বাদী আদালতের বারান্দা থেকে তুলে নেওয়ার অভিযোগ
সুনামগঞ্জে গত ৪ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হামলার ঘটনায় করা মামলার বাদী হাফিজ আহমদকে আদালত এলাকা থেকে তুলে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
আজ সোমবার (১১ নভেম্বর) আদালতে এসেছিলেন মামলার বাদী হাফিজ। কিন্তু আদালতের বারান্দা থেকে কয়েকজন যুবক তাকে তুলে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
হাফিজ আহমদ গত ২ সেপ্টেম্বর ৯৯ জনের নাম উল্লেখ এবং ২০০ জনকে অজ্ঞাতপরিচয় আসামি করে জেলা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন। মামলার এক মাস ২০ দিন পর গত ২৩ অক্টোবর সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ আদালতে হলফনামা দিয়ে তিনি বলেন, 'ঘটনার বিষয়ে কোনো কিছু জানি না, কোনো আসামিকে চিনি না।' শুধু তাই নয়, মামলাটি আপস হয়ে গেছে জানিয়ে তিনি আসামিদের বিনা বিচারে মামলা থেকে অব্যাহতির আবেদনও করেন।
এ বিষয়ে দ্রুত বিচার আদালত আজ সোমবার তাঁকে আদালতে তলব করেছিলেন। এ কারণেই তিনি আদালতে এসেছিলেন।
জেলা বারের আইনজীবী নাজমুল হুদা জানান, হাফিজ আহমদ জেলা ও দায়রা জজ আদালতে একটি ফৌজদারি মামলা করেছেন। ওই মামলাতেই তিনি হলফনামা দিয়েছেন। এই হলফনামার অনুলিপি তিনি দ্রুতবিচার আদালতে দাখিল করেছিলেন। এ বিষয়ে সরাসরি বক্তব্য জানতে বাদীকে আজ হাজির হওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছিলেন আদালত।
আইনজীবী নাজমুল হুদা বলেন, সকালে বাদী আদালতে এসেছিলেন। পরে শুনি বারান্দা থেকে কয়েকজন যুবক তাঁকে জোর করে বের করে নিয়ে গেছেন। কে বা কারা এটা করেছে জানি না।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য হাফিজ আহমদের মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে ফোন ধরেন আব্দুল মজিদ নামের এক ব্যক্তি। তিনি হাফিজের প্রতিবেশী। মজিদ জানান, হাফিজ ফোনটি বাড়িতে রেখে সকালে কোর্টে গেছেন। দুপুরের পর তারা জানতে পেরেছেন কয়েকজন যুবক হাফিজকে আদালতের বারান্দা থেকে ধরে নিয়ে গেছেন। মামলা আপসের দরখাস্ত করার নাকি তারা ক্ষুব্দ। বিকেলে খোঁজ নিয়ে জেনেছেন ওই যুবকরা তাকে সদর থানায় দিয়েছেন।
মজিদ বলেন, পুলিশ বলছে হাফিজ মামলা আপস করতে চাওয়ায় ওই যুবকেরা ক্ষুব্দ হয়ে তাকে ধরে থানায় দিয়েছেন। আজ কোর্টের নির্দেশেই হাফিজ কোর্টে গিয়েছিলেন। পুলিশ এখন সেই কাগজ দেখতে চাইছে। আমরা সেটি পাঠিয়েছি।
তবে সুনামগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজমুল হক আজ রাতে বলেন, হাফিজ আহমদকে থানায় দেওয়া হয়েছে সেটি তিনি জানেন না। তিনি থানার বাইরে একটি মিটিংয়ে আছেন।
সুনামগঞ্জ পৌর শহরে গত ৪ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় ছাত্র-জনতার ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। এতে দুজন গুলিবিদ্ধসহ অনেকেই আহত হন। এর মধ্যে গুলিবিদ্ধ আহত একজন হলেন জেলার দোয়ারাবাজার উপজেলা এরোয়াখাই গ্রামের বাসিন্দা জহুর আলী (৩০)। তিনি বসবাস করতেন সুনামগঞ্জ পৌর শহরের বাধনপাড়া এলাকায়। ঘটনার প্রায় এক মাস পর জহুর আলীর ভাই মো. হাফিজ আহমদ (৪৫) বাদী হয়ে সুনামগঞ্জের দ্রুত বিচার আদালতে ৯৯ জনের নাম উল্লেখ এবং আরও ২০০ জনকে অজ্ঞাতপরিচয় আসামি করে এই মামলাটি করেছিলেন।
এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, সুনামগঞ্জের সাবেক সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিকসহ বেশ কয়েকজন জেল খেটেছেন।