নাকের বাঁকা হাড়ের সমস্যায় দেরি নয়
নাকের বাঁকা হাড়ের সমস্যা তেমন বিরল নয়। সাধারণত ৮০ শতাংশ মানুষেরই বিভিন্ন কারণে নাকের মধ্যবর্তী হাড় বাঁকা হতে পারে। তবে এর ফলে যদি সমস্যা হয় তবে চিকিৎসকের কাছে অবশ্যই যেতে হবে। সময়মতো চিকিৎসা না হলে বিভিন্ন ধরনের জটিলতা তৈরি হতে পারে। আজ শুক্রবার (৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৫) এনটিভির স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ১৯৩৮তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন ইবনে সিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নাক-কান-গলা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মো. আবদুল্লাহিল কাফি।
প্রশ্ন : নাকের বাঁকা হাড়ের সমস্যা বা ডেভিয়েটেড নেজাল সেপটম (ডিএনএস) বিষয়টি বলতে কী বোঝায়?
উত্তর : আমাদের শরীরে নাকের অংশে বিভিন্ন রকম ভাগ রয়েছে। নাকের বিভাজনকে (পার্টিশন) নেজাল সেপটম বলে। আর এই সেপটম নাককে দুটি অংশে ভাগ করে। অধিকাংশ মানুষেরই এটি বাঁকা থাকে।
সাধারণত জন্মগতভাবে হাড় বাঁকা হতে পারে। এ ছাড়া বিভিন্ন ধরনের দুর্ঘটনার কারণে হাড় বেঁকে যেতে পারে। কিন্তু বাঁকা হলেই চিকিৎসা দেওয়া হয় না। এ থেকে কোনো সমস্যা হলেই চিকিৎসা দেওয়া হয়।
সমস্যার ক্ষেত্রে যেদিকে বাঁকা, সেই পাশে রোগীর শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। বাঁকা অংশের রাস্তা সরু থাকে এবং এর ফলে মাথাব্যথা হতে পারে। মাথাব্যথার সাথে সর্দির মতো তরল পদার্থ বরে হতে পারে। এর পাশাপাশি হাঁচি হয়। এ ছাড়া গলার মধ্যেও অস্বস্তিবোধ হয়ে থাকে। দীর্ঘস্থায়ীভাবে কানে সমস্যা হয় এবং সাইনাসের সমস্যা হতে পারে।
প্রশ্ন : জন্মগতভাবে নাকের মধ্যবর্তী হাড়টি বাঁকা হলে কী করণীয়?
উত্তর : সাধারণত শিশুর সাত থেকে ১০ বছর পরে ধীরে ধীরে এটি ধরা পড়ে। একেবারে ছোট বয়সে নাকের হাড় বাঁকা হলে কিছু করার থাকে না।
প্রশ্ন : কী কী ধরনের পরীক্ষা করা হয়?
উত্তর : সাধারণত রোগী নিজে রোগটি ধরতে পারে না। সমস্যা নিয়ে চিকিৎসকের কাছে গেলে চিকিৎসক পরীক্ষা করে এটা বুঝতে পারেন।
এ রোগ কয়েক ধরনের হয়। কারো হয়তো নাকের বিভাজনের (পার্টিশনের) সামনের অংশ বাঁকা থাকে। কারো ইংরেজি সি অক্ষরের মতো বাঁকা হয়। আবার কারো ইংরেজি এস অক্ষরের মতো দুই পাশে বাঁকা হয়ে থাকে। কারো নাকের মধ্যবর্তী ভাগটি মোটা হয়ে যেতে পারে। অথবা কারো নিচের দিকের কিছু অংশ বাঁকা থাকে অর্থাৎ অস্থি এবং তরুণাস্থির সংযোগস্থল বাঁকা হয়।
প্রশ্ন : এই রোগের চিকিৎসা কী?
উত্তর : এই রোগের একটাই চিকিৎসা রয়েছে। আর সেটি হলো অপারেশন। সাধারণত দুই ধরনের অপারেশন করা হয়। বয়স ভেদে অপারেশনের ভিন্নতা রয়েছে। রোগীর হাড় কী পরিমাণ বাঁকা তার ওপর নির্ভর করে অপারেশন হয়।
এ ক্ষেত্রে সেপটোপ্লাস্টি নামে এক ধরনের অপারেশন আছে। এটা আট বা দশ বছরের পর যেকোনো বয়সে করা যায়।
আর যদি রোগীর হাড় বেশি বাঁকা থাকে তাহলে, এসএমআর অপারেশন করা হয়। এতে তরুণাস্থি ও অস্থি সম্পূর্ণ ফেলে দেওয়া হয়। নাকের আকার যদি বেশি খারাপ হয়ে থাকে, তাহলে এন্ডোব্লাস্টিও করা হয়।
অনেকের ধারণা, অপারেশন করলেও রোগটি আবার হতে পারে। তবে ধারণাটি সঠিক নয়। ভালোভাবে অপারেশন করা হলে রোগী অবশ্যই ভালো হয়। অনেকে মনে করে, এই অপারেশনে হয়তো নাকের মাংস কেটে ফেলা হয়। এই ধারণটিও ভুল। এ ক্ষেত্রে নাকের মাংস সম্পূর্ণ কাটা হয় না।
অপারেশন ছাড়া অন্য কোনো ওষুধ খেলে এ রোগ ভালো হয় না।
প্রশ্ন : সঠিক চিকিৎসা না হলে রোগী কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়?
উত্তর : সাধারণ মানুষ বোঝে না। প্রথম অবস্থায় ভুক্তভোগীরা চিকিৎসকের কাছে আসেন না। কিন্তু পরে জটিলতা তৈরি হলে চিকিৎসকের কাছে আসেন। তখন এই রোগের চিকিৎসা করা কঠিন হয়ে যায়।