পুলিশের তাড়া খেয়ে নদীতে ডুবে ব্যবসায়ীর মৃত্যু
মেহেরপুরের মুজিবনগর উপজেলার রসিকপুরে পুলিশের তাড়া খেয়ে নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়ে আলমগীর হোসেন (৪৫) নামের এক আম ব্যবসায়ী মারা গেছেন।
গতকাল রোববার রাত ১২টার দিকে এ ঘটনা ঘটলেও আজ সোমবার সকাল ৮টার দিকে লাশ উদ্ধার করে স্থানীয় লোকজন। পরে ময়নাতদন্তের জন্য লাশ মর্গে পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু করলে নিহতের স্বজনদের তোপের মুখে পড়ে পুলিশ।
নিহত আলমগীর হোসেনের বাড়ি ভোলার ইলিশ জংশন এলাকায়। তিনি দুই সপ্তাহ আগে উপজেলার রসিকপুর গ্রামের মেয়ের জামাই আমিরুল ইসলাম ওরফে ফুলবাশের বাড়িতে ব্যবসার কাজে যান।
স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আলমগীর হোসেনসহ বেশ কয়েকজন রসিকপুর গ্রামের ভৈরব নদের কিনারে মোতালেবের চায়ের দোকানে বসে ছিলেন। ঘটনার সময় মুজিবনগর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আবু তাহেরের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল সেখানে জুয়াড়ি ধরতে অভিযান চালায়। এ সময় আলমগীর হোসেন, রেজাউল হোসেন ওরফে খোকন, জাহান আলী পুলিশের হাত থেকে বাঁচতে ভৈরব নদে ঝাঁপ দেন। আলমগীর হোসেন সাঁতার না জানার কারণে নদীতে ডুবে যান। খোকন ও জাহান সাঁতরে ওপরে উঠে পালাতে গেলে পুলিশ ওদিক থেকেও ধাওয়া দেয়। এ কারণে তাঁরা নদের মাঝখানে ভাসমান অবস্থায় অবস্থান করেন। কিছুক্ষণ পর খোকন ও জাহান ডাঙায় উঠলে পুলিশ তাদের আটক করে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দিয়েছে।
এদিকে, একই সময়ে গ্রামের স্থানীয় বাসিন্দা জাহাঙ্গীর হোসেন তাঁর মহিষ রশি খুলে পালিয়ে ভৈরব নদের দিকে পালিয়ে যান। তিনি মহিষ খুঁজতে গিয়ে খোকনকে উলঙ্গ অবস্থায় দেখেন। জাহাঙ্গীর বলেন, ‘নদের ধারে গিয়ে দেখি খোকন হাঁপাতে হাঁপাতে আমার কাছে এসে বলে গামছা বা তোয়ালে যা আছে দেন, আমার পরনের পোশাক নদীতে খুলে গেছে। পরে জানতে পারলাম, পুলিশের হাত থেকে রক্ষা পেতে তারা নদে ঝাঁপ দিয়েছে।’
আলমগীর হোসেনের মেয়ের শ্বশুর আনিসুর রহমান বলেন, ‘আমার বেয়াইয়ের কোনো বাজে অভ্যাস নেই। তিনি ১০ থেকে ১২ বছর ধরে আমাদের এখানে আমের সময় ব্যবসা করতে আসেন। সেই থেকে পরিচয়ের মাধ্যমে চার বছর আগে তার মেয়ের সঙ্গে আমার ছেলের বিয়ে দিই। এবারও সপ্তাহ দুয়েক আগে তিনি এলাকায় আমের ব্যবসা করার জন্য এসেছিলেন। গতকাল চায়ের দোকানে গিয়ে পুলিশের তাড়া খেয়ে নদীতে ঝাঁপ দিয়েছেন। পরে এলাকার মানুষের হৈচৈ শব্দে বুঝতে পারি, বেয়াই নদের পানিতে ডুবে গেছেন।’
আনিসুর আরো জানান, রাতে অনেক খোঁজাখুঁজি করে লাশ পাওয়া যায়নি। সকালে গ্রামের স্লুইসগেট এলাকায় আলমগীর হোসেনের লাশ ভেসে উঠতে দেখে স্থানীয়দের সহযোগিতা উদ্ধার করে বাড়িতে নিয়ে আসা হয়।
এদিকে, লাশ উদ্ধারের পর মেহেরপুরের সহকারী পুলিশ সুপার (সার্কেল) আহসান হাবিব, মুজিবনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী কামাল হোসেনসহ পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করেন। এ সময় লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু করলে নিহত আলমগীরের মেয়ে জামাইসহ স্বজনদের তোপের মুখে পড়ে পুলিশ।
স্থানীয় কয়েকজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে অভিযোগ করে জানান, পুলিশ বেশ কয়েক দিন ধরে বিভিন্ন বেশে এসে সাধারণ মানুষকে হয়রানি করছে। যাকে তাকে আটক করে যেকোনো মামলা দেওয়ার ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করে ছেড়ে দিচ্ছে।
স্থানীয় মোনাখালী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য জহির উদ্দিন বলেন, জুয়া আর মাদকের নামে পুলিশ সাধারণ মানুষকে হয়রানি করে তাড়িয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছে। আলমগীর হোসেন অন্য এলাকার মানুষ হলেও দীর্ঘদিন তার এখানে যাতায়াতের কারণে তিনি এলাকায় ভালো মানুষ হিসেবে পরিচিত। তিনিসহ তিনজন পুলিশের হাত থেকে রক্ষা পেতে ভৈরব নদে ঝাঁপ দিয়েছেন। পুলিশ তাদের বাঁচানোর চেষ্টা না করে বরং বারবার তাড়া দেওয়াতে আলমগীর ওপরে উঠতে পারেননি এবং সাঁতার না জানার কারণে নদে ডুবে মারা গেছেন।
মেহেরপুরের সহকারী পুলিশ সুপার (সার্কেল) আহসান হাবিব বলেন, গোপন সংবাদ ছিল, সেখানে জুয়া খেলা হচ্ছে। এমন একটি সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশের একটি দল সেখানে অভিযান চালালে সেখানো যারা ছিল, তারা যে যেমন পেরেছে পালিয়ে গেছে। এদের মধ্যে আলমগীর হোসেন নদীতে পড়ে ডুবে মারা গেছেন। এ ঘটনায় পুলিশ দুজনকে আটক করলেও তাদের কাছে কোনো টাকাপয়সা ও অন্য কিছু না পাওয়ায় তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।