সফল মানুষরা যে কারণে সফল
অনেকের ধারণা সফল ব্যক্তিরা শুধু কাজের পেছনেই ছুটে থাকেন। তাঁদের নেই কোনো বিনোদন, তাঁরা পরিবারকে কোনো সময় দেন না, এমনকি নিজেকেও তাঁরা সময় দেন না। আসলে ব্যাপারটি কিন্তু এমন না। তাঁরা আজ সফল এর পেছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছে। শুধু টাকার পিছনে ছুটলেই জীবনে সফল হওয়া যায় না। অনেক কর্মব্যস্ততার মাঝেও চাই নিজের জন্য আলাদা একটি রুটিন। যা আপনার মনকে প্রফুল্ল রাখবে, সম্পর্ক মধুর রাখবে এবং শরীরকে সুস্থ রাখবে।
রিডার্স ডায়জেস্টে এমন কিছু কাজ তুলে ধরা হয়েছে যা সফল ব্যক্তিরা হরহামেশাই মেনে চলেন। চলুন, এক নজরে জেনে নিই সফল হতে হলে কাজের বাইরেও কী কী মেনে চলবেন-
ব্যস্ত, সফল ব্যক্তিরা ভিন্নভাবে বিভিন্ন কাজ করে থাকেন
সফল ব্যক্তিরা নিজের কাজের তালিকা আগেই নির্ধারণ করে নেন এবং পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করেন। তাঁরা চেষ্টা করেন ভিন্ন ধরনের কাজ করতে। যাতে কিছুদিন পর কাজের প্রতি অনীহা না আসে। অফিস ছুটির পর ঘুমানোর আগ পর্যন্ত যে সময় পাওয়া যায় সেটুকু সময় তিনি কোনো একটা কাজের মধ্যে পার করার চেষ্টা করেন। সেটা পরিবার সংক্রান্ত হতে পারে আবার নিজের ব্যক্তিগত কাজও হতে পারে। এভাবেই তিনি কাজের মধ্যে ভিন্নতা আনার চেষ্টা করেন।
পরিবারকে সময় দেওয়া
যতই কর্মব্যস্ততা থাকুক না কেন, একজন সফল ব্যক্তি সব সময় তাঁর পরিবারকে সময় দেওয়ার চেষ্টা করেন। আপনি যদি সারা দিনের কর্মব্যস্ততার পর পরিবারের সঙ্গে কিছুটা ভালো সময় কাটান তাহলে আপনার সারা দিনের ক্লান্তি দূর হয়ে যাবে এবং পরের দিন আপনি নতুন করে কাজ করার উৎসাহ খুঁজে পাবেন। তাই যদি সফলভাবে কাজ করতে চান তাহলে পরিবারের সঙ্গে ভালো কিছু সময় কাটান।
সময়ের ধরাবাধা নিয়মের বাইরেও নিজের জীবন
প্রতিদিন নিয়ম করে সব করা সম্ভব না। আপনি যদি বলেন, আমি প্রতিদিন ব্যায়াম করতে পারি না কারণ আমার পরিবারকে সময় দিতে হয়। এই ধরনের অজুহাত সাধারণত সফল ব্যক্তিরা করেন না। তারা প্রতিদিন না পারলেও সপ্তাহে অন্তত একদিন ব্যায়াম করে থাকেন। আবার সপ্তাহে একদিন পরিবারকে নিয়ে বাইরে কোথাও খেতেও যেতে পারেন অথবা পুরনো কোনো বন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে পারেন। জীবনে একটু আধটু ব্যতিক্রম কাজ আপনার দৈনন্দিন সময়সূচিতে খুব একটা পরিবর্তন আসবে না। একবার করেই দেখুন না, ভালো লাগবে।
সফল ব্যক্তিরা শুধু টিভি দেখে সময় নষ্ট করে না
সফল ব্যক্তিরা সারা দিন পর বাসায় ফিরে শুধু টিভি দেখে সময় নষ্ট করেন না। হয়তো কোনো একটা অনুষ্ঠান সবাই মিলে দেখছে তখন সেও দেখে। আবার শিশুদের সঙ্গ দিতে কিছুটা সময় তাদের নিয়ে টিভি দেখে থাকেন। কিন্তু অযথা নিজের জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা টিভি দেখাকে তাঁরা সময় নষ্ট বলেই দাবি করেন। হ্যাঁ, জীবনে বিনোদনের প্রয়োজন আছে। তবে সফল ব্যক্তিদের কাছে বিনোদন মানে শুধু টিভি দেখা না। আরো অনেক কাজ আছে যেখানে বিনোদন পাওয়া সম্ভব।
নিয়মিত ব্যায়াম করা
শরীর সুস্থ থাকলে কাজেও উৎসাহ পাওয়া যায়। তাই সফল ব্যক্তিরা চেষ্টা করেন কাজের পর কিছুটা সময় ব্যায়াম করতে। সব সময় জিমে গিয়ে ব্যায়াম না করলেও খাওয়ার পর কিছুটা সময় হেটে আসা, অফিসে লিফট ব্যবহার না করে সিঁড়ি বেয়ে উঠা, কাজের ফাঁকে একটু ফ্রি হ্যান্ড এক্সসারসাইজ করা। এই অভ্যাসগুলো আপনার শরীরকে সুস্থ রাখবে এবং আপনার কাজের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি হবে। যা সফল হওয়ার জন্য খুবই জরুরি।
সফল ব্যক্তিরা বিনোদনের জন্য পরিকল্পনা করে থাকেন
আপনি কি জানেন, নিজের পরিবার, আত্মীয়স্বজন এবং বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দেওয়ার পরিকল্পনাও বাদ যায় না সফল ব্যক্তিদের তালিকা থেকে। একসঙ্গে খাওয়া, ঘুরতে যাওয়া, ছুটির দিনে পিকনিকে যাওয়া অথবা কোনো খেলায় অংশগ্রহণ করা, সবকিছুই তাঁদের পরিকল্পনায় থাকে এবং তাঁরা সময় অনুযায়ী সব কিছু করেও থাকেন।
সঙ্গীকে সঙ্গ দেওয়া
কাজের ভিতর খানিকটা সময় সঙ্গীকে সময় দেওয়ার ব্যাপারেও সফল ব্যক্তিরা সচেতন থাকেন। বাইরে কোথাও ঘুরতে যাওয়া, বিশেষ দিনগুলোতে একে ওপরের সঙ্গে সময় কাটানো, ফোন করে খোঁজখবর নেওয়া-সবকিছুই তাঁরা দায়িত্বের সঙ্গে করে থাকেন।
বন্ধুদের সময় দেওয়া
কাজের ব্যস্ততা যতই থাকুন না কেন পুরনো বন্ধুদের সময় দিতে ভুলেন না সফল ব্যক্তিরা। মাসে অন্তত একবার তাঁদের সঙ্গে আড্ডা দেওয়ার পরিকল্পনা তাঁরা আগে থেকেই করে থাকেন। নিজের ব্যস্ততম জীবনে কিছুটা সময় বন্ধুদের সঙ্গে কাটালে মন প্রফুল্ল থাকে। তাই প্রায়ই চেষ্টা করুন বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দেওয়ার।
অনলাইন শপিং
ব্যস্ততার কারণে শপিংয়ে যাওয়া হয় না। কিন্তু বিভিন্ন উৎসবে বা প্রয়োজনীয় সব শপিংগুলো করাটা তাঁদের জন্য বেশ ঝামেলার। এক্ষেত্রে তারা বেছে নেন অনলাইন শপিং। যা সময় বাঁচায় আবার দেখেশুনেও কেনার সুযোগ মেলে তাদের।
ঘুমানোর আগের রুটিন
সফল ব্যক্তিরা পরের দিনের জন্য কিছু কাজ ঘুমানোর আগেই গুছিয়ে রাখেন। এতে পরের দিন অফিসে যাওয়ার সময় ঝামেলা এড়াতে পারেন তাঁরা। একটু রুটিন মেনে কাজ করলে অনেক কাজই সহজ হয়ে যায়। এই অভ্যাস মেনে চলার কারণেই অনেকেই সফল হন।
ঘুমকে প্রাধান্য দেওয়া
কাজে প্রফুল্ল থাকতে হলে পর্যাপ্ত পরিমাণের ঘুম খুবই প্রয়োজন। তাই সফল ব্যক্তিরা ঘুমের ক্ষেত্রে অবহেলা করেন না। তাঁরা শত ব্যস্ততার মাঝেও ঠিক সময়ে ঘুমান এবং নিয়মিত সাত থেকে আট ঘণ্টা ঘুমান। যাতে পরের দিন কাজ করতে শারীরিকভাবে তিনি শক্তি পান।