খাবার পানির তীব্র সংকটে দিনাজপুরের ৫০ ইউনিয়ন
এ যেন প্রতি বছরের নিয়মিত দৃশ্য। গ্রীষ্ম এলেই খাবার পানির কষ্টে ভোগে দিনাজপুর। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যায় নিচে। তীব্র দাবদাহের এ সময়ে চরম দুর্ভোগে পড়েন জেলাবাসী। দিন দিন এ দুর্ভোগের মাত্রা যেন আরও বাড়ছে। এদিকে, সেচের পানির সংকটে উৎপাদন নিয়ে দেখা দিয়েছে শঙ্কা।
এবার গ্রীষ্মের আগেই শুরু হয়েছে খাবার পানির দুর্ভোগ। জেলার প্রায় ৫০টি ইউনিয়নে চলছে খরা। খাবার পানির হাহাকারের সঙ্গে যোগ হয়েছে কৃষিজমিতে সেচের জন্য পানির সংকট।
কৃষক বলছেন, পানির স্তর নেমে যাওয়ায় ফসলি জমিতে সেচের পানি পাচ্ছেন না তাঁরা। এতে বাড়ছে উৎপাদন খরচ।
অন্যদিকে, সেচের অভাবে উৎপাদন কমে যাওয়ার বিষয়ে দেখা দিয়েছে শঙ্কা।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরসূত্রে জানা যায়, খরা মৌসুমে ভূগর্ভস্থ পানির স্থিতিতল ২৫ ফুটের নিচে নেমে গেলে টিউবওয়েলে আর পানি ওঠে না। প্রতি বছর স্থানভেদে পানির এ স্থিতিতল গড়ে প্রায় এক মিটার (প্রায় তিন ফুট) করে নেমে যাচ্ছে। দিনাজপুরের ১০২টি ইউনিয়নের মধ্যে প্রায় ৫০টি ইউনিয়নে খরা মৌসুমে এ সমস্যা দেখা দেয়। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি।
দিনাজপুর চিরিবন্দর উপজেলার ৭নং আউলিয়াপুকুর ইউনিয়নের মাঝিনা গ্রামে দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে বাগানপাড়া নামে একটি আদিবাসী পল্লি রয়েছে। ছত্রিশটি বাড়ি নিয়ে প্রায় দেড়শ লোকের বসবাস এ পল্লিতে। প্রতি বছর ফেব্রুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত এখানকার মানুষ পানির তীব্র সংকটে ভোগেন তাঁরা। এ সময় পল্লিবাসী প্রতিদিন দুবার করে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূর পাড়ি দিয়ে আনতে হয় খাবার পানি।
গৃহিণী মিনতি মূর্মু (৫৫) এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘চৈত্র মাসে যখন চারদিকে ইরি-বোরো ধানের আবাদ হয়। তখন আমাদের জলের কষ্ট বেড়ে যায়। চারদিকে গভীর নলকূপ চলে। আর, আমরা পানি পাই না।’
বীরগঞ্জ উপজেলার সাধন চন্দ্র রায় এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘প্রতিবছর এ মৌসুম এলেই গোসল, খাবার ও গৃহস্থালীর কাজের জল নিয়ে সংকট তৈরি হয়। অনেকে জলের অভাবে সপ্তাহে একদিন গোসল করেন।’
লক্ষ্মীপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র আলম হোসেন জানায়, গত এক মাসে তারা তিন-চার দিন গোসল করেছে। অনেক সময় দুই কিলোমিটার দূরে গিয়ে পানি সংগ্রহ করে নিয়ে আসে।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী এ. এন. নাইমুল এহসান পানির স্থিতিতল নেমে যাওয়ার কারণে বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন, পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাতের অভাব, ভূগর্ভস্থ পানির ওপর অধিক নির্ভরতা এবং ভূগর্ভস্থ পানির স্বল্পতাসহ বিভিন্ন কারণকে দায়ী করেছেন।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের এ কর্মকর্তা জানান, পানির এ সমস্যা সমাধানের জন্য টিউবওয়েল বসানো, নদী খননসহ সরকার বিভিন্ন রকম পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।