ক্যানসার আমরাই পারি রুখতে
আজ ৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ক্যানসার দিবস। এই দিবস সামনে রেখে ক্যানসার প্রতিরোধে আমাদের কী করণীয়, সে সম্পর্কে কথা বলেছেন জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট এবং হাসপাতালের ক্যানসার এপিডিমিউলোজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সহযোগী অধ্যাপক চিকিৎসক মো. হাবিবুল্লাহ তালুকদার রাসকিন। আজ বুধবার এনটিভির ‘স্বাস্থ্য প্রতিদিন’ অনুষ্ঠানের এক হাজার ৯৩৬ পর্বে এই সাক্ষাৎকার প্রচারিত হয়।
প্রশ্ন : প্রতিবছরই ৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্বব্যাপী পালিত হয় ক্যানসার দিবস। এই দিবস সামনে রেখে আমাদের দেশেও বিভিন্ন ব্যক্তি, সংগঠন, প্রতিষ্ঠান নানামুখী আয়োজন করে থাকে। বাংলাদেশে আপনারা কী করছেন এবং এবার এই দিবসের প্রতিপাদ্য কী?
উত্তর : আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর ক্যানসার কন্ট্রোল (ইউআইসিসি) বিশ্ব ক্যানসার দিবস পালনের উদ্যোগ নিয়েছে। দিবস হিসেবে দিনটি ২০০০ সালে প্রথম পালিত হয়। তার পর থেকে এবার ১৫ বারের মতো এটি পালিত হচ্ছে। প্রতিবছরই একটি প্রতিপাদ্য থাকে। এবারের প্রতিপাদ্য ‘ক্যানসার নট বিয়ন্ড আস’, অর্থাৎ ক্যানসার আমাদের আয়ত্তের বাইরে নয়। আমরা বাংলাদেশে এটিকে সহজ করে বলছি, ‘ক্যানসার আমরাই পারি রুখতে।’
ক্যানসারের প্রতিরোধ আমাদের দ্বারা সম্ভব—এই ইতিবাচক মানসিকতার বার্তা আমরা মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে চাই।
ক্যানসার প্রতিরোধে দরকার স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন। ক্যানসার ধরা পড়লে দেরি না করে প্রথম পর্যায়েই চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। শেষে গেলে আমাদের তেমন কিছু করার থাকে না। যদি প্রাথমিক অবস্থায় ক্যানসার নির্ণয় করা যায়, তাহলে এই রোগ থেকে অনেকটা মুক্তি পাওয়া যাবে।
তাই ক্যানসারের যে সাতটি লক্ষণ রয়েছে, সেটি দেখলেই চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। যত প্রাথমিক অবস্থায় চিকিৎসা করা যাবে, সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা তত বাড়বে। এ ছাড়া চিকিৎসার ব্যয়ও কমবে।
আরেকটি বিষয়, চিকিৎসা যেন সবার নাগালের মধ্যে থাকে। সরকারি যে চিকিৎসা ব্যবস্থা আছে, তা আমাদের দেশের মোট জনগণের তুলনায় যথেষ্ট নয়। এতে যতটুকু জনবল কাজ করছে, তা-ও যথেষ্ট নয়।
এখন অনেক ভালো হাসপাতাল হচ্ছে, যেখানে ক্যানসারের চিকিৎসা করা হয়। কিন্তু সাধারণ মানুষের সেখানে যাওয়ার সুযোগ থাকে না। তাই ক্যানসারের চিকিৎসা সবার নাগালের মধ্যে থাকা জরুরি।
আমরা হয়তো ক্যানসারের রোগীকে পুরোপুরি সুস্থ করতে পারি না, কিন্তু প্রশমনমূলক চিকিৎসা বা পেলিয়েটিভ কেয়ার করা যেতে পারে। অর্থাৎ রোগীটি যতদিন বেঁচে আছেন, তাঁকে যেন শান্তিতে রাখা যায় সে চেষ্টা করতে হবে।
প্রশ্ন : আমরা জানি, ক্যানসারের পরিমাণে কিছু প্রচলিত পরিমাপ রয়েছে, যেগুলো ক্যানসার প্রতিরোধে সাহায্য করে। সেগুলো সম্পর্কে বলবেন কী?
উত্তর : বংশগত কারণে হতে পারে। এক প্রজন্মের থাকলে পরবর্তী প্রজন্মের হতে পারে। যেমন—স্তন ক্যানসারের ক্ষেত্রে এটি হতে পারে। শিশুদের চোখের পর্দায় একধরনের ক্যানসার হয়, যার নাম রেটিনোব্লাসটোমা, সেটিও বংশগত।
এসব ক্ষেত্রে আগে থেকে পরীক্ষা করে নেওয়া যেতে পারে।
অনেক সময় পরিবেশের প্রভাবেও আমরা ক্যানসার দ্বারা আক্রান্ত হই। তামাক ও তামাকজাত দ্রব্য অন্যতম কারণ ক্যানসারের। শুধু সিগারেট নয়, জর্দা, সাদা পাতা ইত্যাদি খেলেও ক্যানসার হতে পারে। চার হাজার কেমিক্যাল আছে তামাকে, যার মধ্যে ৪৩টি সরাসরি ক্যানসারের জন্য দায়ী।
এ ছাড়া পরিবারে যদি কেউ তামাক গ্রহণ করে, তার প্রভাবে অন্যরাও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। অ্যালকোহল বা মদ লিভার, খাদ্যনালি, পাকস্থলীর ক্যানসার তৈরি করে।
যাঁরা চর্বি বেশি খান, তাঁদের ক্ষেত্রে ক্যানসার হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়। তাই শাকসবজি ফলমূল বেশি খেতে হবে। এগুলো ক্যানসার প্রতিরোধে সাহায্য করে। এর বাইরে শরীরের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা প্রয়োজন। যেমন—মুখগহ্বরের ক্যানসার অপরিচ্ছন্নতার জন্য হতে পারে। জরায়ু ক্যানসারের সঙ্গে ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা সম্পর্কিত।
প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে টিকা নেওয়া যেতে পারে। যেহেতু জন্ডিস থেকে লিভার ক্যানসার হওয়ার আশঙ্কা থাকে, তাই হেপাটাইটাল জীবাণু প্রতিরোধক টিকা নিতে হবে। এ ছাড়া নারীর ক্ষেত্রে জরায়ু ক্যানসারের বিরুদ্ধে টিকা রয়েছে, সেটি দেওয়া যেতে পারে। তবে নির্দিষ্ট বয়সে সঠিক চিকিৎসকের কাছ থেকে টিকা নিতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো পদক্ষেপ নেওয়া ঠিক নয়।