ওয়াশিংটনে আমেরিকান বাংলাদেশি ফ্রেন্ডশিপ সোসাইটির যাত্রা শুরু
আমেরিকায় বসবাসরত বাংলাদেশিদের স্বপ্নপূরণের অঙ্গীকারের মধ্য দিয়ে বৃহত্তর ওয়াশিংটনে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু হলো আমেরিকান বাংলাদেশি ফ্রেন্ডশিপ সোসাইটির (এবিএফএস)। গতকাল রোববার দুপুরে ভার্জিনিয়ার স্প্রিং ফিল্ডে ডেরা রেস্তোরাঁয় এক মতবিনিময় সভার মধ্য দিয়ে এই সোসাইটির যাত্রা শুরু হয়। মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের উদ্যোক্তা জি আই রাসেল এবং সভা পরিচালনা করেন জুয়েল বড়ুয়া। এ ছাড়া উপস্থিত ছিলেন সাদেক এম খান, মনির পাটোয়ারী, মনির হোসেন, মোস্তাফিজুর রহমান রনি ও জাহিদ হোসেন। মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন রফিক পারভেজ, শেখ সেলিম, অমর ইসলাম, মোশারফ হোসাইন দুলাল, আনিসুর রহমান, জাহিদুল ইসলাম, জাহিদ ইমন, দস্তগীর জাহাঙ্গীর, ইকবাল চৌধুরী, শামীম হায়দার, কামরুল ইসলাম কামাল, মজনু মিয়া, হারুনুর রশীদ বাবু, সিদ্দিকুর রহমান, জেবা রাসেল, আনোয়ার হোসাইন, মিশা বিনতে ইসলাম, মোস্তাফিজুর রহমান কাজল, ওসমান খান মুন্সীসহ আরো অনেকে।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই জি আই রাসেল তাঁর শুভেচ্ছা বক্তব্যে বলেন, আমেরিকান বাংলাদেশি ফ্রেন্ডশিপ সোসাইটি ২০১৪ সাল থেকে বৃহত্তর ওয়াশিংটন এলাকায় নিবন্ধন এবং তালিকাভুক্ত হয়ে বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ড করে আসছে। বন্যার্তদের জন্য সাহায্য, রোহিঙ্গাদের জন্য সাহায্য ও অনুদান প্রদানসহ বিভিন্ন চ্যারিটেবল ফান্ডে সাহায্য-সহযোগিতা করে আসছে। তিনি বলেন, ‘আপনারা সবাই জানেন ২০০৯ ও ২০১১ সালে ওয়াশিংটনের মাটিতে আমরা দুটি সফল ফোবানা সম্মেলন উপহার দিয়েছি।’ তিনি আরো বলেন, উত্তর আমেরিকায় ফেডারেশন অব বাংলাদেশি অ্যাসোসিয়েশন ইন নর্থ আমেরিকা, যা ফোবানা নামে সর্বাধিক পরিচিত। ফোবানা দুটি ভাগে বিভক্ত হয়ে দীর্ঘদিন ধরেই উত্তর আমেরিকায় কাজ করে আসছে। দীর্ঘদিন ধরেই এ বিভক্ত ফোবানাকে ঐক্যবদ্ধ করার প্রক্রিয়া অব্যাহত আছে।
জি আই রাসেল বলেন, ২০১৪ সালে আটলান্টায় অনুষ্ঠিত ফোবানা সম্মেলনে ওয়াশিংটনের দুটি সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব গ্রেটার ওয়াশিংটন ডিসি এবং বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব আমেরিকা ইনক ২০১৬ সালে ওয়াশিংটনে ফোবানা সম্মেলন আয়োজনের গৌরব অর্জন করার পরপরই ফোবানাকে আবারও ঐক্যবদ্ধ করার প্রক্রিয়া শুরু হয়। সেই প্রক্রিয়ার মধ্যে দুটি প্রক্রিয়া ছিল বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। দুটি বিভক্ত ফোবানাকে ঐক্যবদ্ধ করে একটি ছাতার তলে নিয়ে আসা এবং যদি তা সম্ভব না হয়, তাহলে অন্ততপক্ষে ওয়াশিংটনবাসীকে ঐক্যবদ্ধ করে একই পতাকাতলে সবাইকে নিয়ে আসতে হবে।
মতবিনিময় সভায় জি আই রাসেল আরো বলেন, ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত আটলান্টা ফোবানা সম্মেলন এবং ২০১৫ সালে নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিত ফোবানা সম্মেলনের পর কর্মকর্তাদের মধ্যে বৈঠকে কোনো প্রকার সমঝোতা হয় না। এর ফলে ওয়াশিংটনবাসীকে ঐক্যবদ্ধ করে সাদেক খান, জি আই রাসেল ও মনির পাটোয়ারীর নেতৃত্বে ২০১৫ সালে নিউইয়র্ক ফোবানা সম্মেলনে আমেরিকান বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ সোসাইটি অংশগ্রহণ করে এবং ২০১৬ সালে ওয়াশিংটনবাসীর সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত ৩০তম ফোবানা সম্মেলনে কাজ করে। তিনি বলেন, এ বছর কলম্বাস ডে উইক এন্ডে ফ্লোরিডার মায়ামিতে অনুষ্ঠিত ফোবানা সম্মেলনেও আমেরিকান বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ সোসাইটি অংশগ্রহণ করে এবং ভোটাভুটির মাধ্যমে সদস্য সংগঠন হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়। ২০১৫ সাল থেকেই আমেরিকান বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ সোসাইটি ফোবানার সদস্য সংগঠন।
তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের সংগঠনের একটি শক্তিশালী কমিটি গঠন করে আগামী ২০১৮ সালে আটলান্টায় অনুষ্ঠিত ফোবানা সম্মেলনে অংশগ্রহণ করব এবং ওয়াশিংটনে ২০২০ সালে ফোবানা সম্মেলন করার জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করব। আমি অন্য একটি ফোবানা কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান ছিলাম। সেখান থেকে সাতজন সদস্য নিয়ে ২০১৫ সালে নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিত ফোবানা সম্মেলনে যোগ দিয়েছি। ২০১৬ সালে ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত ফোবানা সম্মেলনে স্বাগতিক সংগঠনের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ওয়াশিংটনবাসীকে একটি ঐক্যবদ্ধ ফোবানা উপহার দিয়েছি। এখন ২০২০ সালে আমরা ফোবানা সম্মেলন আয়োজনের প্রকৃত দাবিদার এবং আমাদের দাবি যৌক্তিক। আমাদের এই যৌক্তিক দাবি আমরা ২০১৮ সালের আটলান্টা ফোবানা সম্মেলনে তুলে ধরব এবং সম্মেলনের জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানাব।’
মতবিনিময় সভায় মনির পাটোয়ারী বলেন, ‘চার বছর ধরে বৃহত্তর ওয়াশিংটনে আমেরিকান বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ সোসাইটি (এবিএসএফ) নীরবে কাজ করে আসছে। চার বছর ধরে আমরা নীরবে কাজ করে এলেও এই প্রথমবারের মতো একটি পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করার পরপরই আপনাদের ডেকেছি কমিটি গঠন নিয়ে আলোচনা আর মতামতের জন্য। আপনাদের মূল্যবান মতামত আমাদের সংগঠনের পূর্ণাঙ্গ একটি কমিটি গঠনে কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে আমরা আশা করছি।’
মতবিনিময় সভায় বক্তারা বৃহত্তর ওয়াশিংটনে সব ধর্মের মানুষের জন্য কবরস্থান, অসহায় মানুষের কর্মসংস্থান, বাসস্থান ও কমিটি গঠন প্রক্রিয়া নিয়ে নানা মত প্রকাশ করেন এবং উদ্যোক্তাদের প্রতি সংগঠনের আদর্শ উদ্দেশ্য নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন রাখেন। সভায় বক্তাদের প্রশ্নগুলোর উত্তর দেন মনির পাটোয়ারী, মোস্তাফিজুর রহমান রনি ও মনির হোসেন। মতবিনিময় সভা শেষে আমেরিকান বাংলাদেশি ফ্রেন্ডশিপ সোসাইটির কর্মকর্তারা বলেন, এ মাসের মধ্যেই সোসাইটির একটি পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হবে এবং আগামী নভেম্বরের কোনো একটি দিবসে কমিটির শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে।