দারিদ্র্য নয় জিতল রাজীবের স্বপ্ন
পরিবার দরিদ্র ছিল। অর্থ সংকটে অনেক কিছুই মিলেনি। কিন্তু তাই বলে কখনো হাল ছাড়েননি চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার রাজীব শীল। স্বপ্ন দেখেছেন আর সফলও হয়েছেন। গত শনিবার সিঙ্গাপুরের ইউনিভার্সিটি অব সাউথ অস্ট্রেলিয়া থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেছেন।
সিঙ্গাপুর রাইফেল সিটি কনভেনশন সেন্টারে আয়োজিত অনুষ্ঠানে আনুষ্ঠানিকভাবে ডিগ্রি গ্রহণ করেন রাজীব শীল।
কেবল পড়াশোনায় নয় সাহিত্যচর্চাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে রাজীবের কাজ ঈর্ষণীয়। সিঙ্গাপুরে কথা হয় রাজীব শীলের সঙ্গে।
রাজীব চট্টগ্রাম জেলার রাঙ্গুনিয়া উপজেলায় উত্তর পদুয়া ইউনিয়নে জমিদার টিলা গ্রামের বাসিন্দা। দরিদ্র পরিবারে তিন ভাই ও একবোনের মধ্যে রাজীব সবার ছোট হলেও সে স্কুলের সেরা ছাত্রদের একজন। পরিবারের দরিদ্রতাকে জয় করার জন্য বড়বোন বেবী, বড় ভাই বিজয় ও মেজ ভাই সঞ্জয় এস এস সি পাস করে পড়াশোনার ইতি টানেন। প্রথমদিকে অর্থসংকটের আঁধারে রাজীব বারেবারে পতিত হলেও পরিবারের ছায়া, নিজের সৃজনশীলতার অধ্যবসায়, দৃঢ় মনোবলের উৎসাহে গ্রামে থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শেষ করেন। এরপর শ্যামলী আইডিয়াল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে ডিপ্লোমা ইন অটোমোবাইল শেষ করে উচ্চ শিক্ষার জন্য সিঙ্গাপুরে চলে আসেন। পরিবার এবং নিজের প্রকৌশলী হওয়ার স্বপ্ন পূরণের জন্য সিঙ্গাপুরে ইউনিভার্সিটি অব সাউথ অস্ট্রেলিয়ায় ব্যাচেলর অব মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ভর্তি হন।
শৈশব থেকেই রাজীব ছিলেন মেধাবী। স্কুল, খেলাধুলায়ও সুনামের সাথে পেয়েছেন অনেক পুরস্কার। তাঁর সফলতা দেখে বাবা মা ভাই বোন সবাই ছোটবেলা থেকে তাঁকে নিয়ে চিকিৎসক বা প্রকৌশলী হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন। রাজীবের আগ্রহ ছিল লেখালেখিতে। লিখেছেন ছোটগল্প,কবিতা, গানসহ সচেতনমূলক নাটক।
লেখার প্রতি আগ্রহ থেকে কলেজে পড়া অবস্থায় দেয়ালিকাসহ বিভিন্ন ম্যাগাজিনে, পত্রিকায় তাঁর বেশকিছু কবিতা প্রকাশিত হয়।
২০১২ সালে রাজীবের প্রথম একক কাব্যগ্রন্থ 'অধরা', ২০১৫ সালের একুশে বইমেলায় প্রকাশিত হয় দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ ' আধো আলো আধো আঁধার ' এবং চট্টগ্রামের অনেক জনপ্রিয় শিল্পী গেয়েছেন তাঁর লেখা অনেক গান।
এরই মধ্যে গীতিকার হিসেবে রাজীব তালিকাভুক্ত হয়েছেন বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতারে। বাংলাদেশ টেলিভিশন চট্টগ্রাম কেন্দ্রের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অভিনয়, গীতিকার, গ্রন্থনাকারী হিসেবেও কাজ করেন।
প্রবাসেও তাঁর সাহিত্যচর্চা চলছে অবিরাম। সিঙ্গাপুর থেকে প্রকাশিত একমাত্র বাংলা পত্রিকা 'বাংলার কণ্ঠ’ সাহিত্য পরিষদের ছিলেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।
সিঙ্গাপুরের জনপ্রিয় আয়োজন অভিবাসী কবিতা প্রতিযোগিতায় ২০১৪ সালে হয়েছেন রানার্স আপ। ২০১৫ সালে সিঙ্গাপুর এসপ্লানেড থিয়েটারে একটি ভারতীয় নৃত্যদলের সঙ্গে রাজীবকে এবং অন্য এক বাঙালি কবিকে নিয়ে হয়েছিল ‘ফ্রম অ্যানাদার ল্যান্ড’ নামক কবিতার আসর। যা বাংলা সাহিত্যকে ভিনদেশিদের কাছে প্রশংসিত করেছে। বিভিন্ন সাহিত্য অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে মেলে ধরছেন বাংলা সাহিত্যকে।
রাজীব শীল বলেছেন, ‘গ্রাজুয়েট হওয়ার জন্য আমাকে অনেক সংগ্রাম করতে হয়েছে, গর্ব করি আমার প্রিয় মা-বাবা, ভাইবোনকে নিয়ে। তাঁদের ইচ্ছে, নিজের অদম্য স্বপ্নের পাশাপাশি এবং পাশে থাকা মানুষদের ভালোবাসা নিয়ে এই আমি। ছোটবেলায় দরিদ্রতার সাথে বাস করা দিনগুলো প্রতিনিয়ত মানুষ হয়ে বাঁচতে শেখায়। আজকে প্রকৌশলী হলাম কিন্তু যখন আমাকে নিয়ে মায়ের দেখা চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন ম্লান হচ্ছিল তখন মনে মনে স্থির করি বাস্তবতাকে অবলোকন করে ভালোবাসার কবিতা, গান, গল্প, সমসাময়িক লেখনশৈলীর মাধ্যমে মানুষের মনের চিকিৎসক হই এবং সামনেও সবার ভালোবাসা নিয়ে এগিয়ে যাব, দেশের মানুষের কাছে যাব।’