বৃদ্ধ বয়সে অন্ধত্ব, কী করবেন
প্রবীণ বয়সে বিভিন্ন কারণে অন্ধত্ব দেখা যায়, একে বার্ধক্যজনিত অন্ধত্ব বলা হয়। এটি প্রতিরোধে প্রয়োজন সচেতনতা। বার্ধক্যজনিত অন্ধত্ব প্রতিরোধে আগে থেকেই চোখ পরীক্ষা করা বা স্ক্রিনিং করা জরুরি। আজ ১৫ মার্চ এনটিভির স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ১৯৭৫তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন গ্রিন লাইফ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষ এবং চক্ষু বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. আভা হোসেন।
প্রশ্ন : বার্ধক্যজনিত অন্ধত্বের পেছনের কারণ কী?
উত্তর : শুধু আমাদের দেশেই নয় পৃথিবীর সব জায়গায় অন্ধত্বের প্রধান কারণ ক্যাটারেক্ট বা ছানি। চোখের ভেতরে স্বচ্ছ লেন্স যখন অস্বচ্ছ হয়ে যায় তখন তাকে ছানি বা পর্দা বলা হয়। এ ছাড়া কর্নিয়া-জনিত কারণে অন্ধত্ব হয়। বিভিন্ন আঘাতের কারণে এই সমস্যায় হতে পারে। আমাদের দেশে অনেক সময় ধান কাটার সময় আঘাত পেয়ে কর্নিয়ায় সমস্যা হয়। এ ছাড়া সড়ক দুর্ঘটনা, লোহা নিয়ে যারা কাজ করে, তারা যদি কখনো লোহা দিয়ে আঘাতপ্রাপ্ত হয়, তখন কর্নিয়াল আলসার হয়ে অন্ধত্ব হয়।
এ ছাড়া আছে গ্লুকোমা। অনেক সময় গ্লুকোমায় ব্যথা হয়, তখন চিকিৎসকের কাছে সহজেই আসা সম্ভব হয়। আবার কখনো কখনো গ্লুকোমায় কোনো ব্যথা হয় না।
দেখা যায়, ৫০ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে অনেক রোগীই আমাদের কাছে আসেন, যাদের চোখে গ্লুকোমা আছে, পাশাপাশি ছানিও আছে। সমস্যাটি রোগী হয়তো প্রথমে বোঝে না, পরে চিকিৎসক পরীক্ষা করে বুঝতে পারেন। এই সমস্যা প্রতিরোধযোগ্য, কিন্তু প্রতিকার করা যায় না।
ছানির পুরোপুরি চিকিৎসা হয়। একজন রোগীর ছানির সমস্যা থাকলে অপারেশন করা হলে সে সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে যায়। কিন্তু গ্লুকোমার ওষুধ বা অপারেশরন যেই চিকিৎসাই করা হোক না কেন পুরোপুরি দৃষ্টি ভালো হয় না। গ্লুকোমায় দৃষ্টি শক্তি নষ্ট হয় না। তবে দৃষ্টি সংকুচিত হয়ে আসে। বয়স চল্লিশের উপর যেকোনো ব্যক্তির চোখ স্ক্রিনিং করা জরুরি। তাই এই বয়সে কোনো রোগী যদি চিকিৎসকের কাছে আসেন তখন চিকিৎসক চোখের নার্ভটিও দেখে দিলে ভালো হয়।
এ ছাড়া অন্ধত্বের আরেকটি কারণ ডায়াবেটিস। এটি এমন একটি রোগ যার ফলে চোখে প্রভাব পড়ে। রেটিনাতে রেটিওপেথি হয়। ধীরে ধীরে দুটো চোখই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যাদের উচ্চ রক্তচাপ আছে তাদেরও চোখ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
প্রশ্ন : গ্লুকোমা প্রতিরোধে করণীয় কী?
উত্তর : আগেই বলেছি , গ্লুকোমায় অন্ধত্ব প্রতিকার করা যায় না। প্রতিরোধ করা যায়। যদি কোনো রোগী গ্লুকোমার সমস্যা নিয়ে আসে তখন আমরা চেষ্টা করি ওষুধপত্র দিয়ে চিকিৎসা করার। আর এ বিষয়ে রোগীকেও সচেতন করা হয়।
তবে গ্লুকোমায় আক্রান্ত অনেকের হয়তো চোখে কোনো সমস্যা হয় না। তাই তারা নিয়মিত ওষুধ ব্যবহার করতে চান না। এদের জন্য অনেক ক্ষেত্রে আমরা একেবারেই সার্জারি করে দিই। তবে শুধু সার্জারি করলেই হবে না। বছরের অন্তত একবার হলেও চোখের ফলোআপ করা প্রয়োজন। তাহলে তার চোখের জন্য যতটুকু চিকিৎসা করা দরকার ততটুকু আমরা করতে পারব।
অনেক সময় আই ক্যাম্প করেও এসব বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করা হয়। সুপ্ত রোগ যদি চোখে থাকে তাহলে স্ক্রিনিং করলে ধরা পড়বে।
যে গ্লুকোমায় ব্যথা হয় না এটা তুষের আগুনের মতো চোখকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। আর যে গ্লুকোমায় লক্ষণ প্রকাশ পায় সেটা অনেকটাই ভালো করা যায়।
প্রশ্ন : বার্ধক্যজনিত অন্ধত্ব ঠিক কোন কোন কারণে হচ্ছে এটা যদি একটু সংক্ষেপে বলেন?
উত্তর : ডায়াবেটিস যদি কারো থাকে অবশ্যই সে চোখ পরীক্ষা করবে। বয়স বাড়লে যখন মনে হবে চোখে সমস্যা হচ্ছে তখন চিকিৎসকের কাছে যাবে। বিশেষ করে কৃষি কাজের সঙ্গে জড়িত যারা তাদের চোখে যেন আঘাত না পায় সে বিষয়ে সতর্ক হতে হবে। সেজন্য প্রতিরোধমূলক গ্লাস ব্যবহার করা যেতে পারে।
ওয়েলডিং কাজের সঙ্গে জড়িত যারা তারাও প্রতিরোধমূলক গ্লাস ব্যবহার করবেন। না হলে আগুনের ফুলকির কারণে কর্নিয়া নষ্ট হয়ে যেতে পারে।