ডা হয়ে যায়। অন্য পা ঠাণ্ডা হয় না। পায়ের কোনো পালস আর কাজ করবে না। এটা আরেকটি বড় লক্ষণ। চিকিৎসকরা এটি দেখে বুঝবেন। পালস যদি না থাকে এটি পায়ের অ্যাটাক দিকে চলে গেছে। রক্তনালি ব্লক হয়ে গেলে ছয় ঘণ্টার মধ্যে যদি সে চিকিৎসা না করতে পারে। তাহলে তার পা কালো হয়, দুর্গন্ধ হয়। একপর্যায়ে পা কেটে ফেলে দিতে হয়।
প্রশ্ন : এই রোগীর জন্য সময় কী খুব জরুরি?
উত্তর : দর্শকদের আমি বলতে চাই পায়ে ব্যথা শুরু হলে এবং পা যদি ঠাণ্ডা হয়ে যায় তবে দেরি না করে অবশ্যই চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। এমন সমস্যা নিয়ে গেলে চিকিৎসক প্রথমে পায়ের পালস দেখবেন। যদি পালস পাওয়া যায় তাহলে যে হাসাপাতালে এই চিকিৎসা দেওয়া হয় সেখানে রোগীকে পাঠাতে হবে।
প্রশ্ন : চিকিৎসা কীভাবে শুরু করতে হবে?
উত্তর : সাধারণত পরীক্ষা-নিরীক্ষাগুলোর পাশাপাশি কম্পিউটারে পরীক্ষার মাধ্যমে রক্তনালি ব্লক হয়েছে কি না সেটি দেখা যায়। এটাকে আমরা আল্ট্রাসোনোগ্রাম বলি। এরপর আরো ভালোভাবে দেখার জন্য এনজিওগ্রাম করি। এই রোগীর চিকিৎসায় দ্রুত অপারেশন করতে হয়। অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে গিয়ে এক ধরনের ডিভাইস রয়েছে যাকে বলা হয় ক্যাথেডার সেটি দিয়ে রক্তনালির ময়লাটা পরিষ্কার করে দিলে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক হয়ে যায়। এ ছাড়া যদি মনে হয় লম্বা ব্লক রয়েছে তখন হার্টের মতো এখানেও বাইপাস অপারেশন করে রক্তনালি চালু করা হয়। মূলত এই চিকিৎসার লক্ষ্য বন্ধ হওয়া নালিটিকে পুনরায় সচল করা। আমাদের দেশে এই চিকিৎসা এখন ভালোভাবে হচ্ছে।