স্বরভঙ্গের কারণ
গলার স্বরভঙ্গের সমস্যা অনেকের ক্ষেত্রেই দেখা যায়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ঠান্ডার কারণে এ সমস্যা হয়। এ সময় গলাকে বিশ্রাম দেওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকরা। আজ মঙ্গলবার (১৭ মার্চ-২০১৫) এনটিভির স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ১৯৭৭তম পর্বে এ বিষয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন স্কয়ার হাসপাতালের ইএনটি ও হেডনেক সার্জারি বিভাগের পরামর্শক ডা. এম এইচ শাহিল মাহমুদ।
প্রশ্ন : স্বরভঙ্গের কারণগুলো কী কী?
উত্তর : গলার স্বর বসে যাওয়া খুব প্রচলিত সমস্যা। বিশেষ করে শীতকালে যাদের ঠান্ডার সমস্যা রয়েছে, তাদের এই সমস্যা হতে দেখা যায়। আমাদের গলায় যদি সংক্রমণ (ইনফেকশন) হয় এবং সেটা যদি ওপর থেকে নিচের দিকে নেমে যায়, তাহলে গলা বসে যায়। এ ছাড়া আরো বিভিন্ন কারণে গলার স্বর বসে যায়।
গলার ভোকাল কর্ড বা স্বর তারে যদি সংক্রমণ (ইনফেকশন) হয় এবং ফুলে যায়, তখনই স্বরটা বদলে যায়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এটি সহজেই ভালো হয়ে যায়। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে নিয়মিত হতে দেখা যায়।
এটা কিছু বিষয়ের ওপর নির্ভর করে। অনেকে গলার স্বর বসে গেলে আরো চাপ দিয়ে কথা বলে, তখন ভোকাল কর্ডের ওপর আরো বেশি চাপ পড়ে। ফলে এই সমস্যা দিনের পর দিন চলতে থাকে। একপর্যায়ে ক্রনিক লেরিংজাইটিসে রূপান্তরিত হয়। যার ফলে তার স্বর একেবারেই খারাপ হয়ে যায়।
অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, স্কুলপড়ুয়া শিশুদের এ সমস্যা হয়। তারা হয়তো স্কুলে গিয়ে চিৎকার করছে। বুঝতে পারছে না, এ সময়টায় কথা না বলাই ভালো, গলাকে বিশ্রাম দিতে হবে। তাদের ক্ষেত্রে এ সমস্যা বেশি হয়।
কিছু পেশা রয়েছে, যাদেরও হয়তো নিয়মিত কথা বলতে হয়। এদের ক্ষেত্রেও এই সমস্যা হতে পারে। আজকাল দেখা যায়, কলসেন্টারগুলোতে যাঁরা চাকরি করেন, তাঁদের একটানা আট ঘণ্টা কথা বলতে হয়। তাঁদের এই রোগ হয় এবং একবার হলে সহজে ভালো হতে চায় না।
রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, যাদের সভা-সমিতিতে প্রচুর বক্তব্য দিতে হচ্ছে, তাদের ক্ষেত্রেও এই সমস্যা হয়।
চিকিৎসা করার সময় তাই রোগীকে বলে দিই, ওষুধ খেলেন, কিন্তু কথা বন্ধ রাখলেন না, তাহলে এ রোগে উন্নতি হবে না। রোগীদের জন্য প্রথম দিকে সবচেয়ে বড় পরামর্শ থাকে, কথা বন্ধ করে দেওয়া।
এ ছাড়া আরো কিছু রোগে গলার স্বর বসে যায়। যেমন : বয়স্কদের ক্ষেত্রে মেলিগনেনসি। এটি ক্যানসার পর্যায়ে যেতে পারে। তাই বয়স্কদের ক্ষেত্রে বলি, যদি অনেক দিন ধরে গলার স্বর বসে থাকে, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করুন।
প্রশ্ন : বেশি দিন বলতে কী বোঝাচ্ছেন? আসলে কত দিন ধরে স্বরভঙ্গ থাকলে চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত?
উত্তর : আসলে এর কোনো নির্দিষ্ট সময়সীমা নেই। তবে সাধারণত দুই-তিন সপ্তাহের ওপরে যদি স্বরের উন্নতি না হয়, তাহলে এটা পরীক্ষা করা উচিত।
আরো কিছু স্বরভঙ্গের কারণ রয়েছে, যেমন : ভোকাল কর্ডে কিছু পলিপ, ভোকাল নডিউল। এই জিনিসগুলো কখনো কখনো দুটি তারকে (কর্ড) একসঙ্গে আসতে দেয় না। তখন রোগী চাপ দিয়ে কথা বলে। দিন দিন এটাও বাড়তে থাকে, যদি চিকিৎসা না করা হয়।
প্রশ্ন : কখন স্বরভঙ্গের চিকিৎসা করা উচিত?
উত্তর : যখন স্বর বসে যাচ্ছে এবং দু-একদিনের ভেতর এর যখন উন্নতি হচ্ছে না, তখন চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত। কারণ, এটাকে অবহেলা করা মানে খারাপের দিকে নিয়ে যাওয়া।
চিকিৎসার ক্ষেত্রে প্রথমত মেডিকেশন দিয়ে চিকিৎসা করি। আমরা বুঝতে পারি, কী ধরনের সমস্যা থেকে এটি হচ্ছে। যেমন : এখনকার আবহাওয়ার জন্য ঠান্ডাজনিত সমস্যায় গলা স্বর বসে গেছে, এ ধরনের রোগী বেশি আসে। ঠান্ডা থেকে নাক বন্ধ হয়ে গেল এতে হয়তো রোগী মুখ দিয়ে শ্বাস নেয়, গলায় সংক্রমণ হয়। কাজেই এ সময় নাকটা খোলা রাখার চিকিৎসা দেওয়া হয়। নাক দিয়ে যখন বাতাস যায়, তখন কিছু পরিবর্তন হয়। নাক বাতাসটাকে সরু করে ভেতরে দিকে ঠেলে দিতে সাহায্য করে। কিন্তু মুখ দিয়ে যদি শ্বাস নেওয়া হয়, তাহলে গলায় অনেক ধরনের ইনফকেশন হতে পারে। তাই নাক দিয়ে যেন বাতাস নেওয়া যায়, সে বিষয়ে আমাদের চেষ্টা থাকে।
প্রশ্ন : কত দিন ধরে চিকিৎসা করা হয়?
উত্তর : যদি প্রাথমিক চিকিৎসায় দেখা যায় স্বরের উন্নতি হচ্ছে না, তখন কিছু কিছু পরীক্ষা করা হয়। যেমন : ফাইবার অপটিক লেরিঙ্গোস্কোপি। আমরা নাকের ভেতরে লেরিঙ্গোস্কোপ দিয়ে দেখতে পাই গলার ভেতরে লেরিংসের কী অবস্থা। এটা দেখলে সমস্যাটি নির্ণয় করতে পারি।
প্রশ্ন : চিকিৎসা-পরবর্তীকালে আপনাদের পরামর্শ কী থাকে?
উত্তর : ঠান্ডা থেকে যাদের গলার স্বর বসে যাচ্ছে, তাদের ক্ষেত্রে পরামর্শ হচ্ছে যত দ্রুত সম্ভব ঠান্ডাকে ভালো করে তোলা। ঠান্ডা যদি প্রথম দিকেই ভালো করে নিতে পারেন, তাহলে সমস্যাটি আর বাড়ে না।