আঁকাবাঁকা শিরায় করণীয়
আঁকাবাঁকা শিরা একটি প্রচলিত সমস্যা। গবেষণায় দেখা যায়, প্রতি চারজন মানুষের মধ্যে একজনের ক্ষেত্রে আঁকাবাঁকা শিরার সমস্যা রয়েছে। আজ রোববার (১ ফেব্রুয়ারি) এনটিভির স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের এক হাজার ৯৩৩ পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন ইবনে সিনা হাসপাতালের ভাসকুলার কেয়ার সেন্টারের প্রধান ভাসকুলার সার্জন জি এম মকবুল হোসেন।
প্রশ্ন : ভেরুকস ভেইন বা আঁকাবাঁকা শিরা কী? কাদের বেলায় এটি হয় এবং কেন হয়?
উত্তর : আমাদের শরীরে দুই ধরনের শিরা রয়েছে। একটি চামড়ার নিচের অংশে থাকে, যাকে সারফেস ভেইন বলা হয়। আরেক ধরনের শিরা থাকে মাংসের ভেতরে, এদের দেখা যায় না। চামড়ার নিচে যে শিরা রয়েছে, বিশেষত পায়ে যে শিরা রয়েছে, সেটি যদি ফুলে মোটা হয়, দীর্ঘায়িত হয় এবং দেখতে আঁকাবাঁকা হয়, তখন তাকে আঁকাবাঁকা শিরা বা ভেরুকস ভেইন বলি।
প্রশ্ন : এটি কেন হয়?
উত্তর : জন্মগতভাবে শিরা বা রক্তনালির মধ্যে যদি কোনো দুর্বলতা থাকে, তাহলে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই রোগের প্রকাশ হয়। বিশেষত যাঁরা দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থেকে কাজ করেন, তাঁদের মধ্যে এ সমস্যা বেশি দেখা যায়।
প্রশ্ন : এর লক্ষণ কী?
উত্তর : প্রাথমিক অবস্থায় শিরা শুধু ফুলে ওঠে। এ ছাড়া শরীরে তেমন কোনো সমস্যা থাকে না। তবে বছরের পর বছর এভাবে চলতে থাকলে একপর্যায়ে পায়ে অস্বস্তি হয়। এর পর একসময় পা ফুলে যেতে থাকে। জুতা খুলতে অসুবিধা হতে পারে। চামড়া শক্ত এবং কালো হয়ে একধরনের আলসার তৈরি হয়।
প্রশ্ন : চিকিৎসা না করলে এই রোগ কতখানি গুরুতর হতে পারে? আঘাতপ্রাপ্ত হলে কি কোনো সমস্যা হয়?
উত্তর : চিকিৎসা না করালে এই রোগ আরো খারাপ আকার ধারণ করে। অনেক সময় আক্রান্ত স্থানে আঘাত পেলে ফিনকি দিয়ে রক্ত ঝরতে পারে, যেটি বন্ধ করা কষ্টকর হয়ে পড়ে।
চামড়া কালো হয়ে গেলে এতটাই জটিল আকার ধারণ করে যে আক্রান্ত ব্যক্তির কাজ বা চাকরি করা কঠিন হয়ে যায়। যাঁরা সেনাবাহিনীতে চাকরি করতে চান বা বিদেশে যেতে চান, তাঁদের এ রোগ ধরা পড়লে চাকরি হয় না।
প্রশ্ন : এই রোগ কীভাবে নির্ণয় করা হয়?
উত্তর : এই রোগ প্রাথমিকভাবে দেখেই বোঝা যায়। রোগের সাপেক্ষে ডায়াগনসিস করা হয়। এ ছাড়া ডপলার পরীক্ষা করানো হয়। এর মাধ্যমে কোথা থেকে সমস্যার উৎপত্তি এবং কোথায় শেষ, এগুলো দেখা হয়। ভেনোগ্রাম পরীক্ষা করা হয়, এর মাধ্যমেও রোগের বিস্তার দেখা হয়।
প্রশ্ন : এ রোগে কী চিকিৎসা দেওয়া হয়?
উত্তর : চিকিৎসার ক্ষেত্রে একটি হচ্ছে অপারেশন করা। আরেকটি হচ্ছে জীবনযাপনের পরিবর্তন করা। যাঁদের চাকরিতে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে হয়, তাঁদের জন্য চাকরি পরিবর্তন করতে বলা হয়। আর চাকরি পরিবর্তন করা সম্ভব না হলে কিছু বিষয় করতে বলা হয়। এ ক্ষেত্রে পা বালিশের ওপরে দিয়ে শোয়া। ইলাস্টিক স্টকিং মোজা পরে হাঁটা ইত্যাদি। তবে সমস্যাটি যদি একেবারে রোধ করতে চান, তবে অপারেশনের মাধ্যমে রোধ করা হয়।
অপারেশনের সময় রোগীকে অজ্ঞান করা হয় না। শুধু কোমরে একটি ইনজেকশনের মাধ্যমে শরীরের নিচের অংশ অবশ করা হয়। এর পর শিরাগুলো কেটে বের করে দেওয়া হয়। তবে কাটাছেঁড়া না করেও লেজারের মাধ্যমে চিকিৎসা করা যায়।
প্রশ্ন : শিরা কাটার পর পায়ে কি কোনো সমস্যা হয়?
উত্তর : চামড়ার নিচের শিরা ২০ শতাংশ রক্ত বহন করে, আর মাংসের ভেতরের শিরা ৮০ শতাংশ রক্ত বহন করে। চামড়ার নিচের শিরা সংরক্ষিত হিসেবে শরীরে থাকে। তাই এসব শিরা ফেলে দিলে শরীরে তেমন কোনো সমস্যা হয় না।