শিশুদের পায়ুপথে রক্তক্ষরণ
শিশুদের পায়খানার রাস্তা দিয়ে রক্ত পড়ার বিভিন্ন কারণ রয়েছে। তবে একটু সচেতন হলে এসব সমস্যা অনেকটাই প্রতিরোধ করা যায়। আজ রবিবার (০৮ মার্চ ২০১৫) এনটিভির স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ১৯৬৮তম পর্বে এ বিষয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন ঢাকা শিশু হাসপাতালের শিশু সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ডা. মোহাম্মদ আব্দুল আজিজ।
প্রশ্ন : শিশুদের পাররেকটাল ব্লিডিং বা পায়খানার রাস্তা দিয়ে রক্ত পড়ার প্রধান কারণ কী?
উত্তর : অনেক কারণেই শিশুদের পায়খানার রাস্তা দিয়ে রক্ত যায়। তার মধ্যে এনাল ফিসার হলে রক্ত যায়। পায়খানার রাস্তা যদি কেটে যায় তখন তাকে এনাল ফিসার বলে। পায়খানা যদি কষা হয় তখন শিশু যদি শক্তি দিয়ে করতে যায় তখন পায়খানার রাস্তা কেটে যেতে পারে; সেখান থেকে রক্ত যায়।
আবার অনেক ক্ষেত্রে গেজ হয় আমরা যাকে রেকটাল পলিপ বলি। এখানে ব্যথা হয় না। কিন্তু যখনই শিশুটি পায়খানা করতে যায় তখনই রক্ত যেতে পারে। নাড়ির একটি অংশ আরেকটি অংশের সঙ্গে জড়িয়ে গেল একে আমরা ইন্টার সাসপেনশন বলি। অথবা অনেক সময় শিশুদের জন্মগত কিছু ত্রুটি থাকে এসব ক্ষেত্রেও শিশুদের পায়খানার সঙ্গে রক্ত যেতে পারে। অথবা অনেক সময় দেখা যায় পেপটিক আলসার বা গ্যাসট্রিক আলসার এসব ক্ষেত্রেও রক্ত যেতে পারে। তবে এসব ক্ষেত্রে সরাসরি রক্ত না গিয়ে পায়খানাটা কালো হয়। কালো হলে চিকিৎসকরা বুঝতে পারেন শিশুটির রক্ত যাচ্ছে। এ রকম বিভিন্ন কারণে শিশুদের পায়খানার সঙ্গে রক্ত যেতে পারে।
প্রশ্ন : মূলত কোন কারণের জন্য শিশুটির এই সমস্যা হচ্ছে সেটি বোঝার কী কোনো উপায় রয়েছে?
উত্তর : প্রত্যেকটিই আসলে কিছু ভিন্ন ভিন্ন লক্ষণ নিয়ে প্রকাশ করে। যেমন : এনাল ফিসার বা পায়খানার রাস্তায় যদি কাটা থাকে সেই ক্ষেত্রে যখনই শিশুটি পায়খানা করতে যায় তখনই ব্যথা লাগে। সে পায়খানা আটকে রাখতে চায়। এ রকম সমস্যা হলে একে এনাল ফিসার বলে। খুব সহজেই এটা নির্ণয় করা যায়। পায়খানার রাস্তাটাকে একটু ফাঁকা করে দেখলে দেখা যায় তার কাটা রয়েছে।
রেকটাল পলিপ বা গেজ থাকলে শিশুদের খুব রক্ত যায়। ব্যথা হয় না। কিন্তু শক্ত বা নরম পায়খানার ক্ষেত্রে রক্ত যায়। এর পরীক্ষার জন্য হাতে গ্লাবস পরে পায়খানার রাস্তার ভেতরে দেখলে বোঝা যায়। পাশাপাশি পলিপটা যদি উপরে থাকে তাহলে আমরা এটাকে ফেলে দিতে পারি। আর যদি ইন্টার সাসপেশন হয় তখন আল্ট্রাসোনোগ্রাম করে ডায়াগনোসিস করি। এসব পদ্ধতির মাধ্যমে সমস্যাগুলো বের করা যায়।
প্রশ্ন : কোন লক্ষণগুলো দেখলে মা-বাবার শিশুটিকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া উচিত?
উত্তর : রক্ত যাচ্ছে বা ব্যথা করছে বা পায়খানা করতে চাচ্ছে না এ ধরনের লক্ষণগুলো দেখলে চিকিৎসকের কাছে যাবেন। প্রাথমিক দিকে চিকিৎসা করলে ভালো হয়। এনাল ফিসারের চিকিৎসাটি খুবই সোজা, পায়খানা নরম রাখার জন্য শিশুটিকে ঠিকমতো পানি খাওয়াতে হবে। যদি দীর্ঘ সময় ধরে পায়খানা নরম রাখা যায় তখন এমনিতেই সমস্যাটি ভালো হয়ে যায়। অনেক সময় দেখা যায় কিছু লোকাল ওয়েন্টমেন্ট দেওয়া হয়। এর জন্য অপারেশন করতে হয় না। তবে যদি খুব খারাপ অবস্থা হয়ে যায়, ওষুধে কোনো কাজ না করে , বার বার সমস্যাটি ফিরে আসে সে ক্ষেত্রে সাধারণত অপারেশন করা হয়।
প্রশ্ন : কোথায় গেলে এই চিকিৎসা পাওয়া যাবে?
উত্তর : এসব ক্ষেত্রে সাধারণত পেডিয়াট্রিক সার্জনের কাছে যেতে হবে। সরকারি বা বেসরকারি হাসপাতালে যেখানে ভালো পেডিয়াট্রিক সার্জন আছে তাদের কাছে যেতে হবে। এসব অপারেশন বেশ সফলভাবেই করা হচ্ছে।
প্রশ্ন : প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে কী নেওয়া যায়?
উত্তর : এনাল ফিসারে ক্ষেত্রে শাকসবজি বেশি করে খেতে হবে। যেসব খাবার পায়খানাকে নরম করে সেসব খাবার খেতে হবে। এই খাবারগুলো যদি প্রথম থেকে শিশুদের খাওয়ানোর অভ্যাস করানো যায় তখন সমস্যাটি হবেই না। পলিপের জন্য তেমন কিছু করার থাকে না। শীতকালে বাচ্চাদের যাতে ঠান্ডা না লাগে এ ব্যাপারে সতর্ক হতে হবে। এ কারণেও অনেক সময় পায়খানার রাস্তা দিয়ে রক্ত যেতে পারে।
প্রশ্ন : যদি সঠিক সময়ে চিকিৎসা করা না হয় তবেকী কী জটিলতা হতে পারে?
উত্তর : এনাল ফিসার হয়ে জটিল পর্যায়ে গেলে অপারেশন লাগে। পলিপ হলে রক্তটা বেশি যেতে থাকে। দীর্ঘদিন রক্ত গেলে শিশুটি রক্তশূন্যতা দেখা দিতে পারে। ইন্টার সাসপেশনে এক ধরনের অদ্ভুত রকমের ব্যথা হয় যা ১৫ মিনিট পরপর ফিরে আসে এবং খিচুনি হয়। এ ধরনের রোগীকে সঙ্গে সঙ্গে একজন শিশু বিশেষজ্ঞের কাছে নিয়ে যেতে হবে।