কান খোঁচালেও হতে পারে কানপাকা রোগ
অসচেতনতা কানপাকা রোগের একটি বড় কারণ। সমীক্ষায় দেখা গেছে, দরিদ্র ও মধ্যবিত্তদের মধ্যে এই সমস্যা বেশি হয়। কানপাকা খুব ছোট রোগ হলেও সঠিক সময় চিকিৎসা না করা হলে এটি মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। এ বিষয়ে কথা বলেছেন সিটি হাসপাতালের নাক, কান, গলা বিভাগের পরামর্শক ডা. মো. ওয়াহিদুজ্জামান। আজ (৩ ফেব্রুয়ারি) মঙ্গলবার এনটিভির স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের এক হাজার ৯৩৫তম পর্বে এই সাক্ষাৎকার প্রচারিত হয়।
প্রশ্ন : কান পাকা বলতে আমরা কী বুঝি?
উত্তর : কানের তিনটি অংশ রয়েছে। একটি বাইরের অংশ বা বহিঃকর্ণ, মাঝখানের অংশ বা মধ্যকর্ণ, গভীরের অংশ বা অন্তঃকর্ণ। কানপাকা মধ্যকর্ণের একটি রোগ। মধ্যকর্ণে যখন কোনো ঘা হয় অথবা মধ্যকর্ণ ও বহিঃকর্ণের মাঝখানের পর্দা যদি ফেটে গিয়ে পুঁজ বের হয়, তখন এটিকে কানপাকা বলা হয়।
প্রশ্ন : কানপাকার লক্ষণ কী?
উত্তর : এই সমস্যায় কান দিয়ে পানি পড়ে, পুঁজ বের হয় (পুঁজ খুব বেশি বা অল্প হতে পারে)। রোগী কানে কম শোনেন, কানে ব্যথা হয়, শব্দ হয়। অনেক সময় মাথা ঘোরাতে পারে।
প্রশ্ন : যখন কারো কান থেকে পানি পড়ে তখনই কি চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে?
উত্তর : অবশ্যই চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। প্রথমেই চিকিৎসকের কাছে গেলে কান পাকা ভালো হয়ে যায়।
প্রশ্ন : কানপাকা বোঝার জন্য কোনো পরীক্ষা রয়েছে কি?
উত্তর : ডাক্তারি পরীক্ষার মাধ্যমে বোঝা যায় পর্দায় কোনো ছিদ্র আছে কি না। ছিদ্রটি কোথায় রয়েছে সেটি নির্ধারণ করা হয়। এ ছাড়া শোনার পরীক্ষা এবং আরো কিছু পরীক্ষার মাধ্যমে আমরা বুঝতে পারি কানপাকা রোগ আছে কিনা।
প্রশ্ন : এই রোগে কী কী সমস্যা হতে পারে?
উত্তর : কান পাকা মধ্যকর্ণের রোগ। কিন্তু কিছুদিন পরে এটি অন্তঃকর্ণে ছড়িয়ে পড়তে পারে। এ সময় রোগীর মাথা ঘোরার সমস্যা হতে পারে। একে অবহেলা করলে চলবে না।
প্রশ্ন : এই রোগের চিকিৎসা কী?
উত্তর : এই রোগে দুই ধরনের চিকিৎসা হয়। সেভ ভেরাইটি (নিরাপদ থাকলে) এবং আনসেভ ভেরাইটি (ঝুঁকি থাকলে)।
আনসেভ ভেরাইটির ক্ষেত্রে কান দিয়ে পানি কম বের হবে, তবে দুর্গন্ধ হবে, কানে অনেক কম শুনবে। দ্রুত সার্জারি করা হলে এই রোগ ভালো হয়।
সেভ ভেরাইটি হলে কান ভালোভাবে পরিষ্কার করে সিসটেমিক অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হয়। নেজাল ডি কনজাসটেন দেওয়া হয়। এ ছাড়া সিসটেমিক ডি কনজাসটেন ও অ্যান্টি অ্যালার্জিক ওষুধও দেওয়া হয়। এভাবে সাতদিন ওষুধ দিয়ে দেখা হয়। যদি শুষ্ক হয়ে যায় তবে কানের পর্দা ভালো করার অপারেশন করা হয়। বাংলাদেশ এ রোগের চিকিৎসায় এখন বেশ এগিয়ে রয়েছে।
প্রশ্ন : এই রোগের কারণ কী?
উত্তর : অবহেলা, সচেতনতার অভাব এই রোগের প্রধান কারণ। অনেকে বারবার ঠাণ্ডা লাগলে সেটিকে অবহেলা করে। এর থেকে এই সমস্যা হতে পারে।
মায়েরা শিশুদের বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় অবহেলা করেন। অনেকে জানে না কীভাবে দুধ খাওয়াতে হবে। এটিও একটি বড় কারণ। কেননা নাক এবং গলার সংযোগ নালিতে ইউসটিশন টিউব থাকে। এই টিউবে বাচ্চাদের ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম হয়। তাদের টিউবটি মোটা, ছোট এবং আনুভূমিক থাকে। তাই দুধ খাওয়ানোর সময় কখনো কখনো কানেও চলে যেতে পারে। তখন কানে ঘা হয়।
বেশি কটন বাড ব্যবহারের ফলেও কান ছিদ্র হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
প্রশ্ন : কান পাকা চিকিৎসা সঠিক সময়ে না করা হলে কী কী জটিলতা তৈরি হতে পারে?
উত্তর : এর ফলে অন্তঃকর্ণেও সমস্যা হতে পারে। আমাদের মুখের গুরুত্বপূর্ণ ফেসিয়াল নার্ভ আক্রান্ত হয়ে মুখ বেঁকে যেতে পারে। মধ্যকর্ণের হাড় ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এর ফলে ফোঁড়া হতে পারে। এ ছাড়া মস্তিষ্কও আক্রান্ত হতে পারে। এসব ক্ষেত্রে রোগী মারাও যেতে পারে।