নারীর অনিয়মিত ঋতুস্রাব
নারী শরীরে প্রচলিত সমস্যার মধ্যে একটি হলো অনিয়মিত ঋতুস্রাব।এই সমস্যার কারণে নারীর দৈনন্দিন কাজকর্ম ব্যহত হয়। তাই সঠিক সময়ে এর চিকিৎসা নেওয়া জরুরি। আজ বুধবার ১১ মার্চ এনটিভির স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ১৯৭১তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন রুসতাক জেনারেল হাসপাতাল ওমানের স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তার হোসনে আরা।
প্রশ্ন : নারীর অনিয়মতি ঋতুস্রাব বিষয়টি কী? এর পেছনের কারণগুলো কী?
উত্তর : নারীর অনিয়মিত ঋতুস্রাব খুবই প্রচলিত সমস্যা। স্বাভাবিক ঋতুস্রাব বলতে আমরা বুঝি ২৮ দিন পর ঋতুস্রাব। অর্থাৎ মাসিকের প্রথম দিন থেকে শুরু করে পরবর্তী মাসিকের প্রথম দিনের পার্থক্য হবে ২৮ দিনের, কমবেশি ৭ দিন। কোনো সময় যদি ২১ দিনের কমে মাসিক হয় সেটি অনিয়মিত ঋতুস্রাব। আবার ৩৫ দিনের উপরেও যদি হয় সেটিও অনিয়মিত ঋতুস্রাব । তা ছাড়াও যদি এর মধ্যে কখনো রক্ত দেখা যায়, যৌন মিলনের কারণে রক্তপাত হয় সেটিও অনিয়মিত ঋতুস্রাবের মধ্যে পড়বে। যখন মেনোপোজ হয় (মাসিক একেবারেই শেষ হয়ে যাওয়া) এর পরও যদি রক্তপাত হয় তবে এটাকেও অনিয়মিত ঋতুস্রাব বলে।
এ ছাড়া যদি স্বাভাবিক মাসিকের মধ্যে বেশি রক্তপাত হয়, অনেকদিন ধরে রক্তপাত হয়, যেখানে হয়তো সাতদিনের মধ্যে শেষ হওয়া উচিত, সেটা যদি ১০ দিন বা ১২ দিন থাকে তবে সেটিও অনিয়মিত। এই সমস্যাটা সব বয়সের নারীর মধ্যেই হতে পারে।
অনিয়মিত ঋতুস্রাব দৈনন্দিন কাজে অসুবিধা সৃষ্টি করে। অনেক সময় নারী শিশুর প্রথম মাসিক শুরুর আগে রক্তপাত হতে দেখা যায়। আবার অনেকের ক্ষেত্রে হয়তো প্রথম মাসিকে রক্তপাত বেশি হয়। এ সময় তাকে রক্ত দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে। অনিয়মিত ঋতুস্রাবের বেশির ভাগ কারণ হচ্ছে হরমোনের গোলমাল।
প্রশ্ন : অনিয়মিত ঋতুস্রাব বোঝার জন্য কী পরীক্ষা করেন?
উত্তর : রোগীর পুরো ইতিহাস দেখে নিতে হয়। দেখতে হয়, কোন বয়সে সমস্যাটি হচ্ছে। যদি কৈশোরে হয়, তবে কতদিন ধরে মাসিক থাকে, এর সঙ্গে ব্যথা হয় কি না এগুলো দেখা হয়। এ ছাড়া জরায়ুর আল্ট্রাসোনোগ্রাম করা হয়। যদি কোনো সমস্যা না থাকে তাহলে দুই বছরের মধ্যেই বিষয়টি ঠিক হয়ে যায়। কেননা মাসিকের পুরো বিষয়টিই হচ্ছে হরমোনাল সামঞ্জস্যের বিষয়।
আর যদি সন্তান জন্মদানের উপযুক্ত বয়সে (রিপ্রোডাকটিভ এজ) এই সমস্যা হয় তাহলে আমাদের চিন্তা করতে হয় গর্ভ সম্পর্কিত কোনো সমস্যা রয়েছে কি না। যেমন : মিস ক্যারেজ বা জরায়ুর কোনো সমস্যা কি না ক্যানসার জাতীয়। তখন তার আল্ট্রাসোনোগ্রামের সঙ্গে বিভিন্ন পরীক্ষা করা হয়। এগুলো করে কারণ বের করতে হবে।
প্রশ্ন : চিকিৎসা কী ধরনের হয়?
উত্তর : কারণের ওপর নির্ভর করে চিকিৎসা দিয়ে থাকি। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে হরমোনের অসামঞ্জস্যতার কারণে সমস্যা হয়। এ সমস্যায় হরমোন দিয়ে চিকিৎসা করলে ভালো হয়ে যায়। যদি কোনো নিদির্ষ্ট কারণ থাকে, যেমন : ফাইব্রোয়েড, সাবমিউকাস, সার্ভাইকেল নিউক্লেসিয়া, সার্ভাইক্যাল ক্যানসার- এসব সমস্যায় বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অপারেশনের মাধ্যমে চিকিৎসা করা হয়।
প্রশ্ন : এই বিষয়ে স্ক্রিনিং কতখানি জরুরি?
উত্তর : অবশ্যই অনেক জরুরি। সার্ভাইক্যাল স্ক্রিনিং, পেপিসমেয়ার করা জরুরি। জরায়ু থেকে ক্ষুদ্র টুকরা করে কোষ নিই। যেকোনো ক্যানসার হওয়ার আগে কোষের মধ্যে কিছু পরিবর্তন আসে। তখন সেই অনুযায়ী চিকিৎসা দেওয়া হয়। এর মাধ্যমে কোনো রোগ আছে কি না সেটি বোঝার চেষ্টা করা হয়।
প্রশ্ন : যেসব নারীর এই সমস্যা হয় তাদের প্রতি পরামর্শ কী থাকে?
উত্তর : ওজনাধিক্য একটি সমস্যা। তাদের ওজন কমাতে হবে। এসব রোগীর সাধারণত ইসট্রোজেন হরমোন বেশি থাকে তখন প্রোজেস্টেরন দিয়ে চিকিৎসা করা হয়।
প্রশ্ন : কখন সে চিকিৎসকের কাছে যাবে?
উত্তর : যখন রোগী বুঝতে পারবে তার সমস্যা হচ্ছে তখনই সে চিকিৎসকের কাছে যাবে।