আহমদ ছফার চলে যাওয়ার ২১ বছর
প্রখ্যাত ঔপন্যাসিক, কবি, চিন্তাবিদ, সমালোচক ও অনুবাদক আহমদ ছফার মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ২০০১ সালের ২৮ জুলাই অসুস্থ অবস্থায় ঢাকা কমিউনিটি হাসপাতালে নেওয়ার পথে তাঁর মৃত্যু হয়। পরদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদে জানাজা শেষে মিরপুরের বুদ্ধিজীবী কবরস্থানের পাশে তাঁকে দাফন করা হয়। আজ এ চিন্তকের ২১তম মৃত্যুবার্ষিকী।
আহমদ ছফা ১৯৪৩ সালের ৩০ জুন চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার হাশিমপুর ইউনিয়নের গাছবাড়িয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা হেদায়েত আলী এবং মাতা আসিয়া খাতুন। দুই ভাই ও চার বোনের মধ্যে আহমদ ছফা ছিলেন বাবা-মায়ের দ্বিতীয় সন্তান।
চট্টগ্রামে স্কুল ও কলেজের লেখাপড়া শেষে ছফা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে এমএ ডিগ্রি অর্জন করেন। আহমদ ছফা একাধারে গল্প, উপন্যাস, কবিতা, প্রবন্ধ, সমালোচনা, অনুবাদ ও শিশুসাহিত্যে অবদান রেখেছেন। তিনি বিভিন্ন সময়ে সাহিত্য-সাময়িকপত্র সম্পাদনা করেন।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার অব্যবহিত পরে বুদ্ধিবৃত্তির নতুন বিন্যাস (১৯৭২) প্রবন্ধগ্রন্থে আহমদ ছফা বাংলাদেশের বুদ্ধিবৃত্তিক জগতের মানচিত্র অঙ্কন করেন এবং বাংলাদেশি বুদ্ধিজীবীদের সুবিধাবাদিতার রূপ উন্মোচন করেন এবং বুদ্ধিজীবীদের সত্যিকার দায়িত্বের স্বরূপ ও দিকনির্দেশনা বর্ণনাপূর্বক তাঁদের সতর্ক করে দিতে বুদ্ধিজীবীদের ব্যর্থতায় বাংলাদেশের কী দুর্দশা হতে পারে তা সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করেন।
আহমদ ছফা তাঁর বিখ্যাত বাঙালি মুসলমানের মন (১৯৭৬) প্রবন্ধে বাঙালি মুসলমানের আত্মপরিচয়ের হাজার বছরের বিবর্তন বিশ্লেষণপূর্বক তাঁদের পশ্চাৎগামিতার কারণ অনুসন্ধান করেছেন।
আহমদ ছফার উপন্যাসগুলো হলো : সূর্য তুমি সাথী (১৯৬৭), উদ্ধার (১৯৭৫), একজন আলী কেনানের উত্থান-পতন (১৯৮৯), অলাতচক্র (১৯৯০), ওঙ্কার (১৯৯৩), গাভীবৃত্তান্ত (১৯৯৪), অর্ধেক নারী অর্ধেক ঈশ্বরী (১৯৯৬), পুষ্পবৃক্ষ ও বিহঙ্গপুরাণ (১৯৯৬)। ছফার গল্পগ্রন্থ : নিহত নক্ষত্র (১৯৬৯)। ছফার কাব্যগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে : জল্লাদ সময়, একটি প্রবীণ বটের কাছে প্রার্থনা, লেনিন ঘুমোবে এবার।
জার্মান কবি গ্যেটের বিখ্যাত কাব্য ‘ফাউস্ট’-এর অনুবাদ এবং বার্ট্রান্ড রাসেলের ‘সংশয়ী’ রচনার বাংলা রূপান্তর আহমদ ছফাকে অনুবাদক হিসেবেও খ্যাতি এনে দেয়। ছফার চিন্তার প্রকাশ হয়েছে তাঁর দুটি উল্লেখযোগ্য রচনা ‘বুদ্ধিবৃত্তির নতুন বিন্যাস’ (১৯৭৩) ও ‘বাঙালি মুসলমানের মন’ (১৯৭৬)-এ। এ ছাড়া সমাজের ইতিহাস, বিবর্তন ও মননশীলতা নিয়ে ছফা লিখেছেন ‘সিপাহি যুদ্ধের ইতিহাস’ ও ‘যদ্যপি আমার গুরু’-এর মতো গ্রন্থ।
আহমদ ছফা ছিলেন দক্ষ এবং উদ্যমী সংগঠক। স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে আহমদ শরীফের নেতৃত্বে বাংলাদেশ লেখক শিবির গড়ায় মুখ্য ভূমিকা পালন করেন তিনি। জীবিতকালে আহমদ ছফা তাঁর প্রথাবিরোধিতা, স্পষ্টবাদিতা, স্বকীয় দৃষ্টিভঙ্গির জন্য লেখক ও বুদ্ধিজীবী মহলে বিশেষ আলোচিত ও বিতর্কিত ছিলেন।
আহমদ ছফা লেখক শিবির পুরস্কার ও বাংলা একাডেমি কর্তৃক সাদত আলী আখন্দ পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করেছেন। তাঁকে ২০০২ সালে সাহিত্যে (মরণোত্তর) একুশে পদক প্রদান করা হয়।