পাকস্থলির ক্যান্সারের ঝুঁকি কাদের বেশি?
পাকস্থলির ক্যানসার সাধারণত ৪০ বছরের পরে হয়। প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পড়লে এ রোগ ৯০ শতাংশ ভালো করা সম্ভব।আজ মঙ্গলবার ২৫ মার্চ এনটিভির স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ১৯৮৫তম পর্বে এ ব্যপারে কথা বলেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মনির হোসেন খান।
প্রশ্ন : সাধারণত কারা পাকস্থলির ক্যানসার হওয়ার ক্ষেত্রে ঝুঁকিপূর্ণ দল?
উত্তর : পাকস্থলি ক্যানসার বা স্টোমাক ক্যানসার সাধারণত ৪০ বছরের পরে হয়। ভৌগোলিক কারণে বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন রকম হয়। আমাদের দেশে এ রোগীর সংখ্যা নিয়ে নির্দিষ্ট কোনো পরিসংখ্যান নেই। জাপানে, পূর্ব ইউরোপ- এসব অঞ্চলে এই সমস্যা বেশি হয়।
পাকস্থলির ক্যানসার বিভিন্ন কারণে হয়ে থাকে। নির্দিষ্ট কিছু খাবার যদি কেউ বেশি পরিমাণে খায় তাহলে এ সমস্যা হয়। যেমন, স্প্রিট বেশি পান করলে, ধূমপান করলে, প্রিজারভেটিভ ব্যবহার করা হয় এমন খাবার বেশি খেলে এ সমস্যা হয়। যারা কোস্টাল বেল্ট এলাকায় থাকে তারা নোনা যুক্ত খাবার বেশি খায়। এরা এই রোগের ঝুঁকিতে থাকে।
এ ছাড়া কিছু বংশগত কারণ থাকে। যাদের রক্তের গ্রুপ এ পজেটিভ তাদের বেশি ঝুঁকি থাকে।
এই রোগের লক্ষণ হলো, ৪০ বছরের পড়ে যদি কারো হঠাৎ করে খাওয়ায় মন্দাভাব থাকে। এতটাই মন্দাভাব হয় যে সে খেতেই পারে না। অল্প খেলেই তার হয়তো পেট ভরে যায়। শরীরের ওজন কমে যায়। দুর্বলতা বেড়ে যায়। রক্তবমি হতে পারে। পেটে চাকা বা ব্যথা হতে পারে। তখন এ সমস্যা আছে কি না পরীক্ষা করতে হবে।
প্রশ্ন : কীভাবে রোগটি নির্ণয় করেন?
উত্তর : রোগীর ইতিহাস নেই। এন্ডোস্কোপি (মুখ দিয়ে নল ঢুকিয়ে পাকস্থলির টিস্যু নেওয়া) পরীক্ষা করি। এন্ডোস্কোপি করে ওখান থেকে টিস্যু নিয়ে আসি। এরপর টিস্যু মাইক্রোস্কোপের নিচে পরীক্ষা করা হয়।
প্রশ্ন : পাকস্থলিতে ক্যানসার হলে তার চিকিৎসার ধরন কী হয়?
উত্তর : ক্যানসার হলে সেটি কোন পর্যায়ে আছে তার জন্য কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হয়। আল্ট্রসোনোগ্রাফি করতে পারি। যদি প্রাথমিক পর্যায়ে থাকে তাহলে চিকিৎসার ফলাফল অনেক ভালো হয়। প্রায় ৯০ শতাংশ ভালো হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। প্রাথমিক পর্যায়ে থাকলে শুধু সার্জারি করে ফলোআপ করি। যদি পর্যায়-২-এ থাকে তবে বেঁচে থাকার হার ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ বেড়ে যায়। পর্যায় ৩ হলে ৩০ শতাংশ হার হয়। আর পর্যায় ৪ হয়ে গেলে ১০ বছরের কম বেঁচে থাকার সম্ভাবনা থাকে।
প্রাথমিক অবস্থায় নির্ণয় করার জন্য কিছু স্ক্রিনিং প্রোগ্রাম আছে। উন্নত বিশ্বে যেমন জাপান, সুইডেন, নরওয়ে সেখানে নিয়মিত ৪০ বছরের পড়ে এন্ডোস্কোপি করা হয়। এটা আমাদের দেশে করতে পারলেও ভালো হয়। লক্ষণ প্রকাশের আগে বুঝতে পারা যায় তার কোনো সমস্যা আছে কি না।
প্রশ্ন : পাকস্থলির ক্যানসারে ক্যামোথেরাপি এবং রেডিও থেরাপির ভূমিকা কী এবং কখন?
উত্তর : পাকস্থলি ক্যানসারে রেডিওথেরাপির তেমন কোনো ভূমিকা নেই। কিন্তু যদি ক্যানসার হাঁড়ে ছড়িয়ে পড়ে তখন রেডিওথেরাপি দেওয়া যেতে পারে।
ক্যামোথেরাপির আগে কোনো ভূমিকা ছিল না। তবে বর্তমানে ক্যামোথেরাপির ভূমিকা রয়েছে। রোগীর যদি এডভান্স সার্জারি না করা যায় তখন ক্যামোথেরাপি করি। আবার অনেক ক্ষেত্রে সার্জারি করার পর ক্যামোথেরাপি এখন যোগ করা হয়। অথবা আগে ক্যামোথেরাপি দিয়ে ওটাকে ছোট করে সার্জারি করা হয়।
প্রশ্ন : অনেক সময় ক্যানসার হলে দেখা যায় এটি শরীরের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে পড়ে। পাকস্থলির ক্যানসার হলে সাধারণত শরীরের কোন কোন অংশে ছড়িয়ে পড়ে এবং সেটা কী কী?
উত্তর : পাকস্থলিতে আমাদের তিনটি অংশ। উপরের অংশ বা কার্ডিয়া, মূল শরীর বা বডি আর নিচে হলো এন্টাম। কোন অংশে ক্যানসার হয়েছে তার উপরে নির্ভর করে কোন জায়াগায় ছড়াবে এই বিষয়টি। সাধারণত আমাদের দেশে এন্টাম অংশে ক্যানসার হওয়ার হার বেশি। এসব ক্যানসার হলে সাধারণত বমি বেশি হয়। এ সময় অবস্থা বুঝে ওই অংশের সার্জারি করা হয়। তবে অস্ত্রপচার করার পড়ও রোগীকে পর্যবেক্ষণের মধ্যে রাখতে হয়। তিন মাস পর, চার মাস পর বা বছর বছর এসে নিয়মিত পরীক্ষা করাতে হয়।