বিশ্বকাপে বাংলাদেশের যত সেরা
মোহাম্মদ আশরাফুলকে ছাড়া বাংলাদেশের ক্রিকেট-ইতিহাস লেখা সম্ভব নয়। ২০০১ সালে অভিষেক টেস্টে সবচেয়ে কম বয়সে সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়ে হৈচৈ ফেলে দিয়েছিলেন বিশ্ব ক্রিকেটে। কিন্তু ‘আশার ফুল’ হয়ে আবির্ভূত আশরাফুল আজ এক অনন্ত আক্ষেপের নাম। বিপিএলে ম্যাচ গড়াপেটায় জড়িয়ে ক্রিকেট থেকে নিষিদ্ধ এই প্রতিভাবান ব্যাটসম্যানের অধিকারে আছে বিশ্বকাপসংশ্লিষ্ট দারুণ এক কীর্তি।
বিশ্বকাপে বাংলাদেশের পক্ষে সেরা ইনিংসের মালিক আশরাফুল। ২০০৭ বিশ্বকাপের প্রসঙ্গ উঠলে বাংলাদেশের মানুষের দুটি ম্যাচের কথা মনে পড়বেই। প্রথমটি ভারত ও পরেরটি দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে। ওই দুই ম্যাচে ক্রিকেট-দুনিয়ার দুই পরাশক্তিকে হারিয়ে দিয়েছিল হাবিবুল বাশারের দল।
৭ এপ্রিল ২০০৭, বাংলাদেশের ক্রিকেটের এক উজ্জ্বল দিন। গায়ানার প্রভিডেন্স স্টেডিয়ামে সেদিন আশরাফুলের ব্যাট থেকে এসেছিল ৮৭ রানের এক ঝকঝকে ইনিংস। মাত্র ৮৩ বলে খেলা ১২টি বাউন্ডারি সমৃদ্ধ ওই ইনিংসের ওপরে ভর করে বাংলাদেশ ৬৭ রানে হারিয়ে দিয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকাকে। আজও বিশ্বকাপে আশরাফুলের সেই ৮৭ রান বাংলাদেশের ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ইনিংস।
বিশ্বকাপে বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের তালিকায় আশরাফুল অবশ্য তৃতীয় স্থানে। ২০০৩ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত তিনটি বিশ্বকাপে ১৬টি ম্যাচ খেলে ২৪.৯১ গড়ে ২৯৯ রান করেছেন তিনি। এ তালিকায় প্রথম ও দ্বিতীয় স্থানে আছেন তামিম ইকবাল ও সাকিব আল হাসান।
দুজনই অংশ নিয়েছেন দুটি বিশ্বকাপে, ২০০৭ ও ২০১১ সালে। ওয়ানডের সেরা টুর্নামেন্টে দুজনে খেলেছেনও ১৫টি করে ম্যাচ। ২৬.৪৬ গড়ে তামিম করেছেন ৩৪৪ রান। ২১.৯৩ গড়ে সাকিবের রান ৩২৯। এবারের আসরে তাই শীর্ষস্থান দখল নিয়ে দুজনের মধ্যে একটা ‘অদৃশ্য’ লড়াই চলবেই!
বিশ্বকাপে বাংলাদেশের পক্ষে চতুর্থ সর্বোচ্চ রান মুশফিকুর রহিমের। ১৫ ম্যাচে ২১২ রান করে আশরাফুলের ঠিক পরেই বাংলাদেশের টেস্ট অধিনায়কের অবস্থান। ব্যাটিং গড়ে অবশ্য সবাইকে পেছনে ফেলে দিয়েছেন মিনহাজুল আবেদীন নান্নু। ১৯৯৯ বিশ্বকাপে চারটি ম্যাচ খেলে ৭০ গড়ে ১৪০ রান করেছিলেন বাংলাদেশের সর্বকালের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান। এর মধ্যে স্কটল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ছিল অপরাজিত ৬৮ ও অপরাজিত ৫৩ রানের দুটি দুর্দান্ত ইনিংস।
আজও বাংলাদেশের কোনো ব্যাটসম্যান বিশ্বকাপে শতকের দেখা পাননি। সবচেয়ে বেশি তিনটি অর্ধশতক করেছেন সাকিব। দুটি করে অর্ধশতক আছে তামিম, নান্নু, ইমরুল কায়েস ও আশরাফুলের। মুশফিক ও মেহরাব হোসেন অপি একটি করে অর্ধশতক করেছেন।
এবারের দলে না থাকলেও আবদুর রাজ্জাকই বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সবচেয়ে সফল বোলার। ২০০৭ ও ২০১১ বিশ্বকাপে অংশ নিয়ে ১৫ ম্যাচে ২৮.২০ গড়ে ২০টি উইকেট নিয়েছেন এই বাঁহাতি স্পিনার। বাংলাদেশের পক্ষে সবচেয়ে বেশি ১২১.৪ ওভার বল করার কৃতিত্বও রাজ্জাকের।
দ্বিতীয় স্থানে থাকা সাকিবের শিকার ১৫টি উইকেট। তবে এবারই রাজ্জাককে পেছনে ফেলে সর্বোচ্চ উইকেটের মালিক হয়ে যেতে পারেন বিশ্বের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার।
১২টি করে উইকেট নিয়ে এ তালিকায় যৌথভাবে তৃতীয় স্থানে আছেন খালেদ মাহমুদ সুজন ও মোহাম্মদ রফিক। দুটি বিশ্বকাপে অংশ নিয়ে সুজন খেলেছেন ৯টি ম্যাচ। অন্যদিকে, তিনটি বিশ্বকাপে অংশ নেওয়া রফিকের ম্যাচ ১৭টি। এবারের বিশ্বকাপে বাংলাদেশের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা ১১ ম্যাচ খেলে ১১টি উইকেট নিয়ে তৃতীয় স্থানে আছেন।
বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত এক ম্যাচে বাংলাদেশের কোনো বোলার ৫ উইকেট নিতে পারেননি। এক ম্যাচে ৪ উইকেট নেওয়ার কৃতিত্ব মাত্র দুজনের। ২০০৭ সালে ৩৮ রানে ৪ উইকেট নিয়ে ভারতের বিপক্ষে অসাধারণ এক জয়ের রূপকার ছিলেন মাশরাফি। আর গতবার আয়ারল্যান্ডকে হারানোর পথে ২১ রানে ৪ উইকেট নিয়েছিলেন শফিউল ইসলাম।
বিশ্বকাপে বাংলাদেশের মাত্র দুজন উইকেটরক্ষণের দায়িত্ব পালন করেছেন—মুশফিক রহিম ও খালেদ মাসুদ পাইলট। ১৫টি ম্যাচ উইকেটের পেছনে দাঁড়িয়ে ছয়টি ক্যাচ ও চারটি স্টাম্পিং করেছেন মুশফিক। তাঁর আগে ১৯৯৯ ও ২০০৩ সালে বাংলাদেশের প্রথম দুই বিশ্বকাপ-অভিযানে ১১টি ম্যাচে অংশ নেওয়া পাইলটের ডিসমিসাল-সংখ্যা ছয়টি—চারটি ক্যাচ ও দুটি স্টাম্পিং।
ফিল্ডারদের মধ্যে সবচেয়ে সফল তামিম। আটটি ক্যাচ নিয়েছেন তিনি। ছয়টি ক্যাচ নিয়ে এ তালিকায় আফতাব আহমেদের অবস্থান দ্বিতীয়।