২০১৬ সাল, বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ কী?
বছরের প্রারম্ভে নৈসর্গিক রাশিচক্রে বৃহস্পতি অগ্নি রাশি সিংহে অবস্থান করছে। মৃত্তিকা রাশি কন্যায় অবস্থান করছে চন্দ্র ও রাহু। বায়ু রাশি তুলায় মঙ্গল। জলজ রাশি বৃশ্চিকে অবস্থান করছে শুক্র ও শনি। রবি এবং দূরবর্তী গ্রহ প্লুটো অগ্নি রাশি ধনুতে, বুধ মৃত্তিকা রাশি মকরে, রহস্যময় গ্রহ নেপচুন বায়ু রাশি কুম্ভে এবং কেতু ও ইউরেনাস জলজ রাশি মীনে অবস্থান করছে। বছরের শেষ দিকে বৃহস্পতি কন্যায় প্রবেশ করবে। রাশিচক্রে গ্রহগুলোর উপরি-উক্ত অবস্থানের ফলে সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশের জন্য ২০১৬ একটি শুভ বছর হিসেবে পরিগণিত হতে পারে। তবে শনি, মঙ্গল, ইউরেনাস, নেপচুন ও প্লুটোর প্রভাবে এ বছর বেশ কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটার আশঙ্কাও রয়েছে। নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে এবং দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো থাকবে বলে আশা করা যায়।
প্রবাসীদের পাঠানো অর্থ এবং রপ্তানি বাণিজ্য বৃদ্ধির ফলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধি পাবে। নানামুখী অপপ্রচার এবং ষড়যন্ত্র সত্ত্বেও বিবিধ উন্নয়ন প্রকল্পে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বিশেষত, বন্ধুপ্রতিম দেশগুলো এবং জাতিসংঘ, বিশ্বব্যাংক ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর আর্থিক সহায়তা বৃদ্ধি পাবে। জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবিলায় বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক মহলের আর্থিক ও কারিগরি সহায়তা লাভ করবে বলে আশা করা যায়।
দেশের সামগ্রিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি মোটামুটি অনুকূল থাকবে এবং রাজনৈতিক কারণে সৃষ্ট আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকবে। যুদ্ধাপরাধীদের চলমান বিচার প্রক্রিয়া নস্যাৎ করার জন্য মৌলবাদীদের অপতৎপরতা বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা আছে। তবে এ ক্ষেত্রে তাদের সাফল্যের তেমন কোনো সম্ভাবনা নেই। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে। বেশ কয়েকটি মামলার রায় ঘোষিত ও কার্যকর হওয়ার সম্ভাবনা আছে।
পররাষ্ট্রনীতি ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র
আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে নানা অপপ্রচার এবং ষড়যন্ত্র সত্ত্বেও বিদেশনীতির ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সাফল্যের সম্ভাবনা আছে। প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্ক বিদ্যমান থাকবে। বিশেষত ভারত, নেপাল, ভুটান, মিয়ানমার প্রভৃতি দেশগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্ক বিদ্যমান থাকবে। মধ্যপ্রাচ্যসহ মুসলিমপ্রধান দেশগুলোর সঙ্গেও সম্পর্ক ভালো থাকবে। সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের ভ্রাতৃপ্রতিম দেশগুলোতে জনশক্তি রপ্তানি বৃদ্ধি পাবে। রাশিয়া, চীন, যুক্তরাজ্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে প্রভাবশালী দেশগুলোর সঙ্গে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বৃদ্ধি পাবে। সরকারবিরোধীদের নানামুখী ষড়যন্ত্র সত্ত্বেও বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির সাফল্য দেশে-বিদেশে প্রশংসিত হবে। বিবিধ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর কার্যক্রমেও বাংলাদেশ এ বছর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে।
অভ্যন্তরীণ রাজনীতি
অভ্যন্তরীণ রাজনীতির ক্ষেত্রে দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি ভালো থাকবে। সরকারবিরোধীদের নানামুখী অপতৎপরতা সত্ত্বেও দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড অব্যাহত থাকবে। বর্তমান সরকারের আমলে শুরু করা অনেকগুলো প্রকল্প এ বছর শেষ হওয়ার সম্ভাবনা আছে। বেশ কিছু নতুন প্রকল্প গ্রহণ করা হবে। যার ফলে দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থায় ব্যাপক উন্নতি হবে বলে আশা করা যায়। সরকারবিরোধী আন্দোলন গড়ে তোলার চেষ্টা বিরোধী দল সমূহ জোরদার করবে। তবে সে ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য কোনো সাফল্যের সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। মৌলবাদীদের ধ্বংসাত্মক তৎপরতা বৃদ্ধি পাবে। ফলে বেশ কিছু প্রাণহানির আশঙ্কা আছে। সরকারকে এ ব্যাপারে বছরের শুরু থেকেই সতর্ক থাকতে হবে। মন্ত্রিপরিষদে কোনো ধরণের রদবদলের সম্ভাবনা একেবারেই উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
অর্থনীতি
জনশক্তি রপ্তানি এবং পণ্য রপ্তানি বৃদ্ধি পাবে। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স বৃদ্ধি এবং পণ রপ্তানি বৃদ্ধির ফলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ গত বছরের তুলনায় উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা আছে। কৃষিজ উৎপাদন বৃদ্ধি সত্ত্বেও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি অব্যাহত থাকবে। দুর্নীতি দূর করে সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য ভালো কিছু করার সরকারের সদিচ্ছা থাকলেও তা বাধাগ্রস্ত হবে। প্রয়োজনীয় দ্রব্যের ওপর নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখা কঠিন হতে পাবে। মানুষের গড় আয় বৃদ্ধি পেতে পারে। প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং রাজনীতিবিদদের দুর্নীতি দুষ্কর্মের চাঞ্চল্যকর তথ্য ফাঁস হয়ে যেতে পারে।
প্রাকৃতিক দিক
জলোচ্ছ্বাস, অতিবৃষ্টি ও অনাবৃষ্টিজনিত কারণে জনজীবনে সাময়িক সমস্যা দেখা দিতে পারে। বন্যা, ঝড়, ছোট ও মাঝারি ধরনের ভূমিকম্পের আশঙ্কা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে জনজীবন বিপর্যস্ত হতে পারে। রহস্যময় গ্রহ নেপচুন বাস্তুরাশি কুম্ভ এবং ইউরেনাস জলজ রাশি মীনে অবস্থান করবে সারা বছর। ফলে প্রকৃতি সারা বছরই নানা প্রকার অপ্রত্যাশিত ও রহস্যজনক আচরণ করবে।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি
সামগ্রিকভাবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো না যাওয়ার আশঙ্কাই বেশি। দেশে সস্ত্রাসবাদী জঙ্গি তৎপরতা বৃদ্ধি পাবে। হত্যা, গুম, খুন, অপহরণ, দাঙ্গা-হাঙ্গামা, অগ্নিকাণ্ড প্রভৃতি অনভিপ্রেত ঘটনা বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা আছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের ভেতরে দুর্নীতি ও দুষ্কর্মের প্রবণতা বৃদ্ধি পাবে। রাজনীতিবিদদের কারো কারো চাঞ্চল্যকর দুর্নীতি-দুষ্কর্মের তথ্য ফাঁস হয়ে যেতে পারে। এ বছর এক বা একাধিক রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড ঘটনার আশঙ্কা আছে। বছরের শুরু থেকে সরকার এ ব্যাপারে সতর্ক হলে অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা বন্ধ করা সম্ভব হতে পারে।