সাংবাদিক আবদুর রেজ্জাকের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী পালিত
সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ, সাহিত্যিক আবদুর রেজ্জাকের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী আজ বৃহস্পতিবার। শেরপুরের রাজনীতি ও সাংবাদিকতা জগতের অন্যতম দিকপাল, শেরপুর জেলার প্রথম সংবাদপত্র ‘সাপ্তাহিক শেরপুর’-এর সম্পাদক, লেখক, কবি আবদুর রেজ্জাক ২০১৫ সালের ১৭ নভেম্বর এই দিনে ইন্তেকাল করেন।
প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আজ বাদ আসর মরহুমের গ্রামের বাড়ি পাকুড়িয়ার খামারপাড়ায় তাঁর নিজ প্রতিষ্ঠিত মসজিদে পরিবারের পক্ষ থেকে মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়। মিলাদের পরে মরহুমের কবর জিয়ারত ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়।
আজীবন সৎ ও শুদ্ধ রাজনীতি এবং সাংবাদিকতার পথিকৃৎ এই মানুষটি নিরলসভাবে শেরপুরের মানুষের জন্য কাজ করে গেছেন।
মরহুম আবদুর রেজ্জাক শেরপুর সদর উপজেলার পাকুরিয়া খামারপাড়া গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা ছিলেন বিশিষ্ট জোতদার মরহুম বন্দে আলী সরকার। ১৯৫৪ সালের ভাষা আন্দোলনের সঙ্গে তিনি সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন। রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে ১৯৭৮ সালে তিনি তৎকালীন শেরপুর থানা বিএনপিতে যোগ দেন। পরে ১৯৯১ সালে তিনি জেলা বিএনপির সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৯০ সালের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে শেরপুরে ২২ দলীয় ঐক্যজোটের আহ্বায়ক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ ও নেতৃত্ব দেন এই বর্ষীয়ান নেতা।
একজন বিশিষ্ট লেখক ও কবি হিসেবে সুপরিচিত আবদুর রেজ্জাকের প্রখ্যাত উপন্যাস ‘চলার পথে’, ‘বড় একা একা লাগে’, কাব্যগ্রন্থ ‘আমাকে বলতে দাও’সহ ছয়টি প্রকাশনা রয়েছে। তাঁর সম্পাদনায় শেরপুরে বের হয়েছে অসংখ্য সাহিত্য ম্যাগাজিন ও প্রকাশনা। তিনি দীর্ঘদিন শেরপুর সাহিত্য পরিষদের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের স্বীকৃতিস্বরূপ শেরপুরবাসী তাঁকে গুণীজন হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে সংবর্ধিত করেন।
একজন সাংবাদিক হিসেবেও সফল এই মানুষটি প্রথম দৈনিক কৃষাণ পত্রিকায় যোগ দেন। এরপর ১৯৮৬ সালের ১ জানুয়ারি শেরপুর জেলার প্রথম সংবাদপত্র ‘সাপ্তাহিক শেরপুর’ প্রতিষ্ঠা করেন। আমৃত্যু তিনি এ পত্রিকার মাধ্যমে শেরপুরবাসীর সেবা করে গেছেন। শুধু তাই নয় তিনি ‘সাপ্তাহিক শেরপুর’-এর মাধ্যমে শেরপুরে সাংবাদিকদের নতুন প্রজন্ম সৃষ্টিতে এক উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেন। তিনি কলামিস্ট হিসেবে ‘মৃতভাষী’ ও ‘ইবনে বন্দে আলী’ নামে কলাম লিখতেন।
এ ছাড়া ২০০১ সালে আবদুর রেজ্জাক বাংলাদেশ জাতীয় সমাজকল্যাণ পরিষদের সদস্য হিসেবে শেরপুরে অসংখ্য মসজিদ, মাদ্রাসা, সামাজিক সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের পৃষ্ঠপোষকতা করেছেন। সে সময় শেরপুরের ভাতশালায় দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের স্কুলসহ সারা জেলায় অনেক প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠায় মরহুমের অবদান উল্লেখযোগ্য। নিজ গ্রামের বাড়ি পাকুড়িয়ায় একটি মসজিদ এমনকি পাকুড়িয়া মাজার শরিফ পর্যন্ত পাকা রাস্তাটি তাঁর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় নির্মিত হয়েছে।
শেরপুরের সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনেও আবদুর রেজ্জাকের অবদান উল্লেখযোগ্য। স্বাধীনতা-পূর্ববর্তী সময় থেকেই তিনি শেরপুরের সাহিত্য ও নাট্য আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত থেকে এই দুটি ক্ষেত্রের উৎকর্ষতা সাধনে কাজ করেছেন।
মরহুম আবদুর রেজ্জাকের একমাত্র সন্তান কাকন রেজাও সাংবাদিকতা পেশার সঙ্গে যুক্ত।