‘কবিতা শান্তির জন্যই কাজ করে’
শান্তির জন্য কথাগুলো যদি কবিতাময় হয় তাহলে সেটাই শান্তি। কারো কবিতা সর্বোচ্চ আর কারো কবিতা নিকৃষ্ট। আসল কথা হলো, সবার কবিতা শান্তির জন্যই কাজ করে। কবিরা শান্তির জন্যই লেখে। মৈত্রীর জন্যই লেখে। আজ মঙ্গলবার জাতীয় কবিতা উৎসবের শেষ দিনে ‘কবিতা মৈত্রীর কবিতা শান্তির’ শীর্ষক সেমিনারে দেশি ও বিদেশি কবিরা এসব কথা বলেছেন।
কবি মুহম্মদ নুরুল হুদার সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশ নেন কবি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য নূহ-উল-আলম লেনিন, রফিকউল্লাহ খান, ফয়জুল লতিফ চৌধুরী, দিলীপ দাস, গোলাম কুদ্দুস, মুনীর সিরাজ, আমীরুল ইসলাম, ব্রিটিশ কবি ও অনুবাদক জো উইন্টার। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ড. বিশ্বজিৎ চৌধুরী।
কবি নূহ-উল-আলম লেনিন বলেন, শান্তি স্থাপনের জন্য মৈত্রীর বন্ধন দরকার। শান্তির অন্বেষা মানুষের প্রাচীনতম অন্বেষা। এ শান্তির অন্বেষা করতে গিয়েই ধর্মের উৎপত্তি হয়েছে। কিন্তু রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহারের ফলে ধর্মের মধ্যে যে শান্তি ছিল তা বিঘ্নিত হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক রফিকউল্লাহ খান বলেন, ‘আজকের পৃথিবীতে যে নৈরাজ্য ও বর্বরতা হচ্ছে তার কারণ হলো মানুষের শিল্প থেকে বিচ্ছিন্নতা, কবিতা থেকে বিচ্ছিন্নতা। কবিরা শান্তির জন্যই লেখেন। মৈত্রীর জন্যই লেখেন। আমার মনে হয় না যে, শান্তি ও মৈত্রী থেকে আমরা দূরে সরে গেছি। এটি পৃথিবীতে একদিন প্রতিষ্ঠিত হবেই।’
জাতীয় জাদুঘরের পরিচালক ফয়জুল লতিফ চৌধুরী বলেন, কবিতা অবশ্যই মৈত্রী আনতে পারে। কিন্তু একজন কবির কাজ নয় মৈত্রীর কথা বলা, তার কাজ নয় শুধু সমাজ সংস্কারক হওয়া। তিনি যখন কাগজ-কলম নিয়ে বসবেন তখন তিনি শুধু কবি। কবি সমাজ সংস্কারক, রাজনীতিবিদ ইত্যাদি পরিচয় থাকতে পারে। কিন্তু তিনি যখন কবিতা লিখতে বসবেন তখন কেবলই কবি তিনি।
ভারতের কবি দিলীপ দাস বলেন, যারা শান্তি ও মৈত্রীর বিরুদ্ধে তাদের চিহ্নিত করার সময় এসেছে। চিহ্নিত না করতে পারলে আজকের কবিতা উৎসবের স্লোগান স্লোগানই থাকবে। কবিতার ভাষা যদি কবিতাময় না হয় তাহলে সেই কবিতা দেশ ও মানুষের জন্য কোনো কাজে আসবে না।
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুস বলেন, একজন কবির কর্মক্ষেত্র বিশ্বজুড়ে। কবিতা সবসময় মানুষের পক্ষে কথা বলেছে। সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে কথা বলেছে। স্বাধীনতা সংগ্রাম থেকে সাম্রাজ্যবাদবিরোধী সংগ্রামে কথা বলেছে।
কবি মুনীর সিরাজ বলেন, সবাই কবি হয় না। সবার কবিতা কবিতা হয়ে ওঠে না। কবিতা শান্তি ও মৈত্রীর বাণী সম্প্রসারিত করেছে। কবি-অকবি পার্থক্য না করে মানুষের যে প্রাণ তার স্বীকৃতি দিতে হবে।
কবি নুরুল হুদা বলেন, ‘লড়াই, লড়াই, লড়াই চাই। লড়াই শেষে তোমাকে চাই। আর সে তোমাকে চাই মানে শান্তি চাই। শান্তি নেই। কিন্তু শান্তির জন্য আমরা কথা বলছি। শান্তির জন্য কথাগুলো যদি কবিতাময় হয় তাহলে সেটাই শান্তি। কারো কবিতা সর্বোৎকৃষ্ট, আর কারো নিকৃষ্ট। আসল কথা হলো সবার কবিতা শান্তির জন্যই কাজ করে।’