সুনামগঞ্জে ‘শনির ভর’
একের পর এক দুর্যোগে নাকাল সুনামগঞ্জবাসী। কখনো মানবসৃষ্ট, কখনো বা প্রাকৃতিক দুর্যোগ লেগেই আছে এখানে। গত পাঁচ মাসে কয়েক দফা আগাম অতিবৃষ্টিসহ উজানের পাহাড়ি ঢলে বাঁধ ভেঙে ডুবেছে ফসল, হাওরের মাছ। কয়েক দিনের টানা ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ের ঢলে প্রতিদিনই নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। যেন ‘শনি ভর’ করেছে এ হাওর জেলায়।
এরই মধ্যে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলাসহ কয়েকশ গ্রাম প্লাবিত হয়ে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে কয়েক লাখ মানুষ। তাঁরা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। এরই মধ্যে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জেলার সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সব ধরনের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে।
জরুরি সভা ডেকে প্রশাসনের সব কর্মকর্তাকে সব ধরনের প্রস্তুতি ও মানুষকে সহায়তা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রতি উপজেলায় ১০ টন চাল বরাদ্দ দিয়েছে জেলা প্রশাসন।
গত পাঁচ মাসে সুনামগঞ্জ জেলায় একের পর এক প্রাকৃতিক দুর্যোগ হানা দিয়েছে। গত চার দিনের টানা ভারি বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ের ঢলে সুনামগঞ্জ সদর, তাহিরপুর, বিশ্বম্ভরপুর, দোয়ারাবাজার, ছাতক, শাল্লা, জামালগঞ্জ, দিরাই ও ধর্মপাশা উপজেলার বেশির ভাগ এলাকা প্লাবিত হয়ে বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। এতে করে ১১ উপজেলার কয়েক লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার সঙ্গে তিন উপজেলার সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। তবে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সীমান্তবর্তী গ্রামগুলো।
এদিকে, সুনামগঞ্জের সুরমা নদী, যাদুকাটা নদী, চেলা নদী দিয়ে পানি বিপৎসীমার কয়েক ফুট ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আর একের পর এক দুর্যোগে দিশেহারা জেলাবাসী সব দিক কুলিয়ে উঠতে পারছেন না। বাড়িঘরে পানি ঢুকে পড়ায় শিশুসন্তান নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তাঁরা।
স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, ‘মাছ গেল, ধান গেল, আর কত কিছু হইয়া গেল। পানি মাড়ে (মাড়িয়ে) গ্যারাম পার হইয়া আইন্যা বেইচ্যা বাচ্চাকাচ্চা লাইয়া খাইতাম।’
আরেকজন মুদি দোকানি বলেন, দোকানে পানি উঠে গেছে। আরো যদি পানি বাড়ে, তাহলে চলা অসম্ভব হয়ে যাবে।
সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক সাবিরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা এমন কোনো অবস্থায় ভুগতে চাই না। যেখানে মানুষ বলতে পারে আমাদের উদ্যোগের অভাবের কারণে একটা ঘটনা ঘটে গেছে। কিছু কিছু জায়গায় কিছু ঘটনা হয়তো ঘটতে পারে। যেখানে আমাদের সীমার অতিরিক্ত। প্রকৃতির সঙ্গে আসলে যুদ্ধ করে টেকাটা খুব কঠিন।’
নিজ নিজ অবস্থান থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানান জেলা প্রশাসক।