ভিটামিন ডি-এর অভাবে কী সমস্যা হয়?
বর্তমানে ভিটামিন ডি গ্রহণ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে। ভিটামিন ডি-এর অভাবে হাড়ের বিভিন্ন সমস্যার পাশাপাশি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যেতে পারে। আজ শনিবার (১৪ মার্চ ২০১৫) এনটিভির স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ১৯৭৪তম পর্বে এ বিষয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন স্কয়ার হাসপাতালের ইন্টারনাল মেডিসিন ও ডায়াবেটিসের পরামর্শক ডা. জাহাঙ্গীর আলম।
প্রশ্ন : ভিটামিন এ ও অন্যান্য ভিটামিন নিয়ে কিছুদিন আগেও ব্যাপক প্রচার, আলাপ-আলোচনা ছিল। কিন্তু ইদানীং ভিটামিন ডি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। বিষয়টি এত আলোচনায় আসার কারণ কী?
উত্তর : ভিটামিন ডি একটি ফ্যাট সলিউবল সিকুস্টারয়েড। যার কাজ হচ্ছে ইনটিসটাইন থেকে ক্যালসিয়ামকে শোষণ করা । পাশাপাশি এটি আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম এবং ফসফরাসকেও দ্রবীভূত করে। ভিটামিন ডি নিয়ে ইদানীং অনেক কথাবার্তা হচ্ছে। এক সময় আমরা জানতাম ভিটামিন ডি-এর অভাব হলে শিশুদের রিক্যাডস হয় অর্থাৎ দেহের হাড়গুলো ঠিক মতো বৃদ্ধি পায় না, নরম হয়ে যায়, শিশুর বৃদ্ধি হয় না, হাড় বাঁকা হয়ে যায়।
আর এর অভাবে বয়স্ক লোকদের হাড় নরম হয়ে যায়। তবে ভিটামিন ডি শুধু হাড়ের স্বাস্থ্যের সঙ্গেই জড়িত না। আরো অনেক রোগের সঙ্গেও এর সম্পর্ক খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে।
প্রশ্ন : আর কী কী রোগের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে?
উত্তর : মস্তিস্কের সঙ্গে এর সম্পর্ক পাওয়া যাচ্ছে। যেমন : কগনেটিভ ফাংশন অব মেমোরি। ভিটামিন ডি-এর অভাবে আলাঝাইমার রোগ হতে দেখা যাচ্ছে। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো রাখতে ভিটামিন ডি সাহায্য করে। এর সঙ্গে অ্যাজমারও একটি সম্পর্ক আছে। যাদের দেহে ভিটামিন ডি-এর অভাব রয়েছে তাদের অ্যাজমার সমস্যা হতে পারে। যারা পার্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন ডি গ্রহণ করে তাদের মৃত্যুর হার কম থাকে।
ভিটামিন ডি-এর সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে হৃদরোগ এবং ক্যানসারেরও। কিছু অটো ইমিউন রোগেরও সঙ্গে সম্পর্ক আছে। সম্পর্ক আছে গর্ভধারণ এবং ডায়াবেটিসের সঙ্গেও।
প্রশ্ন : ভিটামিন ডি-এর উৎস কী?
উত্তর : একে দুটো ভাগে ভাগ করা যায়। ডি থ্রি এবং ডি টু। ডি থ্রি প্রকৃতগতভাবে দেহে উৎপন্ন হয়। আমাদের ত্বকের নিচে সেভেন ডি হাইড্রোকোলেস্টেরল নামে একটা পদার্থ থাকে। সূর্যের আলোর আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মি যদি আপনার চামড়ার নিচে পড়ে তাহলে এমনিতেই ভিটামিন ডি থ্রি তৈরি হয়। তবে এই রোদ হতে হবে সকাল ৯ টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত।
ভিটামিন ডি ৮০ শতাংশ আসে সূর্যের আলো থেকে। বাকি ২০ শতাংশ খাবারে পাওয়া যায়। তবে এই খাবারগুলো আমাদের দেশে প্রচলিত না। যেমন : সামুদ্রিক মাছ, কর্ড মাছ, ম্যাকরিল, সারদিনস। এগুলো আমাদের দৈনন্দিন খাবারের মধ্যে পড়ে না। সবার একটা ধারণা দুধের মধ্যে ভিটামিন ডি আছে। দুধের মধ্যে ক্যালসিয়াম আছে। ভিটামিন ডি-এর মাত্রা কম। এমনকি বুকের দুধের মধ্যেও কম আছে।
ভিটামিন ডি ডিমের মধ্যে আছে। তবে একটি ডিমের মধ্যে হয়তো ২০ থেকে ৩০ ইউনিট থাকতে পারে। কিন্তু কয়টা ডিম আপনি প্রতিদিন খেতে পারবেন?
বয়স ভেদে প্রতিদিনের প্রয়োজনিয়তা মাত্রা রয়েছে। যেমন : এক বছর পর্যন্ত বয়সে ৬০০ ইউটিন। এক বছর থেকে ৭০ বছর পর্যন্ত ৬০০ থেকে ৭০০ ইউনিট। আর যাদের বয়স ৭০-এর উপরে তাদের দেখা যায় ৭০০ ইউনিটের বেশি লাগছে।
শরীরে ভিটামিন ডির অভাব আছে কি না এটা স্ক্রিনিং করলে বোঝা যায়। এগুলো আমাদের দেশে বিভিন্ন হাসপাতালে করা হয়। ৩০ ন্যানোগ্রামের ওপর যদি থাকে তাহলে পর্যাপ্ত আর যদি ১০ থেকে ২৯ যদি হয় তাহলে অপার্যাপ্ত বলি। আর আসলেই অভাব হবে যদি ১০ এর নিচে থাকে।
প্রশ্ন : ভিটামিন ডি আমরা পাই বাজারে প্রচলিত ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্ট থেকে পাই, রোদে আলো থেকে পাই। কিন্তু দৈনন্দিন জীবন যাপনে রোদের আলোতে বসার সুযোগ কমে গেছে কি না, কী মনে করেন আপনি?
উত্তর : আমাদের যে দৈনন্দিন জীবনযাপন হয়েছে আমরা সকালে ঘর থেকে বের হই গাড়ি দিয়ে। অফিস শেষে রাতে বাসায় ফিরে আসি। সুতরাং রোদের আলো সেভাবে গ্রহণ করা হচ্ছে না। আর যারাও একটু পায় তারাও গায়ে সানব্লক দিয়ে থাকে। ভয় পায় রোদে চামড়ার বিভিন্ন সমস্যা হওয়ার। এসব বিভিন্ন কারণে দেখা যায় প্রকৃতগতভাবে ভিটামিন ডি আমরা পাচ্ছি না। এমনকি খাবার থেকেও পাচ্ছি না।
প্রশ্ন : তাহলে এর ঘাটতি পূরণ করার উপায় কী?
উত্তর : দেহে ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি হলে কতগুলো লক্ষণ প্রকাশ পায়। এসব রোগীর শরীর মেজমেজ করে, গাঁটে ব্যথা করে, হাড়ে ব্যথা হয়। বসা থেকে উঠতে গেলে হয়তো শক্তি পায়। আপনি শরীরের সব অংশ ঢেকে রাখলে, রোদ না পেলে ভিটামিন ডি থেকে বঞ্চিত হবেন। যদি কারো স্ক্রিনিং করে দেখা যায় দেহে ভিটামিন ডি অপর্যাপ্ত বা ঘাটতি আছে তাদের আগে ঘাটতি পূরণ করতে হয়। তারপর প্রতিদিন ভিটামিন ডি গ্রহণের প্রয়োজনীয়তার বিষটিতে সচেতন করে তুলতে হয়।
প্রশ্ন : যদি কেউ ভিটামিন ডি কিনে খাওয়া শুরু করে সেটি ঠিক হবে কি না?
উত্তর : নিজে নিজে ওষুধ কিনে খেলে জটিলতা তৈরি হতে পারে। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্ট সেবন করা উচিত না। আর সবচেয়ে ভালো হয় যদি সূর্যের আলো থেকে ভিটামিন ডি গ্রহণ করা যায়।