কেবল পুরুষই কি নারীদের হয়রানি করে?
অ্যাঞ্জেলা এপস্টাইন ব্রিটেনের ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক। দেশটির বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে লেখালেখি করেন। তিনি মনে করেন, নারীবাদীরা ভুলে গেছেন যে পুরুষও যৌন হয়রানির শিকার হতে পারেন। এ বিষয়ে তাঁর একটি কলাম ডেইলি মেইলে প্রকাশিত হয়েছে। লেখাটি খানিক সংক্ষিপ্ত করে এনটিভি অনলাইনের পাঠকদের জন্য অনুবাদ করা হলো।
বেশ দেরি করে একটি পার্টিতে গিয়ে আমি টেবিলগুলোয় চোখ বুলিয়ে নিলাম। এবং সাবেক এক নারী সহকর্মীকে দেখলাম, যিনি আমার দিকেই ইশারা করছেন।
নারী সহকর্মী উঁচু টেবিলে বসে আছেন। পাশেই বসে থাকা এক তরুণের ঘাড়ে হাত জড়িয়ে রয়েছেন। তাঁর উঁচু সমাজে চলাফেরা, স্বাস্থ্য বেশ ভালো অবস্থায়। আমি জানি এই নারীর বয়স শিগগিরই ৫০-এ পৌঁছাবে। আমি এটাও জানি তিনি ২০ বছরের বেশি সময় ধরে সুখেই বিবাহিত জীবন পার করছেন এবং তাঁর ওই তরুণের কাছাকাছি বয়সী ছেলেমেয়ে রয়েছে। ওই তরুণের সঙ্গে তিনি এমনভাবে কথাবার্তা বলছেন যেন সে প্লেটে থাকা বিরল স্টেক (মাংসের ফালি)।
‘অ্যাঞ্জেলা, এসো। রায়ানের সঙ্গে পরিচিত হও,’ বলেন তিনি। ‘সে সম্প্রতি আমার প্রতিষ্ঠানে যোগদান করেছে। সে খুব সুস্বাদু, তাই না?’
রায়ানকে অত্যন্ত ভীতসন্ত্রস্ত দেখাল। একজন বয়সী নারী, তার ওপর পেশাগতভাবে সিনিয়র, কম তো না। কীভাবে পরিস্থিতি মোকাবিলা করবে, তা ওই তরুণ বুঝতে পারছে না। যে মুহূর্তে আমার সহকর্মী হাতটা আলগা করে দিল, তরুণটি দ্রুতই প্রস্থান করল যেমন সরু কোনো গর্ত থেকে ইঁদুর বেরিয়ে যায়। তবে যাওয়ার আগে পশ্চাদদেশে ওই নারীর চাপড়ের আঘাত থেকে রক্ষা পেল না সে।
দৌড়ে পালানোর সময় তার চোখের দিকে আমি তাকাই এবং এমন কিছু খেয়াল করলাম, যা ৭০-এর দশকে আমি কখনোই দেখতাম না।
অতীতে অফিসের পার্টিতে কোনো জুনিয়র নারী সহকর্মী তাঁর শিকারি বসের হাত থেকে বাঁচতে টয়লেটে গিয়ে পর্যন্ত আশ্রয় নিতেন। এখন পরিস্থিতি উল্টে গেছে।
আমি এটা বলতে পছন্দ করি যে, এ ধরনের বিব্রতকর দৃশ্য অস্বাভাবিক-মধ্য বয়সী কোনো নারী মদ খেয়ে এলোমেলো হওয়ার পর সকালে উঠে লজ্জাবোধ করবেন-এ ক্ষেত্রে সে রকম কিছু হয়নি। আমার সাবেক সহকর্মী এর মধ্যে খারাপ কিছুই দেখলেন না। বরং আমি তাঁকে এ নিয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘এটা স্রেফ একটু কৌতুক, ডার্লিং।’
তাঁর মতো অনেকেই আছে। নির্লজ্জ ও বেহায়া, নারী উত্ত্যক্তকারীরা স্বাধীনভাবেই তাঁদের কর্ম চালিয়ে যান, যেখানে পুরুষরা ভয়ে থাকেন নারী সহকর্মীকে সম্ভাষণ করায়, হয়তো কোনো আদালত তাঁকে তলব করবেন।
কর্মক্ষেত্রে পুরুষের ওপর যৌন হয়রানির অভিযোগ ইদানীং বাড়ছে : কর্মক্ষেত্রে সম্প্রতি পরিচালিত একটি জরিপে দেখা গেছে, এক-তৃতীয়াংশ পুরুষের সঙ্গে অনুচিত আচরণ করা হয়েছে।
আমার এক বন্ধু আছেন, যিনি বড় মাপের একটি প্রতিষ্ঠানে আর্থিক (ফিন্যানশিয়াল স্ট্র্যাটেজিস্ট) দায়িত্ব পালন করেন। তিনি আমাকে বলেন, ক্রিসমাস পার্টি তিনি এড়িয়ে চলেন। এর কারণ কিছু নারী সহকর্মীর আচরণের ধরন। এরই মধ্যে জিমে তৈরি শরীরটার জন্য তাঁর অফিসের নারী সহকর্মীরা তাঁকে নিয়মিতই নানা কথা বলেছেন। এ কারণে বাড়িতে থাকতেই তিনি পছন্দ করেন।
তাহলে নারীদের জন্য এক নিয়ম আর পুরুষের জন্য আরেক নিয়ম থাকবে কেন? গত বছর ডিজিটাল মার্কেটিং কো-অর্ডিনেটর পপি স্মার্ট নামের ২৩ বছর বয়স এক নারী পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন যে, উরসেস্টারে কিছু পুরুষ তাঁকে দেখে শিস দিয়েছে।
সম্ভবত নারী উত্ত্যক্তকারীরা যৌন বিচারে আত্মবিশ্বাসী, আর্থিকভাব স্বাধীন ও সুযোগের সমতা থেকে মুক্ত-তাঁরা যা করছেন তা করার অধিকার রাখেন বলে মনে করেন।
নারী উত্ত্যক্তকারীরা সম্ভবত মনে করেন যে, পুরুষরা এটা মেনে নেবে। যদিও অনেকেই তা নেয় না। জঙ্গি নারীবাদ সম্ভবত পুরুষদের বিভিন্ন পর্যায়ে পুরুষত্বহীন করে দিয়েছে।
পুরুষরা যে যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছেন, তা থেকে অনেকেই মুখ ঘুরিয়ে থাকছেন। এভরিডে সেক্সিজম নামের একটি সংগঠন যেমন জোরেসোরে আওয়াজ দিয়ে নারীদের ওপর হয়রানির কথা বলে, পুরুষ এর শিকার হলে তারা কিন্তু চুপচাপ থাকে।
আইনবিষয়ক প্রতিষ্ঠান গরভিনস সলিসিটরসের আইনজীবী ড্যানিয়েল আয়ারস বলেন, সমতা আইন অনুযায়ী যৌন হয়রানি নারী ও পুরুষ উভয়ের ওপর হতে পারে। তিনি বলেন, নারীরা হয়রানি বিষয়টি পুরুষের চেয়ে বেশি তুলে ধরেন। তিনি আরো বলেন, ‘সম্ভবত নারীদের ওপরই হয়রানি হয় বেশি। তবে পুরুষরা মূল উত্ত্যক্তকারী হওয়ার কারণেই যে অভিযোগের সংখ্যা বেশি, তা নিয়ে আমার সন্দেহ আছে।’
‘এর মানে এই নয় যে আমি বলছি নারীরা বেশি সংবেদনশীল অথবা সহজেই তাঁদের উত্ত্যক্ত করা যায়। একটি সত্যিকার নালিশ করতে নারীরা অত্যন্ত সাহসী। বরং পুরুষ এ নিয়ে তেমন কিছু বলতে নারাজ। হয়তো তাঁরা ভাবেন অভিযোগ করলে সম্মান নষ্ট হবে অথবা তাঁদের অভিযোগ গুরুতরভাবে নেওয়া হবে না।’
হতে পারে এরপর নারী উত্ত্যক্তকারীরা নিজেদের ধাঁচের দুষ্টু চক্র বিকশিত করতে পারেন। তাঁরা এটা করবেন কারণ তাঁরা এটা পারবেন। এবং তাঁরা করবেন বলেই পারবেন।
আমার মনে পড়ছে, উঁচু দরের এক ব্যবসায়ীর সাক্ষাৎকার নেওয়ার সময় তিনি স্বীকার করেছিলেন, একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করার সময় এক নারী সহকর্মী তাঁকে নিয়মিত নোংরা কথাবার্তা বলতেন এবং তাঁর পশ্চাদদেশে চাপড় দিতেন। এটা তিনি ওই নারীকে বন্ধ করতে বলেছিলেন, কিন্তু তিনি করেননি। ওই নারী কোম্পানি ছাড়ার পরই কেবল তিনি রক্ষা পান।
নারী উত্ত্যক্তকারীদের গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হয় না, পুরুষদের করা হয়। সুতরাং নারীরা এটা বাড়িয়ে দিয়েছেন এবং তাঁরা অনাকাঙ্ক্ষিত কথাবার্তা, আচরণ চালিয়ে যাচ্ছেন। এটা তাঁরা করছেন কারণ তাঁরা নারী।
আমার নিজের কথা বলতে পারি, ‘বেচারা রায়ানের অবস্থা দেখে শিক্ষা হয়েছে, ভবিষ্যতে আমি আমার হাত ও রসিকতা নিজের কাছেই রাখব।
আমার ‘বোনেরা’ও যদি তা করতে পারত।