ক্রিকেট
জয়রথ চলছে, চলবে
দিন যত গড়াচ্ছে, রং তত দ্রুতই আরো উজ্জ্বল হচ্ছে। সোনালি আলোর আভাটা এখন বেশ স্পষ্ট করেই দৃশ্যপটে চলে এসেছে। নতুন যুগের হাতছানি তো এটাই। এখন সবাই বেশ সতর্ক। কখন না আবার ধরা খেয়ে যায়। বাঘের তর্জন গর্জনই বলছে এ এক নতুন পরাশক্তি। ক্রিকেটের বিনোদনখ্যাত টি-২০-তে এ এক অবিশ্বাস্য বাংলাদেশ। গত কিছু দিন আগেও যারা বেশ অচেনাই ছিল। এবারের এশিয়া কাপে উত্থান! বেশ দাপটের সঙ্গে। খানিকটা পচা শামুকেই পা কাটল পাকিস্তান আর শ্রীলঙ্কার। পচা শামুক বলছি এ কারণে, ক্রিকেটের ছোট সংস্করণে একটু অচেনাই ছিল বাংলাদেশ।
এশিয়া কাপের ধারাবাহিক ফলাফলের ছন্দে এবারের টি-২০ বিশ্বকাপের কোয়ালিফায়িং পর্বে এ এক আলাদা বাংলাদেশ। মাথা উঁচু করেই মূল পর্বে চলে গেল। ধর্মশালার ঠান্ডা আর বৃষ্টি যেখানে তৃতীয় প্রতিপক্ষ হিসেবে মাঠে আর মাঠের বাইরে খেলল। সেখানে প্রতিপক্ষের বিপক্ষে মাঠে অসাধারণ পারফরমেন্স। নেদারল্যান্ডসের সঙ্গে আট রানে ম্যাচ জিতলেও একবার মনে হয়নি বাংলাদেশ এই ম্যাচে হারতে পারে। অনেকটা বড় দলগুলোর মতোই পজিটিভ ক্রিকেট খেলল বাংলাদেশ। আয়ারল্যান্ডের সঙ্গে ম্যাচটা যেভাবে শুরু হয়েছিল, সেভাবে যদি খেলাটা শেষ পর্যন্ত গড়াত, সমীকরণের হিসাবটা বাংলাদেশের পক্ষেই কথা বলত। খেলা শুরু হওয়ার পর কিছু সময় পেরুতেই বৃষ্টি একাই ওই ম্যাচটা খেলল। দলকে কিছুটা বিশ্রামই দিল বলতে হবে। সেই সুবাদে পয়েন্ট ভাগাভাগি হলো। বাঘ কি খাবার ভাগাভাগি করতে পছন্দ করে? ওদিনের পয়েন্ট ভাগাভাগির পর রোববারের ম্যাচে ৫৪ রানের এক দাপুটে জয় ওমানের বিপক্ষে। তামিমের ব্যাটিংটা যাঁরা দেখেছেন, তাঁদের কিছু বলা লাগবে না।
ওয়ান্ডেতে বড় দল হয়ে ওঠার আভাস মিলেছে আগেই। এবারের এশিয়া কাপের পর সব দলই নতুন করে ভাবতে শুরু করেছে বাংলাদেশকে নিয়ে। মনে হচ্ছে আকাশটা এখন অনেক বড়। দলগতভাবে পারফরমেন্স বেড়েছে। এখন আর বাংলাদেশ দলে বিশেষ কেউ পারফর্ম করে না। সবার অবদানে ম্যাচ জিতে বাংলাদেশ। ব্যাটিং, বোলিং কিংবা ফিল্ডিং প্রতিটি বিভাগেই উন্নতির সঙ্গে সঙ্গেই অশুভ দৃষ্টি এসে পড়ল আমাদের প্রাণের ক্রিকেটে। তাসকিন আর সানির বিষয়াটা আমাদের বেশ বিচলিত করেছে।
টি-২০ ক্রিকেটে আমাদের শুরুটা বেশ ভালোই বলা যাবে। তখন ধামাকা রকমের ক্রিকেট খেলত বাংলাদেশ। এ জন্য অনেকেই মনে করেছিল এই নতুন পর্বটা এসেছে বোধ হয় বাংলাদেশের জন্য। টি-২০ বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচেও জিতেছিল বাংলাদেশ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে জেতা ম্যাচে কিন্তু গেইলও ছিল! ওই বিশ্বকাপের পর থেকেই কেন জানি টি-২০তে হারিয়ে যেতে শুরু করল বাংলাদেশ। তার পরেও ম্যাচ জিতেছি আমরা। কিন্তু সমীহ করার মতো কোনো খেলা অন্তত খেলতে পারছিল না বাংলাদেশ। সেই হতাশা ভুলে এবার আনন্দের দিনগুলোতে যেতে চায় বাংলাদেশ।
এশিয়া কাপের আত্মবিশ্বাসটাই আমাদের কাছে নতুন স্বপ্ন দেখাতে শুরু করেছে। ক্রিকেটের এই সংস্করণে আমাদের উত্থানের ক্ষেত্রে এশিয়া কাপ এক মঙ্গলযাত্রা। এ দলে আছে রহস্যময় কিশোর মুস্তাফিজ আর কিংবদন্তি ক্যাপ্টেন মাশরাফি। সেরা অলরাউন্ডার সাকিব জ্বলে ওঠার অপেক্ষায়। তামিম খেলছে, তাসকিন খেলছে। সাব্বিরও দারুণ সময় পার করছে। মুশফিক ফিকে হলেও, ফিরবে আশা। আল-আমিন ভালো করে চলেছে। মাহমুদুল্লাহ হাতের ব্যাটটাও বেশ হাসছে ধারাবাহিকভাবে। আর যে কজন তরুণ দলে আছে ওরাও দারুণ প্রতিভাবান। একটা দলের জন্য এগুলোই যথেষ্ট। এখন দরকার আরো আত্মনিবেদন। যেন ধারাটা চলমান থাকে। গা ভাসানোর কোনো কারণ নেই।
ক্রিকেট যদি হয় গৌরবময় অনিশ্চয়তার অন্য নাম। তাহলে টি-২০ ক্রিকেট হলো অনিশ্চয়তার বাবা! কখন কী ঘটে যায় তা বলা যায় না। সতর্ক থাকতে হবে সব সময়। প্রতিটি ম্যাচে করতে হবে আরো উন্নতি। এ ক্ষেত্রে অবশ্য অনেকেই তাকিয়ে আছে অধিনায়ক মাশরাফির দিকে। তিনি কতটা বদলে দিতে পারেন আমাদের টি-২০ ক্রিকেট।
ওই জাদুর কাঠিটা ছাড়া যেন খানিকটা অচল বাংলাদেশের ক্রিকেট। কিন্তু আর কত দিন? তার শেষের সময়টাও শুরু হয়ে গেছে। আর বেশি দিন বোধহয় টি-২০ ক্রিকেটে তাকে পাওয়া যাবে না। কে জানে এ বিশ্বকাপের পরই না বিদায় বলে দেয়!
এ টি-২০ বিশ্বকাপে মাশরাফির অসাধারণ নেতৃত্ব আর তারুণ্যের শক্তি একসঙ্গে মিলে ইতিহাস রচনা করবে। এমন প্রত্যাশা সাড়ে ষোল কোটি বাংলাদেশির।
লেখক : সাংবাদিক