রোবট সোফিয়াকে নিয়ে যা করল ঢাকাবাসী!
কয়েকদিন ধরেই বাংলাদেশের বিভিন্ন আড্ডা-আলোচনার কেন্দ্রে ছিল একটি নাম। সোফিয়া। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার এক নারী রোবট। যাকে সম্প্রতি নাগরিকত্ব দিয়েছে সৌদি আরব। বাংলাদেশ বিমান সোফিয়াকে দিয়েছে ‘গোল্ড মেম্বারশিপ’। অনেকটাই মানুষের মতো করে অঙ্গভঙ্গি ও কথা বলার চেষ্টা করতে থাকা এই রোবটটিকে ঘিরে মানুষের যে আগ্রহ ছিল, সেটা টের পাওয়া যাচ্ছিল আগে থেকেই। তবে সেই কৌতূহল-আগ্রহ যে এতটা হুড়োহুড়ি বাধিয়ে দিতে পারে, তা কল্পনা করা যায়নি।
বাক্সবন্দি হয়ে গতকাল মঙ্গলবার ঢাকায় পৌঁছেছে সোফিয়া। হ্যানসন রোবোটিকস নির্মিত এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার রোবটটিকে আজ উপস্থাপন করা হয়েছিল বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে। সোফিয়ার সঙ্গে কথোপকথন শেষ করে আনুষ্ঠানিকভাবে ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডের উদ্বোধন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রযুক্তিবিষয়ক মেলা ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড ২০১৭-এর প্রথম দিনেই ‘টেক টক উইথ সোফিয়া’ শিরোনামে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। সেটি শুরু হওয়ার কথা ছিল দুপুর আড়াইটায়। রোবট সোফিয়াকে দেখতে সকাল থেকেই বিপুল পরিমাণ মানুষ জড়ো হতে শুরু করেছিলেন বঙ্গবন্ধু সম্মেলন কেন্দ্রে। বেলা ১টার দিকে দেখা যায় সম্মেলনকেন্দ্রে ঢোকার গেটের সামনে বিশাল আঁকাবাঁকা লাইন। সোফিয়া দর্শনের জন্য অনেক ধৈর্য নিয়ে সারি বেঁধে ঢুকছিলেন সবাই।
সেই ধৈর্যের বাঁধ অবশ্য ভেঙে গেছে দ্রুতই। বঙ্গবন্ধু সম্মেলন কেন্দ্রের যে কক্ষে সোফিয়ার হাজির হওয়ার কথা, তার বাইরের গেটের সামনে আর কোনো লাইনের তোয়াক্কা করেননি তরুণ-তরুণীরা। যে যেভাবে পারে, ঢুকতে চেয়েছে সম্মেলন কেন্দ্রের হল অব ফেম কক্ষে। কয়েকটি কাচের দরজার বাঁধ দিয়ে আটকে রাখা যায়নি উৎসুক জনতাকে।
কাচের দরজার বাধা পেরিয়ে বড় জায়গায় গিয়ে আবার সেই জনতা দৌড়ে গেছে নির্ধারিত কয়েকটি দরজার দিকে। অনেকেই নিচের তলার দরজার দিকে না তাকিয়ে দৌড় দিয়েছে দোতলার দরজাগুলোর দিকে। নিচের দুটি দরজা দিয়ে মুহূর্তেই এত মানুষ ঢুকে পড়েছে যে, কিছুক্ষণ পরেই বাধ্য হয়ে দরজাগুলো আটকে দিয়েছেন আয়োজকরা। সাংবাদিকসহ আয়োজকদের অনেকেই সে সময় ঢুকতে পারেননি হল অব ফেম কক্ষে।
খুব গুরুতর না হলেও প্রায় ঘণ্টাখানেকের এই হুড়োহুড়িতে বেশ কয়েকজন কম-বেশি আঘাত পেয়েছেন। কয়েকজনের জামা-কাপড়ও ছিঁড়েছে। পকেটমারের মাধ্যমে কারো মানিব্যাগ বা মোবাইল ফোন খোয়া গিয়ে থাকলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।
বলা হচ্ছে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার রোবট একসময় মানুষের মতোই চিন্তাভাবনা করার সক্ষমতা অর্জন করবে। যান্ত্রিক চিন্তাশক্তির ক্ষেত্রে কখনো কখনো হয়তো ছাড়িয়েও যাবে মানুষকে। কিন্তু রোবট সোফিয়া কি এই উন্মাদনাটা অনুভব করতে পারবে? বুঝতে পারবে কেন তাকে দেখার জন্য ঢাকাবাসীর এই আকুলতা-হুড়োহুড়ি-কষ্ট শিকার? ঢাকাবাসী নিজেও সেটা জানে কি?