সাংবাদিক শিমুলের ক্যামেরায় কী ছিল?
দৈনিক সমকালের শাহজাদপুর প্রতিনিধি সাংবাদিক আবদুল হাকিম শিমুল নিহত হওয়ার আট দিন পার হলেও এখন পর্যন্ত তাঁর মুঠোফোন ও ক্যামেরা উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ ও স্বজনেরা।
শটগানের গুলিতে শিমুল নিহত হওয়ার পর থেকেই বারবার উচ্চারিত হচ্ছে একটি প্রশ্ন- তাঁর ক্যামেরায় এমন কী ছিল? যে কারণে ক্যামেরাটি তাঁর কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে গায়েব করা হয়েছে। পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে ওই ক্যামেরা দিয়ে কী এমন ছবি বা ভিডিও ধারণ করেছিলেন তিনি; যার জন্য তাঁকে গুলিবিদ্ধ হয়ে মরতে হলো।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গত ২ ফেব্রুয়ারি শাহজাদপুর পৌরসভার মেয়র হালিমুল হক মিরুর পক্ষের সঙ্গে ছাত্রলীগের একাংশের সংঘর্ষ চলার সময় গুলি লাগার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত ক্যামেরায় একের পর এক ছবি তুলে যাচ্ছিলেন সমকালের শাহজাদপুর প্রতিনিধি সাংবাদিক শিমুল। যখন গুলিতে শিমুল মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তাৎক্ষণিক কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী শিমুলের ক্যামেরাসহ কাগজপত্র শিমুলের মামার হাতে তুলে দেন। কিন্তু ভাগ্নের শোকে মামা অচেতন হয়ে পড়ায় ক্যামেরাটি উধাও হয়ে যায়। ঘটনার আট দিন অতিবাহিত হলেও ক্যামেরাটির খোঁজ পাওয়া যায়নি। ক্যামেরায় ধারণ করা ছিল মেয়র মিরুর গোপন রহস্য। এজন্যই শিমুলকে গুলি করে মারা হয়েছে বলে জানালেন নিহত সাংবাদিকের স্ত্রী ও স্বজনেরা।
নিহত শিমুলের ছোট ভাই আজাদ রহমান বলেন, ‘মামার কাছে শুধু কাগজপত্রগুলো পাওয়া গেছে। কিন্তু শিমুলের ক্যামেরা ও মোবাইল পাওয়া যায়নি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও ক্যামেরার খোঁজে আমাদের কাছে এসেছিল। আমরা ক্যামেরাটি খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি।’
আজাদ রহমান বলেন, শিমুলের ক্যামেরাটি পাওয়া গেলে কার গুলিতে মারা গেছে সে বিষয়টিও পরিষ্কার হতো। সেই সঙ্গে অনেক রহস্যের জট খুলে যেতো বলে তিনি জানান।
নিহত শিমুলের স্ত্রী নূরুন নাহার জানান, ২ ফেব্রুয়ারি গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর থেকেই তাঁর স্বামীর ব্যবহৃত মুঠোফোন ও ক্যামেরা পাওয়া যায়নি। তবে অনেকেই ধারণা করছেন, তাঁর ফোন দিয়ে ভিডিও করা এবং ক্যামেরা দিয়ে ছবি তোলার সময় তিনি গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন।
বৃহস্পতিবার দুপুরে শিমুল হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শাহজাদপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মনিরুল ইসলাম জানান, শিমুলের মুঠোফোন ও ক্যামেরাটি উদ্ধারের জন্য জোর চেষ্টা চালানো হচ্ছে।
গত ২ ফেব্রুয়ারি শাহজাদপুর পৌর মেয়র পক্ষের সঙ্গে ছাত্রলীগের একাংশের সংঘর্ষ চলাকালে গুলিবিদ্ধ হয়ে পরদিন ৩ ফেব্রুয়ারি মারা যান শিমুল। ওই দিনই পৌর মেয়র মিরুর ব্যবহৃত শটগান, ৪৩টি গুলি ও গুলির খোসা জব্দ করে পুলিশ।
মিরুকে গ্রেপ্তারের পরদিন গত সোমবার সিরাজগঞ্জের পুলিশ সুপার মিরাজউদ্দিন আহমেদ তাঁর কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে জানান, কর্মরত থাকা অবস্থায় গুলিতে সাংবাদিক শিমুল নিহত হন। ময়নাতদন্তের সময় তাঁর মাথা থেকে লেটবল গুলি উদ্ধার করা হয়েছে। এটি পৌর মেয়রের শটগানের গুলি কি না, তা নিশ্চিত হতে মেয়রের শটগানসহ ৪৩ রাউন্ড গুলি জব্দ করা হয়েছে। মেয়রের আগ্নেয়াস্ত্র, শটগানের গুলি ও সাংবাদিকের মাথা থেকে উদ্ধার হওয়া গুলি ব্যালিস্টিক পরীক্ষা ও প্রয়োজনীয় মতামতের জন্য ঢাকায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগে (সিআইডি) পাঠানো হয়েছে।
শিমুল হত্যার ঘটনায় সিরাজগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মেয়র মিরু গ্রেপ্তার হয়ে বর্তমানে কারাগারে আছেন। তাঁকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটি।