১০ লাখ টাকাসহ কর কর্মকর্তা আটক
রাজশাহীতে ‘ঘুষের’ ১০ লাখ টাকাসহ উপ-কর কমিশনার মহিবুল ইসলাম ভুঁইয়াকে আটকের দাবি করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। আজ মঙ্গলবার (৪ মার্চ) দুপুরে আয়কর ভবনে অভিযান চালানোর সময় কর কার্যালয়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা দরজা ভেঙে ওই কর্মকর্তার কার্যালয়ে ঢুকে দুদক কর্মকর্তাদের ওপর হামলা চালিয়েছে বলে দাবি দুদকের।
দুদক কর্মকর্তাদের দাবি, এ সময় দুদক কর্মকর্তাদের সঙ্গে তাদের ধস্তাধস্তি হয়।
তবে আয়কর অফিসের দাবি, দুদক কর্মকর্তারা সাজানো অভিযান চালিয়ে পরিকল্পিতভাবে উপ-কর কমিশনারকে গ্রেপ্তার করেছে। এর আগে দুদকের দল উপ-কর কমিশনারের কক্ষে ঢুকে ভেতর থেকে দরজা বন্ধ করে দিয়ে তাঁকে মারধর করে।
আটক করে নিয়ে যাওয়ার সময় উপ-কর কমিশনার মহিবুল ইসলাম ভুঁইয়াও সাংবাদিকদের কাছে একই অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, দরজা বন্ধ করে গ্রেপ্তারের আগে তাঁকে মারধর করা হয়েছে। তিনি আহত হয়েছেন। এ সময় তাঁর ঘাড়ে একটি আঘাতের চিহ্ন দেখা যায়।
দুদক কর্মকর্তাদের দাবি, ধস্তাধস্তির সময় তাঁদের চার-পাঁচজন কর্মকর্তা আহত হয়েছেন। উপ-কর কমিশনারকে কেউ মারধর করেননি। তিনি ধস্তাধস্তিতেই আহত হয়েছেন।
আটক হওয়া মহিবুল ইসলাম ভুঁইয়া রাজশাহী কর অঞ্চলের সার্কেল-১৩ (বৈতনিক)-এর উপ-কর কমিশনার। দুপুর সোয়া ২টার দিকে ১০ লাখ টাকাসহ তাঁকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাওয়ার সময় সাংবাদিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, নগরীর মাদারল্যান্ড ইনফার্টিলিটি সেন্টার ও হাসপাতালের মালিক ডা. ফাতেমা সিদ্দিকার ব্যাংক বিবরণীতে ২৬ কোটি টাকার লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে, যা তাঁর কর নথিতে উল্লেখ করেননি। এ বিষয় নিয়ে তিনি কাজ করছিলেন। ফাতেমা সিদ্দিকা ঘটনা ধামাচাপা দিতে পরিকল্পিতভাবে আজ তাঁর অফিস কক্ষে ঢুকে টেবিলের ওপরে টাকা রেখেছিলেন। এই টাকা তিনি ছুঁয়েও দেখেননি। ফাতেমা বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দুদক অভিযান চালিয়েছে।
অভিযানের পরে দুদকের সমন্বিত রাজশাহী জেলা কার্যালয়ের সামনে উপপরিচালক মো. মনিরুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, মাদারল্যান্ড ইনফার্টিলিটি সেন্টার ও হাসপাতালের মালিক ডা. ফাতেমা সিদ্দিকার পাঁচ বছরের ব্যাংকে লেনদেনের বিষয়ে কর কর্মকর্তা আপত্তি তুলেন। বিষয়টি নিষ্পত্তি করতে গেলে ওই কর্মকর্তা ডা. ফাতেমার কাছে ৬০ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন। পরে তা ৫০ লাখ টাকায় রফা হয়। বিষয়টি জানিয়ে ফাতেমা সিদ্দিকা গত ২৯ মার্চ দুদকের প্রধান কার্যালয়ে একটি অভিযোগ করেন। এই অভিযোগ নিয়ে দুদকের রাজশাহী জেলা ও বিভাগীয় কার্যালয়ে যৌথভাবে কাজ করছিল। তারা উপ-কর কমিশনার মহিবুল ইসলাম ভুঁইয়ার ওপর নজরদারি করছিলেন। আজ ঘুষের প্রথম কিস্তির ১০ লাখ টাকা নিয়ে ডা. ফাতেমা সিদ্দিকা কর ভবনে গিয়ে উপ-কর কমিশনার মহিবুল ইসলাম ভুঁইয়ার দপ্তরে গিয়ে তাঁর সাথে দেখা করেন। কর কর্মকর্তা টাকা নিয়ে তাঁর ড্রয়ারে রেখেছিলেন। এ সময় দুদকের পক্ষ থেকে ওই কার্যালয়ে অভিযান চালানো হয়।
দুদকের উপপরিচালক মো. মনিরুজ্জামানের দাবি, মহিবুল ইসলাম ভুইয়া ওই ১০ লাখ টাকা তাঁর নিজের টেবিলের ড্রয়ারে তুলে রেখেছিলেন। অভিযানকালে ড্রয়ার থেকে ওই টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। তিনি বলেন, অভিযান চালানোর সময় তাঁরা সাদাপোশাকে ছিলেন। সঙ্গে পুলিশও ছিল না। তাঁদের ৯ কর্মকর্তা অভিযানে অংশ নিয়েছিলেন। অভিযান চালানোর সময় মহিবুল ইসলাম ভ‚ঁইয়া চিৎকার করে লোক জড়ো করার চেষ্টা করলে তাঁরা দরজা লাগিয়ে দেন। তখন কর ভবনের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে তাঁদের ওপরে হামলা চালান। এ সময় দুদকের কর্মকর্তাদের সঙ্গে তাঁদের ধস্তাধস্তি হয়। পরে তারা বাধ্য হয়ে পুলিশ ডাকেন। খবর পেয়ে নগরীর রাজপাড়া থানার পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
রাজশাহীর মাদারল্যান্ড ইনফার্টিলিটি সেন্টার ও হাসপাতালের মালিক ডা. ফাতেমা সিদ্দিকা দুপুর সোয়া ২টার দিকে দুদক কর্মকর্তাদের সঙ্গে আয়কর ভবন থেকে বের হন। এ সময় সাংবাদিকরা তাঁর কাছে ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি কোনো কথা বলতে রাজি হননি।
উপকমিশনারকে আটকের বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী কর অঞ্চলের কমিশনার মো. শাহ্ আলী সাংবাদিকদের বলেন, দুদক একটি স্বাধীন কমিশন। তারা তাদের কাজ করেছে। তবে দুদক এভাবে আটক করে নিয়ে যেতে পারে কি না, সে বিষয়টি আদালতে নিষ্পত্তি হবে। ডা. ফাতেমা সিদ্দিকার আয়কর ফাইল নিয়ে কাজ শুরু করার আগে উপকমিশনার মহিবুল ইসলাম ভুঁইয়া তাঁর অনুমতি নিয়েছিলেন কি না, জানতে চাইলে কমিশনার মো. শাহ আলী বলেন, এ ব্যাপারে অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। তবে বিষয়টি তিনি অবগত ছিলেন।